E-Paper

ইদের মঞ্চে রাজনীতি কেন, পাল্টা প্রশ্ন বিরোধীদের

তৃণমূল কংগ্রেস পুরো বিষয়টিকেই বিজেপির ‘বিকৃত অপপ্রচার’ বলে দাবি করেছে। বিজেপি ও তৃণমূল আদতে এক সঙ্গে চলছে জানিয়ে মমতাকে নিশানা করেছে বাম-কংগ্রেস।

নদিয়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

নদিয়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সুদেব দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩২
Share
Save

ইদের মঞ্চ থেকে ভোটের প্রচার ঘিরে বিতর্ক বেধেছিল গত বার। এ বার সেই ইদের জমায়েতের মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের আক্রমণ করায় পাল্টা প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, প্রতি বার মুখ্যমন্ত্রী ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ‘ব্যবহার’ করছেন।

রেড রোডে ইদের অনুষ্ঠান-মঞ্চ থেকে সোমবার বিজেপির নাম না-করে তাদের আমদানি করা ধর্ম তিনি মানেন না বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সূত্রেই ‘নোংরা’ শব্দটি ব্যবহার করে মমতা আদতে হিন্দু ধর্মকে বুঝিয়েছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাল্টা সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেস পুরো বিষয়টিকেই বিজেপির ‘বিকৃত অপপ্রচার’ বলে দাবি করেছে। বিজেপি ও তৃণমূল আদতে এক সঙ্গে চলছে জানিয়ে মমতাকে নিশানা করেছে বাম-কংগ্রেস।

মমতার বক্তৃতার সংশ্লিষ্ট অংশটি সমাজমাধ্যমে ‘পোস্ট’ করে বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, “কোন ধর্ম নোংরা? নির্দিষ্ট করে কোন ধর্মের কথা বলছেন? সনাতন হিন্দু ধর্ম? ইদের দিনে এটা কী ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য। কেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা তৈরির লক্ষ্যে এমন ঘৃণা ছড়াচ্ছেন?” মমতার বিরুদ্ধে ধর্মকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে তা ‘বুমেরাং’ হবে বলেও দাবি করেছেন শুভেন্দু। এই সূত্রেই বিরোধী দলনেতার আরও বক্তব্য, “এই মন্তব্যে একটি সম্প্রদায়কে তুষ্ট করারই চেষ্টা হয়েছে।”

হিন্দু ধর্মকে ‘আক্রমণ করে মমতা আনন্দ পান’ বলে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তাঁরও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সনাতন ধর্মই কি ‘নোংরা ধর্ম’? তিনি হিন্দুদের বিদ্রুপ ও তাঁদের ধর্মকে অপমান করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। হিন্দুদের ‘টার্গেট’ করতে তিনি আবার খোলা ছাড় দিচ্ছেন।” পাশাপাশি, রেড রোডে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা প্রসঙ্গে সুকান্তের বক্তব্য, “তৃণমূলের কাজ, হিন্দুদের বিরোধিতা করা। ওঁরা বাংলায় ‘মুসলিম খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন!” একই সঙ্গে, মালদহের মোথাবাড়িতে অশান্তির জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে ফের ‘উস্কানি’র অভিযোগ তুলেছেন সুকান্ত। সেই সঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে গেরুয়া ফেট্টি পরে রামনবমীর মিছিলে হাঁটার আহ্বানও জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি!

বিজেপির যাবতীয় বক্তব্যকে ‘বিকৃত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, “সম্পূর্ণ বিকৃত প্রচার। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণের সনাতন হিন্দুত্বকে মানেন। বিজেপির বিকৃত ধারণাকে হিন্দুত্ব বলে মনে করেন না। ওটা ভোট-বাজারের হিন্দুত্ব। শুভেন্দু বিকৃত ভাবে নোংরা শব্দ ব্যবহার করছেন। রেড রোডে ইদের শুভেচ্ছার সঙ্গে দুর্গাপুজোর কার্নিভালও করেন মমতা।”

পক্ষান্তরে, তৃণমূল ও বিজেপিকে একই বন্ধনীতে রাখার পাশাপাশি ইদের অনুষ্ঠান-মঞ্চ ব্যবহার করে মমতার বিরুদ্ধে ‘সঙ্কীর্ণ রাজনীতি’ করার অভিযোগ তুলেছে বাম-কংগ্রেস। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, “রামনবমী এলে আরএসএসের পতাকা তলে এককাট্টা হয়ে যায় বিজেপি-তৃণমূল। মানুষের ধর্ম-বিশ্বাস, ধর্মীয় উৎসবকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে পুর-প্রতিনিধি, বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী— কারও কোনও ফারাক থাকে না। তৃণমূল ও বিজেপি পরস্পরের পরিপূরক।” পাশাপাশি, অশান্তি আটকাতে পুলিশের দেখা না মিললেও সম্প্রতি উত্তরকন্যা-অভিযানে বাম-যুবদের উপরে পুলিশি ‘হামলা’র অভিযোগ তুলেছেন সেলিম। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীও বলেছেন, “দিদি (মমতা) আচমকা কেন ইদের দিনে নমাজ পড়েন? এটা রাজনৈতিক চালাকি। পবিত্র ইদের দিনে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি দূরে রাখতে পারতেন। আপনি বাংলায় বিজেপিকে হাতে ধরে নিয়ে এসেছিলেন। বাংলায় তৃণমূলের ভোট-কৌশলী সংস্থা এবং বিজেপির আরএসএস সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি করছে।” বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর দল আইএসএফ-এর তরফেও বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয় উৎসবের রাজনীতিকরণের জন্য অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপি। ইদের মঞ্চেরও রাজনীতিকরণ করছেন মমতা। এর ফলে মুসলিমদের সঙ্গে অন্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সামাজিক দূরত্ব আরও বাড়ছে। এ দিকে, প্রতিনিয়ত শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারেরা ঘৃণা ভাষণ দিলেও প্রশাসনের কোনও কড়া পদক্ষেপ নেই।’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee TMC BJP CPIM Congress Suvendu Adhikari

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।