প্রতীকী চিত্র।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রশ্ন করা হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কয়লা পাচারের তদন্তে নেমে সিবিআইয়ের সেই জিজ্ঞাসাবাদের পরে সব যেন কেমন চুপচাপ! গত দু’মাসে তদন্তকারীদের উদ্যোগের অভাব নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনা চলছে। তাতে রাজনীতির ছায়াও দেখছেন অনেকে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, তা হলে কি কোনও রকম ‘সমঝোতা’-র বাতাবরণ তৈরি হয়েছে?
সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর কর্তাদের বক্তব্য, আইনি জটিলতায় কয়লা ও গরু পাচারের তদন্ত গতি হারিয়েছে। কেন তাঁদের দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে, তা নিয়ে দিল্লির আদালতে মামলা ঠুকেছেন অভিষেক এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা। তার পরবর্তী শুনানি ডিসেম্বরে। সিবিআই ও ইডি জানাচ্ছে, সেই মামলার নিষ্পত্তির আগে পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের। প্রশ্ন উঠছে, অভিষেক-রুজিরা ছাড়াও অভিযোগ তো রয়েছে আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন সে-ভাবে পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে?
তদন্তকারীদের দাবি, অগস্ট থেকে কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ডে পরপর অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের জেরার পরেই অক্টোবর থেকে রাজ্য পুলিশের বেশ কয়েক জন কর্তা এবং অভিষেক-রুজিরাকে দিল্লিতে ইডি-র সদরে তলব করা হয়। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এক বার গেলেও তার পরে একাধিক নোটিস জারির করা সত্ত্বেও অভিষেক-রুজিরা হাজির হননি। অভিষেকের সচিব সুমিত রায়কেও একাধিক বার দিল্লিতে তলব করা হয়েছিল। তিনিও সশরীরে দিল্লিতে হাজির হতে পারবেন না বলে জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। তাঁকে ছ’সপ্তাহ গ্রেফতার করা যাবে না বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্টের সিঙ্গল বা একক বেঞ্চ। ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আর্জি জানানোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে ইডি।
সিবিআই-কর্তাদের বক্তব্য, কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ডে অধিকাংশ মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গরু পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত ব্যবসায়ী এনামুল হক এখনও জেল হাজতে। এনামুল-ঘনিষ্ঠ বিএসএফের এক কমান্ডার-সহ আরও বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, "কয়লা পাচারে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালাকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। লালাকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আইনি রক্ষাকবচ রয়েছে। তবে লালা-ঘনিষ্ঠ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতেরা এখনও জেল হেফাজতে রয়েছে।’’
তদন্তকারীদের দাবি, কয়লা ও গরু পাচারের কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছেছে এবং সেই টাকা বিদেশে পাচার করার তথ্যপ্রমাণ তাঁদের হাতে রয়েছে। গরু ও কয়লা পাচারে অন্যতম অভিযুক্ত, রাজ্যের শাসক দলের নেতা বিনয় মিশ্র পলাতক। তিনি বিদেশে আছেন। তাঁর বিষয়ে ইন্টারপোলকে সতর্ক করা হয়েছে। বিনয়ের ভাই বিকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিকাশকে জেরা করে বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে বহু তথ্য হাতে এসেছে।
কয়লা ও গরু পাচার চক্রে রাজ্য পুলিশের একাধিক কর্তা জড়িত বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ। ইডি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পাচারের টাকা পুলিশের
শীর্ষ স্তরের কয়েক জন কর্তা
এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে পৌঁছেছিল। বাঁকুড়া সদর থানার আইসি অশোক মিশ্রকে গ্রেফতারও করা হয়। কী ভাবে পুলিশকর্তা ও প্রভাবশালীদের কাছে টাকা পৌঁছেছিল, তার সবিস্তার তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে।’’ ওই কর্তা জানান, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাচার চক্রে জড়িত বহু অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মূল পান্ডাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু অভিযুক্তেরা বার বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় তদন্ত গতি হারাচ্ছে।
এক শীর্ষ সিবিআই-কর্তা বলেন, "আইনি বেড়াজালে সাময়িক ভাবে তদন্ত ব্যাহত হতে পারে। তাতে সময় নষ্ট হয়। তদন্তের গতি ধীর হয়ে পড়ে। কিন্তু তদন্ত আটকে রাখা যায় না। মামলা চলছে। তদন্ত হবেই। যে যতই প্রভাবশালী হোক, আইনের ঊর্ধ্বে নয় কেউ। গ্রেফতার করা হবেই।"
বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদা ও রোজ়ভ্যালির ক্ষেত্রেও তদন্ত গতি হারিয়েছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তাদের দাবি, "ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির জাল অনেকটা ছড়িয়ে রয়েছে। এবং ওই ক্ষেত্রেও যোগ রয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের। বেআইনি লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করা হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy