Advertisement
E-Paper

শাসকের জয়-রথে পিষ্ট বিরোধী, দেখাচ্ছে বুথ

দু’অঙ্কের নীচে আটকে থাকা এবং শূন্যও প্রাপ্তির এই তালিকায় রয়েছে বিজেপি, বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ-সহ সব বিরোধী দলই!

— প্রতীকী চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:০৫
Share
Save

০৫, ০৪, ০৬, ০২, ০০, ০৬, ০৪, ০১, ০১, ০০, ০৪, ১১, ০৯, ০৮, ০৪, ০৯, ০২, ০২....।

পরপর সাজিয়ে দিলে ছবিটা দাঁড়াবে এই রকম। মোবাইল নম্বর বা পিন কোড নয়। সদ্য হয়ে যাওয়া বিধানসভা উপনির্বাচনে বেশ কিছু বুথে বিরোধীদের প্রাপ্ত ভোটের নমুনা! দু’অঙ্কের নীচে আটকে থাকা এবং শূন্যও প্রাপ্তির এই তালিকায় রয়েছে বিজেপি, বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ-সহ সব বিরোধী দলই!

বাংলায় নির্বাচনী ময়দানে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়-রথ এখন অপ্রতিরোধ্য। লোকসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যে দু’দফায় ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ১০টিই জিতেছে শাসক দল। আগের বারের মতো এ বারের উপনির্বাচনের বুথ-ভিথিক হিসেব হাতে নিলেও দেখা যাচ্ছে, শাসকের সেই রথের তলায় একেবারে পিষ্ট হয়েছে বিরোধীরা! এ বারের ৬টি কেন্দ্রের মধ্যে সিতাই ও হাড়োয়া কেন্দ্রেই বুথে বুথে শাসকের নিরঙ্কুশ দাপট বেশি। তার একটিতে এক লক্ষ ৩০ হাজার এবং অন্যটিতে এক লক্ষ ৩১ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন শাসক দলের প্রার্থী। বিরোধীদের সম্মিলিত বক্তব্য, বিভিন্ন বুথে ওই ছিটেফোঁটা ভোটও আসলে তারা পায়নি। তাদের ‘দিয়ে দেওয়া’ হয়েছে! আর শাসক দলের দাবি, সরকারি পরিষবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাছ-বিচার না-রেখে কাজ করার সুফল ভোটে পাওয়া যাচ্ছে। সংগঠন, লোকবল-হীন বিরোধীরা অর্থহীন অভিযোগ করছে।

বিভিন্ন প্রশ্নে রাজ্যে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে লোকজন হলেও বিরোধীরা ভোটের বাক্সে কোনও আঁচড় কাটতে পারছে না কেন, তা নিয়ে বিস্তর চর্চা জারি আছে। সংগঠনের দুর্বলতা, বুথ আগলানোর লোকাভাবের অভিযোগ অস্বীকার করছেন না বিরোধী নেতৃত্বও। তবে তাঁদের দাবি, বিরোধীদের সব দোষ মেনে নিলেও বহু ক্ষেত্রে ভোটের এমন ফল আছে, যা বাস্তবে মেনে নেওয়া শক্ত। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের কথা ধরা যাক। সেখানে উত্তর বহিরার একটি বুথে ভোট পড়েছে ১০৮১টি। তার মধ্যে ১০৬৫টিই তৃণমূলের বাক্সে। আর বাকি ভোটের মধ্যে বিজেপি ৫, কংগ্রেস ৪, বামফ্রন্ট সমর্থিত আইএসএফ ৬। খাঁটরার একটি বুথে মোট ভোট হয়েছে ১০৪৬। তার মধ্যে ১০১০টি তৃণমূলের। বিজেপি ১৩, কংগ্রেস ৩ এবং আইএসএফ ৬। ফলতি বাদলপুর, মাগরিয়া, কালিকাপুর, ধোকড়া, খাটরার একাধিক বুথেই বিরোধীদের ভোট দু’অঙ্কের নীচে।

একই ভাবে কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রে আদাবাড়ি, বিয়ারচাত্রা, সিতাই-১, চামটা, গোসানীমারি-১, পেটলা, বড় শৌলমারি, বড় আটিয়াবাড়ি অঞ্চলের নানা বুথে শাসক দল কোথাও ৯৫, কোথাও ৯০, কোথাও ৮০-৮৫% ভোট পেয়েছে। বাকি যৎসামান্য ভোট ভাগ হয়েছে বিরোধীদের মধ্যে। আদাবাড়ির ৬/৮ নম্বর বুথ যেমন। সেখানে যে ৫৫৪টি ভোট পড়েছে, তার ৫০৪টি তৃণমূলের। বুথ নম্বর ৬/১১-এ মোট ৪০৪টি প্রদত্ত ভোটের ৩৮০ তৃণমূলের। কংগ্রেস ২, ফরওয়ার্ড ব্লক ১। আর বিজেপি ২০। দিনহাটা-১, সিতাই ব্লকের বিভিন্ন বুথে ছবি একই রকম। মাদারিহাট, মেদিনীপুর ও নৈহাটির কিছু বুথেও আছে একপেশে ভোট-চিত্র। তবে সংখ্যায় কম।

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এর মধ্যে অন্য কোনও ‘রহস্য’ দেখছেন না। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মতে, ‘‘সারা বছর তৃণমূল কর্মীরাই এলাকায় থেকে কাজ করেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী বা যুবশ্রী-র মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা সব মানুষের কাছে যায়। পরিষেবা পেয়ে খুশি সেই সব পরিবারের লোকজন তৃণমূলের কাছেই আসেন। এটাই মূল কারণ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিরোধীদের সংগঠন নেই, লোক নেই। মানুষের পাশে থাকে না, ভোটের সময়ে অভিযোগ করে!’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘বিরোধীরা না হয় দুর্বল। কিন্তু দিনহাটা বা গোসাবার উপনির্বাচনে এই রকমই বিপুল ভোট পেয়েছিল শাসক দল। সেখানেও সরকারি পরিষেবা ও দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগে সাংসদ, বিধায়কদের সামনে মানুষের বিক্ষোভ হয়েছে। শাসক দল দাপট দেখাতে নিজেরাই কোথাও ৮৫, ৯০ বা ৯৫ ভাগ ভোট করে নিয়েছে। চক্ষুলজ্জার খাতিরে হয়তো ১০০ করেনি!’’ হাড়োয়ার ভোটকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে ৩৭টি বুথে পুনর্নির্বাচন চেয়েছিলেন আইএসএফ চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকী। কমিশন দাবি মানেনি। শাসক দলের নেতাদের মধ্যে ‘বেশি ভোটের জেতার প্রতিযোগিতা’ চলছে বলে দাবি করে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতারা ভোট এলে এত কথা বলেন। কিন্তু ভোটের দিন যে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষকদের খুঁজে পাওয়া যায় না, তার জন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’’

এমতাবস্থায় বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য সরাসরিই বলছেন, ‘‘ওই সামান্য ভোট দয়া করে বিরোধীদের নামে ফেলে দেওয়া হয়েছে! কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়িত্ব বুথের বাইরে কিন্তু এলাকায় মানুষের মধ্যে ভয় দূর করতে তাদের ভূমিকা চোখেই পড়ছে না। কয়েক বছরে বাংলায় সুষ্ঠু ভোট করাতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ! এই নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC BJP Congress CPIM ISF

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}