Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পেঁয়াজের কেজি একশো, সব আনাজই আগুন

মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বর্ধমান, হুগলি-সহ সব জেলাতেই আনাজের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। দাম কমাতে সপ্তাহ দুয়েক আগে নবান্নে বিভিন্ন দফতরের কর্তা ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও আনাজের দাম কমেনি।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৮
Share: Save:

হাওড়া উদয়নারায়ণপুর বাজারে ঢুকেই যেন ছেঁকা খেলেন তারকনাথ মেটে। পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি! পাশে অন্য এক ধরনের পেঁয়াজ বিকোচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। সোমবার সকালে মানিকতলা বাজারে ঢুকে হতভম্ব হয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দা সুশোভন বসু। ‘‘শুধু পেঁয়াজ কেন, অন্যান্য আনাজেও হাত দেওয়া যাচ্ছে না। আনাজের দাম যে এতটা বাড়বে, ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি,’’ বললেন সরকারি কর্মী সুশোভনবাবু।

মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বর্ধমান, হুগলি-সহ সব জেলাতেই আনাজের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। দাম কমাতে সপ্তাহ দুয়েক আগে নবান্নে বিভিন্ন দফতরের কর্তা ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও আনাজের দাম কমেনি। উল্টে পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছে। বালুরঘাটে ডবল সেঞ্চুরি রসুনের! কেন রসুন ২০০ টাকা কেজি? উত্তর নেই। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিমের মতো শীতের আনাজের দামও ঊর্ধ্বমুখী।

কলকাতার বিভিন্ন বাজারে ছোট ফুলকপি বিকিয়েছে ২৫-৩০ টাকায়। চেহারায় একটু বড় হলেই ৩৫-৪০ টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা। একই অবস্থা বাঁধাকপি, শিম, বেগুন, টোম্যাটো, পালংশাক, আদা, রসুনেরও। শিম ৮০-১০০ টাকা কেজি, পালং ৫০-৬০, টোম্যাটো ৫০-৬০ টাকা। উত্তরে মানিকতলা, উল্টোডাঙা, কলেজ স্ট্রিট শিয়ালদহ থেকে দক্ষিণের লেক মার্কেট, ল্যান্সডাউন, গড়িয়াহাট বাজার— সর্বত্রই আনাজ আগুন।

মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরে শহরের বিভিন্ন বাজারে হানা দিচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ বা ইবি। কিন্তু তাতে আনাজের দামের অগ্রগতি আটকায়নি। ডিসি (ইবি) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘আনাজের দাম কমানোর জন্য আমরা বিক্রেতাদের অনুরোধ করতে পারি। কিন্তু আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সমস্যা আছে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরেও আনাজের দাম কমল না কেন? মূলত দু’টি কারণ দেখানো হচ্ছে। জোগান কম আর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। সরকারি টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা পাইকারি বাজার কোলে মার্কেটের সদস্য কমল দে বলেন, ‘‘বাংলায় মাসে ৮০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের প্রয়োজন। কিন্তু এখন ৪০-৫০ হাজার টনের বেশি আসছে না।’’ কৃষি দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের ৭০% পেঁয়াজ আসে মহারাষ্ট্রের নাশিক থেকে। বাকি ৩০% দেয় দক্ষিণ ভারত। মহারাষ্ট্র এবং দক্ষিণ ভারতে বন্যায় প্রচুর পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশ্বাস দিয়েছেন কমলবাবু।

টাস্ক ফোর্সের ওই সদস্য জানান, টানা বৃষ্টি ও বুলবুলের জন্য দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচুর আনাজ নষ্ট হয়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আনাজ না থাকায় দাম কমছে না। উদ্যানপালন মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লা বলেন, ‘‘এ বার অকালবৃষ্টির জন্য মাঠের ফসল নষ্ট হয়েছে। আনাজের দামের নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই দেখছে টাস্ট ফোর্স।’’

দেখছে তো বটে, ফল হচ্ছে কি, প্রশ্ন আমজনতার। কাঁথি, তমলুক, দিঘা, এগরা, ঘাটালে পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। একই অবস্থা বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায়। এ দিন কালনা, পূর্বস্থলী, মেমারি, মন্তেশ্বরের খুচরো বাজারে পেঁয়াজ বিকিয়েছে ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে। উচ্ছে, ক্যাপসিকাম, বিট, গাজরের দামও একশো ছুঁইছুঁই। ক্রেতাদের অনেকেই জানান, বাধ্য হয়ে ডাল, সয়াবিন দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। গোপাল ঘোষ নামে পূর্বস্থলীর এক চাষি বললেন, ‘‘পুজোর আগে দুর্যোগ এবং সম্প্রতি বুলবুলের ধাক্কায় প্রচুর আনাজ নষ্ট হয়েছে। মরা গাছ ফেলে চারা তৈরি করতে হয়েছে নতুন করে। আশা করছি, সেই সব গাছের ফলন পেলে ঘাটতি মিটবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Onion Cyclone Bulbul Vegetable
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy