ফাইল ছবি।
রাজ্যে একশোর বেশি পুরসভায় ভোট আসন্ন। তার আগে পুর-চেয়ারম্যান পদ ঘিরে সম্প্রতি যে আইন সংশোধন করেছে রাজ্য সরকার, তা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শাসক দল তৃণমূলের অন্দরে। প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরাও।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী, পুর-চেয়ারম্যানকে সর্বক্ষণের জন্য পুরসভার কাজই করতে হবে। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন অন্য কোনও লাভজনক পদে থাকবেন না। থাকলে কর্মস্থল থেকে ছুটি নিতে হবে। এমনকি যদি তাঁর নিজস্ব ব্যবসা বা ভিন্ন পেশা থাকে বা তিনি অন্য এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন যা চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর কাজকে প্রভাবিত করবে, তা হলে তা ছেড়ে দিতে হবে। এই মর্মে হলফনামা দিলে তবেই তিনি পুর-চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে পারবেন।
পঞ্চায়েতেও একই ব্যবস্থা কার্যকর করেছে রাজ্য। গ্রাম প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদের সভাধিপতিও এখন সর্বক্ষণের জন্য কাজ করেন। মনোনয়ন দাখিল বা চেয়ারম্যান নির্বাচনের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে হলফনামা নেওয়া হয়। তাতে তাঁরা ব্যবসা বা অন্য কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত না-থাকার কথা জানালে তবেই ওই সব পদের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। যদিও পঞ্চায়েত দফতরের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যের ৩৩৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেক প্রধানই ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। তবে নির্দিষ্ট অভিযোগ আসে না বলে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
যা বলা হয়েছে পুর-আইনের সংশোধিত ১৭ নম্বর ধারায়
পঞ্চায়েত মডেলেই এ বার পুর-চেয়ারম্যান নির্বাচন হবে বলে পুর-কর্তারা জানাচ্ছেন। যদিও পুর-চেয়ারম্যানদের অনেকেই সংশোধিত আইন নিয়ে ‘রুষ্ট’। পুর দফতরের খবর, চেয়ারম্যানরা এখন মাসিক সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পান। প্রশ্ন উঠেছে, এই টাকায় সংসার চালানো কি সম্ভব? পু- চেয়ারম্যানদের অনেকেই ব্যবসা করেন। কেউ বা আইনজীবী, ডাক্তার বা শিক্ষক। তাঁদেরও পেশা ছেড়ে পুর-চেয়ারম্যান হতে হবে। তা হলে কি ধরেই নেওয়া হচ্ছে, পুর-চেয়ারম্যান হলে অন্য পথে রোজগার আরও বেশি— প্রশ্ন অনেক চেয়ারম্যানের।
প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরাও। সিপিএম নেতা তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুর-চেয়ারম্যান পদ সর্বক্ষণের হলে পর্যাপ্ত ভাতা দিতে হবে। তা না-হলে চুরি-দুর্নীতি বাড়বে।’’ একই সুরে বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘পুর-আইনে এই বদল আনার মধ্যে দিয়ে মেয়র এবং পুর-চেয়ারম্যানদের কাটমানি ও ঘুষ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও দুর্নীতি বাড়ার আশঙ্কা জানিয়ে এই আইন বদলকে ‘অবাস্তব’ আখ্যা দিয়েছেন।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘স্বার্থের সংঘাত রুখতেই এই ব্যবস্থা। পুর-চেয়ারম্যানরা এমন কোনও ব্যবসা বা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না, যা পুর পরিষেবা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণ ও কর্তব্যপালনে প্রভাব ফেলতে পারে। এর বাইরে কিছু থাকলে অসুবিধা নেই।’’
১৯৯৩ সালের পুর-আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয় গত বছর জুলাইয়ে। তাতে মেয়াদ শেষ হওয়া চেয়ারম্যানের জায়গায় প্রশাসক বসানোর সময়সীমা বৃদ্ধি ও কাউন্সিলর না হয়েও মেয়র পদে বসার সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল। ওই সময়েই পুর-চেয়ারম্যান পদটি সর্বক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। পুর আইনের ১৭ নম্বর ধারায় যেখানে পুর-চেয়ারম্যানের ক্ষমতার বিবরণ রয়েছে, সেখানেই যুক্ত হয় নতুন এই ধারা।
এখন পুরভোট আসায় শাসক দলের অন্দরে এ নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকেই নিজের নামে থাকা ব্যবসা অন্যের নামে করে রাখছেন। বহু ব্যবসায়ী বা অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত কাউন্সিলর, যাঁরা চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁরা ভোট নিয়েই আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। যদিও প্রকাশ্যে কেউ টুঁ-শব্দটিও করছেন না। পেশায় চিকিৎসক হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এটা নিয়ে আর কী বলব! দল তো এমন কিছু করবে না যা আইনের পরিপন্থী।’’ সর্বক্ষণের রাজনীতিক মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান রথীন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আমলারা নিশ্চই পুর-পরিচালনার বিষয়টি ভাল বোঝেন। এতে আশা করি ভালই হবে!’’
লোকসভা ভোটে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের পরে কাটমানি-বিক্ষোভে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। তৃণমূলের দলীয় তদন্তে দেখা গিয়েছিল, মূলত পঞ্চায়েত, পুর-প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি। তা সামাল দিতেই এই পদক্ষেপ বলে শাসক দলের অনেকে মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy