Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
হয়নি মন্বন্তর নিয়ে সংগ্রহশালায়ও, আক্ষেপ সুগতের
Partition

‘দেশভাগের ক্ষত বোঝেন সংখ্যালঘুরা’

স্মৃতিকে কী ভাবে দেখা উচিত, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের ভিতরের নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বের কথাও আলোচনায় উঠে এসেছে। বেশ কয়েক বছর আগেই দেশভাগের সংগ্রহালয় তৈরি করেছে অমৃতসর।

বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সুগত বসু এবং শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার আলিপুর জেল মিউজ়িয়মে।

বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সুগত বসু এবং শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার আলিপুর জেল মিউজ়িয়মে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৫৬
Share: Save:

ঠিক সাড়ে সাত দশক আগে ‘র‌্যাডক্লিফ লাইন’-এ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে খড়ির দাগ টানা হয়েছিল ১৭ অগস্ট। শনিবার সন্ধ্যায় আলিপুর মিউজ়িয়মের প্রেক্ষাগৃহে সে কথা মনে করিয়ে দিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ডিনার অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ সুগত বসু। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এমন দিনেই দেশভাগের নানা পরত নিয়ে আলোচনায় বসলেন নিউ জ়িল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, আলিপুর জেল মিউজ়িয়মের কিউরেটর ও ইতিহাসবিদ জয়ন্ত সেনগুপ্ত এবং সুগত। শেখর, জয়ন্ত এবং ঋতুপর্ণা রায়ের সম্পাদনায় ‘দ্য লং হিস্ট্রি অব পার্টিশন ইন বেঙ্গল’-শীর্ষক দেশভাগ বিষয়ক সংকলন গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনার সূত্রেই দেশভাগের নানা কথা উঠে এল।

স্মৃতিকে কী ভাবে দেখা উচিত, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের ভিতরের নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বের কথাও আলোচনায় উঠে এসেছে। বেশ কয়েক বছর আগেই দেশভাগের সংগ্রহালয় তৈরি করেছে অমৃতসর। প্রশ্ন উঠল, তা হলে কলকাতা কি পারে না দেশভাগ বিষয়ক একটি স্থায়ী মিউজ়িয়ম গড়ে তুলতে? ২০১৬ সালে ভারতীয় জাদুঘরের একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সেই প্রথম বাংলার দেশভাগ-বিষয়ক সংগ্রহালয়ের প্রস্তাব উঠে আসে। এখন ভার্চুয়াল আঙ্গিকে নেটমাধ্যমে রয়েছে কলকাতা পার্টিশন মিউজ়িয়ম (কেপিএম)। দুই বাংলার মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় সেতুর ভূমিকা পালনও করছে মিউজ়িয়মটি। প্রকল্পটি ঘিরে নানা কর্মসূচিও চলছে। জার্মানির বার্লিনে হলোকস্ট মেমোরিয়ালস বা ইহুদি-গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণের ধাঁচে বাংলায় মিউজ়িয়ম গড়ার কথা ভাবা হলেও তার মধ্যে ইতিহাসের নানা স্পর্শকাতরতাকে কী ভাবে দেখা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন ইতিহাসবিদেরা। শেখরের কথায়, ‘‘হলোকস্টের সময়ের থেকে দূরত্ব তৈরি করা জার্মানদের জন্য সহজ ছিল। কিন্তু বাংলায় দেশভাগ আজও জলজ্যান্ত বাস্তব। এখানে কে কার উপরে পীড়ন করছে, দেশভাগের দায় কার— তা এক কথায় বিচার করা সোজা নয়। সাত দশক আগে অনেকে ভাবতেন কংগ্রেস ঐক্যপন্থী, আর মুসলিম লীগ বিভাজন চায়,
সেটা সরলীকৃত লাগতে পারে। দেশভাগের দায়ও দু’পক্ষের উপরেই বর্তায়। এটা মাথায় রেখেই দেশভাগকে দেখতে হবে।’’

সুগত বললেন, ‘‘দেশভাগের ধাক্কা শুধু কিছু মানুষের উদ্বাস্তু হয়ে দেশান্তরী হওয়া নয়। নিজভূমে পরবাসী সংখ্যালঘুরাও দু’দেশেই উপস্থিত। এই মাইনরিটাইজ়েশন বা সংখ্যালঘুকরণকে বুঝতে হবে।’’ দেখা গেল, ভারতের মুসলিম এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের সঙ্কটকে দেখার বিষয়ে একমত ইতিহাসবিদেরা। তবে সুগত মনে করেন, ‘‘কলকাতায় দেশভাগের মিউজ়িয়মে সারা পৃথিবীর দেশভাগ বা উদ্বাস্তু সমস্যার দিকগুলি নিয়ে চর্চা হওয়া জরুরি। যেমন প্যালেস্টাইনের গণহত্যাকেও ভুললে চলবে না। গাজ়ায় গণহত্যার যা প্রকোপ, তাতে ওঁদের পক্ষে হয়তো কোনও দিন মিউজ়িয়মই গড়ে তোলা অসম্ভব।’’ সভার পরে তিনি বলছিলেন, ‘‘এত দিনেও বাংলার তেতাল্লিশের মন্বন্তর বিষয়ক কোনও সংগ্রহশালা গড়ে না-ওঠাও দুর্ভাগ্যজনক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Partition minorities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy