Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
police

নন্দলালের রিভলভার কেড়ে ওকেই মেরেছিল ওদের এক জন

নিউ টাউনে পঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টারের এনকাউন্টার অনেক পুলিশকর্মীর মনেই উস্কে দিয়েছে ১৯৯১ সালের ৯-১০ জানুয়ারির হামলার স্মৃতি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রশান্ত পাল 
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২১ ০৪:৪৪
Share: Save:

সে-ও এক দিন ছিল। পুরুলিয়ায় পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাতে ব্যস্ত তিন খলিস্তানি জঙ্গি গুলি চালিয়ে মেরেছিল চার পুলিশ কর্মী ও তিন সাধারণ মানুষকে। গুলিবিদ্ধ হন কয়েকজন। শেষে পুলিশের গুলিতে মারা পড়ে দুই জঙ্গি পঞ্জাবি। পুলিশ সূত্রের দাবি, এক জঙ্গির সন্ধান মেলেনি। নিউ টাউনে পঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টারের এনকাউন্টার অনেক পুলিশকর্মীর মনেই উস্কে দিয়েছে ১৯৯১ সালের ৯-১০ জানুয়ারির হামলার স্মৃতি।

সে সময়ের পুলিশকর্মীদের অনেকে এখন অবসরপ্রাপ্ত। হুড়া থানার প্রাক্তন ওসি জিতেন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রাতে বলরামপুরের রাস্তায় দুই কনস্টেবল জামশেদপুরের দিক থেকে আসা একটি গাড়ি আটকে কাগজপত্র দেখতে চান। গাড়ির যাত্রীরা গুলি করে তাঁদের মেরে রাইফেল নিয়ে চম্পট দেয়। তল্লাশি শুরু হয়। কিন্তু হামলা কারা, কেন করল—জানা যাচ্ছিল না। পরে বোঝা যায়, ওই গাড়ির যাত্রীরা তিন জঙ্গি। পঞ্জাব থেকে আসানসোলে এসে ডেরা বেঁধেছিল। সংগঠনের কাজে জামশেদপুরে গিয়েছিল।’’

পুলিশ খবর পায় আড়শার কাঁটাডির কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। সে গাড়িতে জঙ্গিরা ছিল সন্দেহে রাতভর চিরুনি-তল্লাশি হয়। কিন্তু কারও সন্ধান মেলেনি। জিতেনবাবু বলেন, ‘‘পরদিন সকালে কাঁটাডি বাজারে এক পঞ্জাবি যুবক পুরুলিয়ার বাসের খোঁজ করায় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। খবর যায় পুলিশে। কাঁটাডি ক্যাম্পের এক পুলিশকর্মী ছেলেটিকে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি করছিলেন। আচমকা সে রিভলভার বার করে এক এএসআইকে গুলি করে মেরে পালায়।’’

পুরুলিয়ায় পৌঁছন রাজ্য পুলিশের তৎকালীন অন্যতম কর্তা রজত মজুমদার। দুপুরের দিকে খবর আসে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার ভেলাইডি গ্রামের কাছে তিন পঞ্জাবি যুবক পিকনিক করতে আসা লোকজনের সঙ্গে খিচুড়ি খাচ্ছে। সেখানে পৌঁছন পুরুলিয়া সদর থানার তৎকালীন ওসি কনক চৌধুরী, এএসআই নন্দলাল গড়াই। কনকবাবুর কথায়, ‘‘এক জঙ্গি নন্দলালের বুকে গুলি করে আমাদের জিপ নিয়ে পালায়।’’ পুলিশের জিপের চালক ভোলানাথ নন্দীর মনে পড়ে, ‘‘ওরা অস্ত্র দেখিয়ে জিপ কেড়েছিল।’’

পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার তৎকালীন ওসি জীবন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওদের এক জন নন্দলালের রিভলভার কেড়েই নন্দলালকে মেরেছিল। রাস্তার ধারে খাটিয়া পেতে বসে থাকা এক গ্রামবাসীকেও গুলি করে মারে।’’

জীবনবাবু জানান, তাঁদের সামনেই পড়ে যায় জঙ্গিদের দখল করা জিপ। পুলিশের গুলিতে ক্ষতি হওয়ায় সেটি দাঁড়িয়ে যায়। জঙ্গিরা সেটি ফেলে রেশনের মাল বোঝাই ম্যাটাডোরে উঠে পড়ে। জয়পুর থানার পুলিশ রাস্তায় ড্রাম রেখে দেওয়ায় জঙ্গিরা সেখানে এক পুলিশ কর্মীকে গুলিতে জখম করে। ম্যাটাডোরের চালককে মেরে তারা যাত্রিবাহী বাসে ওঠে। বাসের এক যাত্রীকেও গুলি করে মেরে তারা জয়পুরের জঙ্গলে ঢোকে। একটা টিলার আড়াল থেকে গুলি চালাতে শুরু করে। পুলিশ পাল্টা জবাব দেয়। জীবনবাবুর স্মৃতিচারণ, ‘‘ঘণ্টা দেড়েক পরে, গুলির লড়াইয়ে দুই জঙ্গি খতম হয়।’’

পরবর্তীকালে মাওবাদী জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংঘর্ষ দেখেছে পুরুলিয়া। কিন্তু সে সবকে ছাপিয়ে প্রাক্তন পুলিশকর্মীদের স্মৃতিতে ১৯৯১।

অন্য বিষয়গুলি:

police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy