প্রতীকী ছবি।
ই-শিক্ষার যুগে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহারে দেশের মধ্যে পিছিয়ে রাজ্য। দেশের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকার বাসিন্দাদের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ এবং হায়দরাবাদের বিটস পিলানি-র অর্থনীতির শিক্ষক মহম্মদ জ়াকারিয়া সিদ্দিকি। তাতে এই ছবি স্পষ্ট হয়েছে। সাবির জানিয়েছেন, ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিসের ২০১৯ সালের নভেম্বরের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তাঁদের এই বিশ্লেষণ। তাঁর বক্তব্য, “এই পরিসংখ্যান নিয়ে এর আগে এমন বিশ্লেষণ হয়নি।”
ওই বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, রাজ্যে মোট ৯ শতাংশ পরিবারে কম্পিউটার রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ৩.৩৩ শতাংশ পরিবারে এবং শহরাঞ্চলে ২৩.০১ শতাংশ পরিবারে। সামগ্রিক ভাবে ৯,৩৯ শতাংশ পরিবারে কম্পিউটার রয়েছে। রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ৭.৮৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৩৬ শতাংশ পরিবারে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে ১৬.৫২ শতাংশ পরিবারে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।
ওই তথ্য বলছে, কেরলে ২৩.৪৭ শতাংশ এবং ৫১.২৫ শতাংশ পরিবারে, মহারাষ্ট্রে ১৪.২৭ শতাংশ এবং ৩৩.৭১ শতাংশ পরিবারে এবং গুজরাতে ১১.২০ শতাংশ ও ৩৩.২১ শতাংশ পরিবারে যথাক্রমে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট রয়েছে। হিমাচল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অসম বাদে বাকি রাজ্যগুলিও কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে এগিয়ে। এ রাজ্যে ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৯.৭৮ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৩২.৫২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে বলেও তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অনলাইনে পঠনপাঠন চালিয়ে কতটা লাভ হতে পারে তা নিয়ে পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই প্রশ্ন উঠতে পারে। তেমনই প্রশ্ন উঠছে নেটনির্ভর পরীক্ষার ভাবনা নিয়েও। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, শহরাঞ্চলে যদিও বা হয়, গ্রামাঞ্চলে অনলাইনে পঠনপাঠনের ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। ফলে সেখানকার পড়ুয়াদের কাছে এই নেটনির্ভর পড়াশোনা অনেকটাই অলীক কল্পনা। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, "সাধারণ বিদ্যালয়ে বহু প্রান্তিক এলাকার ছাত্রছাত্রী পড়ে। শুধু নেটনির্ভর পড়াশোনা হলে শিক্ষায় বৈষম্য বাড়বে। তা ছাড়া, নেট মাধ্যমে কখনই ২০ শতাংশের বেশি পড়ুয়া উপকৃত হবে না।"
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন (কুটা)-এর সভাপতি অধ্যাপক পার্থিব বসু বলেন, ‘‘নেট নির্ভর পড়াশোনা মূল বিকল্প হতে পারে না। বহু পড়ুয়ার অনলাইন ক্লাস করার পরিকাঠামো নেই। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের অভাব অন্যান্য সমীক্ষাতেও এসেছে। তার বদলে রেডিয়োর মতো গণমাধ্যমে ক্লাস ঢের কার্যকর হতে পারে।’’ সরকারপোষিত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে তাঁরা বলছেন, শহরতলির বহু বাংলামাধ্যম স্কুলেই বহু নিম্নবিত্ত এবং আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনা করেন। সেখানে পরিবারপিছু হয়তো একটি স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। সেটি পরিবারের প্রধানের কর্মসূত্রে ব্যবহৃত হয়। ফলে পরিবারপিছু ইন্টারনেট সংযোগের পরিসংখ্যান দিয়েও প্রকৃত ছবি অনুধাবন করা যাবে না।
অনেক সময়ে দেখা যাচ্ছে, গোটা পরিবারের জন্য দৈনিক ১ জিবি বরাদ্দ। পড়ুয়া সব ক’টি ওয়েবমাধ্যমের ক্লাসে যোগ দিতে পারছে না। তার বদলে পিডিএফ করে নোট দেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তো শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্র থাকছে না।
এই প্রসঙ্গেই কেউ কেউ আবার বলছেন, ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে যখন এই তথ্য দিয়েছিল তখনও লকডাউন এবং আমপান আসেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বহু পরিবারেই আর্থিক মন্দার ধাক্কা লেগেছে, অনেকে কাজ হারিয়েছেন। তার ফলে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও ধাক্কা লাগবে। ফলে এখন এই তথ্য নিলে তা ভিন্ন হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy