Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
TMC

Protest: অধীরের তোপ, পথে বাম, ‘নবান্ন চলো’র ডাক বিজেপির

দুর্নীতির তদন্তের জাল শাসক দলের একেবারে শীর্ষ স্তর পর্যন্ত যাতে পৌঁছয়, সেই দাবি সামনে রেখে পথে নামা অব্যাহত রেখেছে বামেরাও।

দুর্নীতি-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে কংগ্রেসের মিছিল।

দুর্নীতি-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে কংগ্রেসের মিছিল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২২ ০৭:১৮
Share: Save:

সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারের ঘটনার জেরে শাসক দলের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে বিরোধীরা। রাজ্যে সার্বিক দুর্নীতির দায়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বিজেপি। শাসক দলের মধ্যেই বিভাজন উস্কে দেওয়ার কৌশলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘দিদির লোকেদের’ই ধরছে, ‘ভাইপোর টিম’কে নয়। যে বক্তব্যকে ‘প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা প্রশ্ন, ইডি কেন সনিয়া গান্ধীকে ৯ ঘণ্টা আর রাহুল গান্ধীকে চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তার জবাব কি কংগ্রেস দেবে! দুর্নীতির তদন্তের জাল শাসক দলের একেবারে শীর্ষ স্তর পর্যন্ত যাতে পৌঁছয়, সেই দাবি সামনে রেখে পথে নামা অব্যাহত রেখেছে বামেরাও।

দুর্নীতির প্রতিবাদে ধর্মতলা এলাকায় ধর্না কর্মসূচি চালাচ্ছে বিজেপি। সেই অবস্থানে গিয়েই শুক্রবার দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ঘোষণা করেছেন, ‘‘আমরা ৭ সেপ্টেম্বর নবান্ন যাব। জেলা থেকে, গ্রাম থেকে মানুষ হাজার হাজার মানুষ এসে নবান্ন অবরুদ্ধ করবেন। রাজ্য জুড়ে যে লুট চলেছে, তার প্রতিবাদ হবে।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, দুর্নীতির প্রতিবাদে ও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে নবান্ন অভিযানে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, দলের রাজ্য দফতর-সহ নানা জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে যাওয়া হবে নবান্নের দিকে। ধর্মতলার কর্মসূচিতে এ দিন গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও।

তৃণমূলের সাংসদ শান্তনু সেন যদিও পাল্টা বলেছেন, ‘‘বিজেপি তো নিজেরাই বিভক্ত। তারা আবার কী নবান্ন অভিযান করবে? শুভেন্দু অধিকারী এক দিকে, সুকান্ত মজুমদার এক দিকে, দিলীপ ঘোষ এক দিকে। কারও কর্মসূচিতে কেউ যায় না! এটা কার কর্মসূচি, আগে ওরা ঠিক করুক!’’

তৃণমূল নেতাদের ‘চির দিন কাহারও সমান নাহি যায়’ বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু এ দিনই বহরমপুরে মন্তব্য করেছেন, ‘‘বাধ্য হয়ে ইডি, সিবিআই এখন তদন্ত করছে। সেই তদন্তে ধরা পড়ছে দিদির টিমের লোকেরা। কিন্তু ভাইপোর টিমের লোকেরা এখনও দূরে দূরে আছে! এই ভাইপো প্রথমে দিল্লিতে গিয়ে ইডি-র মুখোমুখি হয়েছিল। ন’ঘন্টার জেরায় আমাদের ভাইপো, দিদির ভাইপো সব উগরে এসেছে। আমরা দিল্লির করিডরে থাকি, কিছু খবর আমরাও রাখি! তাই এই কথা দায়িত্ব নিয়ে বলছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তার পর থেকে দিদির চোখে কংগ্রেস খারাপ হয়ে গেল। বিজেপি ভাল হয়ে গেল।” অনুব্রতের বিরুদ্ধে তৃণমূল যে এখনও ব্যবস্থা নেয়নি, সেই প্রশ্নে অধীরবাবুর কটাক্ষ, ‘‘এমনিতেই অক্সিজেন কম যায়। ধরা পড়ার পরে এখন ভেঙে পড়েছেন, কান্নাকাটিও নাকি করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এখনই যদি বলা হয় পদও নেই, তা হলে অক্সিজেন যাওয়াই বন্ধ হয়ে যাবে!’’ তবে একা অনুব্রত নন, গরু পাচারের মতো চক্রে বিভিন্ন জেলার ওসি থেকে এসপি, এমনকি রাজ্য পুলিশের ডিজি পর্যন্ত অনেকে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন প্রদেশ সভাপতি। সব ঘটনার পিছনে তৃণমূল নেত্রী ও তাঁর পরিবারের লোকজন জড়িত বলেও ফের অভিযোগ করেছেন তিনি।

অধীরবাবুর মন্তব্যের জবাবে তৃণমূলের নেতা তাপস রায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘এ সব প্রলাপের কোনও অর্থ হয় না! ওঁর নেতৃত্বে লড়াই করে কংগ্রেস বিধানসভায় শূন্য হয়ে গিয়েছে। আগে নিজের দলের নেতা-নেত্রীকে ইডি-র হাত থেকে বাঁচান! এখন আমরা যদি বলি, ইডি কেন সনিয়া গান্ধীকে ৯ ঘণ্টা জেরা করল আর রাহুল গান্ধীকে চার ঘণ্টা জেরা করল, এর পিছনে কোনও উদ্দেশ্য আছে, তা হলে কেমন লাগবে?’’

টেট-উত্তীর্ণ যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের দাবিতে এবং নিয়োগ-দুর্নীতির প্রতিবাদে এ দিন রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ এবং এবিপিটিএ। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছলে পথ আটকায় পুলিশ। ব্যারিকেড ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সেখানে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শুধু গরু পাচার নয়, অন্যায় তো বহু। সোনা, বালি, কয়লা পাচার কত কিছু আছে, তার সঙ্গে চাকরির দুর্নীতি। আগেও বলেছি, আসানসোল থেকে কালো কাচের গাড়িতে পুলিশ পাহারায় গ্রিন করিডর করে টাকা কোথায় যেত, তার তদন্ত হোক। সবে তো ৮ জন আইপিএসের নাম এসেছে। লুট করে বাংলাকে যারা ধ্বংস করছে, ঠিকমতো তদন্ত হলে কেউ ছাড় পাবে না। সে তাঁরা যতই মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য হোন!’’ সুকুমার পাইন, কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য-সহ শিক্ষক-নেতারা পরে রাজভবনে গিয়েছিলেন দাবি জানাতে।

মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলে পথে নেমেছিল কংগ্রেসও। 'দুর্নীতির মূল চক্রী মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই', এই স্লোগান সামনে রেখে মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে এ দিন মিছিল হয়েছে বিধান ভবন থেকে মৌলালি পর্যন্ত। মিছিলে নিয়ে আসা হয়েছিল গরু, সাজিয়ে আনা হয়েছিল অনুব্রতকেও। গরু নিয়ে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ, মাঝপথে গরুদের বাইরে রেখেই আবার মিছিল হয়! শামিল হয়েছিলেন মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি সুমন পাল, রানা রায়চৌধুরী, সাহিনা জাভেদ প্রমুখ। মিছিল শেষে মৌলালির মোড়ে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেসের কর্মী- সমর্থকেরা। কালীঘাট থেকে গড়িয়াহাট পর্যন্ত এ দিন মিছিল করেছে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন। তাদের স্লোগান ছিল— ‘পার্থ থেকে অনুব্রত অঙ্ক অনেক দূর, আসল চোর ধরতে হলে যাও ভবানীপুর’!

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP CPIM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy