মাস্কহীন জনতাকে সচেতন করতে প্রচারে পুলিশ। নিউ মার্কেট চত্বরে। ছবি: সুমন বল্লভ।
করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় নতুন করে যে বিধিনিযেধের ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার, তার প্রেক্ষিতে এক গুচ্ছ প্রশ্ন তুলে সরব বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য— প্রথমত, সংক্রমণের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও উৎসবে ছাড় দিয়ে এখন কড়াকড়ি করা ‘বিলম্বিত পদক্ষেপ’। দ্বিতীয়ত, যে সব বিধিনিষেধের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তার অনেক কিছুর পিছনেই যুক্তি পরিষ্কার নয়। সরকারের অবিমৃশ্যকারিতার ফলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠল এবং তার পরে বিধিনিষেধের জেরে শেষ পর্যন্ত ভুগতে হবে খেটে-খাওয়া, সাধারণ মানুষকে, এমনই মত বিরোধীদের। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বিরোধীদের সমালোচনা নস্যাৎ করে দিয়ে দাবি করেছে, জনজীবনের উপরে বড়সড় আঘাত এড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যতটা কড়াকড়ি দরকার ছিল, ততটাই করা হয়েছে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সকলেই রবিবার করোনার এই বাড়তি সংক্রমণকে ‘নবান্ন স্পনসর্ড কোভিডের তৃতীয় ঢেউ’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই বড়দিন এবং বর্ষশেষে উৎসব পালনে ভিড় হতে দেওয়া হয়েছে। বিপদের তোয়াক্কা করা হয়নি। শমীক বলেন, ‘‘শাসক দলের পরিচালিত মেলা, খেলা প্রমাণ করে দিল, রাজ্য সরকারের গুরুত্বের তালিকায় করোনা নেই। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাজ্য সরকার আন্তরিক নয়। যখন কোভিড আবার আছড়ে পড়ছে, তখন কড়াকড়ি ঘোষণায় তিন দিন দেরি করা হল কেন? করোনা মোকাবিলায় সরকার কতটা তৈরি, কত আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, কোভিড শয্যা, সেফ হোম এবং কোয়রান্টিন সেন্টার তৈরি আছে, এ সব কিছুই জানা যাচ্ছে না।’’
এই পরিস্থিতিতে পুর নির্বাচন এবং গঙ্গাসাগর মেলা কি তাঁরা চান? শমীকের জবাব, ‘‘আমাদের চাওয়া বা না চাওয়ায় কিছু যায় আসে না। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার অপেক্ষায় আমরা আছি। তারা কী ভাবে নির্বাচন করতে চায়, নাকি স্বত-স্ফূর্ত ভোটদান বাধাপ্রাপ্ত হলেই তাদের ভাল, জানি না!
আর গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজ্য সরকার তাদের অবস্থান জানাক।’’ রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওঁরা না জেনেই কথা বলছেন। সব দিক বিবেচনা করেই সার্বিক লকডাউন না করে কনটেনমেন্ট জ়োন তৈরি করে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে জীবন-জীবিকা, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি কম হয়। হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আর পুরভোটের ব্যাপারটা কমিশন দেখবে।’’
সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কিছু নিষেধাজ্ঞা যে প্রয়োজন, তা উল্লেখ করেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘কখন সরকার কী সতর্কতা নিচ্ছে, তার কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই! বিশেষজ্ঞ কমিটির কোনও মত নেওয়া হয়েছে? বড়দিনের উৎসব করতে দিলেন কেন? গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, সবাই আসবে, আপনাদের অসুবিধা কী? উৎসব হবে মেলা হবে, স্কুল-কলেজ, লোকাল ট্রেন বন্ধ হবে!’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘দুয়ারে সরকার বন্ধ হল কিন্তু দুয়ারে সর্বনাশের ব্যবস্থা হল! অল্প কিছু লোক নিয়ে জলসা হবে, এর কি প্রয়োজন আছে? কোথায় কত লোক, কে দেখবে? এ সব আতিশয্য কেন? সরকার যে ব্যর্থ হচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে। মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, নিজেরা সতর্ক থাকুন, নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করুন।’’
একই ভাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘উৎসব, মেলা তো জরুরি প্রয়োজন ছিল না। সেটা হতে দেওয়া হল। কিন্তু লোকাল ট্রেনে মানুষ আসেন প্রয়োজনে। তাঁরা আসবেন কিন্তু সন্ধ্যার পরে ফিরবেন কী ভাবে? ট্রেনে ৫০% যাত্রীই বা কে কী ভাবে গুনবে? রাতের দিকে কিছু জিনিস বন্ধ করে দিলে করোনা কমে যাবে, এটা আগেও বোধগম্য হয়নি। এখনও হল না!’’
এ সবের জবাবে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা সমালোচনা করেই খালাস! তাদের দায়িত্ব নিতে হয় না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। তারা সেই ভাবেই পদক্ষেপ করছে।’’ বর্ষীয়ান সাংসদের বক্তব্য, ‘‘বড়দিনের উৎসবে বেশি ভিড় হয়েছিল, এটা ঠিক। কিন্তু নববর্ষে তেমন ভিড় হয়নি। দু’বার প্রতিষেধক নেওয়া সত্ত্বেও এত করোনা কেন হচ্ছে, সেটা আমাদের সকলেরই উদ্বেগের কারণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy