Advertisement
E-Paper

‘মরতে চাই’, প্রশ্ন শুনে চিৎকার করে উঠলেন শয্যাশায়ী

বুধবার সকালে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে যাওয়া হয়েছিল ট্যাংরা-কাণ্ডে আহত তিন জনের সম্পর্কে খোঁজ করতে। অস্থিরোগ বিভাগের দোতলায় তিনটি আলাদা ঘরে রাখা হয়েছে প্রণয় দে, তাঁর ভাই প্রসূন এবং প্রণয়ের পুত্রকে।

ট্যাংরা-কাণ্ডে জখমদের শয্যার পাশে পুলিশি পাহারা।

ট্যাংরা-কাণ্ডে জখমদের শয্যার পাশে পুলিশি পাহারা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৫২
Share
Save

‘আমি মরতেই চাই। আমি কিন্তু বাঁচতে চাই না।”— হাসপাতালের অস্থিরোগ বিভাগের শয্যা থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন মাঝবয়সি ব্যক্তি। ছুটে এলেন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা। শয্যার কাছেই বসে থাকা পুলিশকর্মীও তৎপর। তৎক্ষণাৎ ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন তাঁরা। স্বগতোক্তির ভঙ্গিতেই ওয়ার্ডের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশকর্মী বললেন, “এত সহজে নিস্তার নেই। কে কাকে খুন করেছে, আগে স্পষ্ট করে বলতে হবে!”

বুধবার সকালে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে যাওয়া হয়েছিল ট্যাংরা-কাণ্ডে আহত তিন জনের সম্পর্কে খোঁজ করতে। অস্থিরোগ বিভাগের দোতলায় তিনটি আলাদা ঘরে রাখা হয়েছে প্রণয় দে, তাঁর ভাই প্রসূন এবং প্রণয়ের পুত্রকে। হাসপাতালের মূল ফটক পেরিয়ে ঢুকতেই এক নিরাপত্তাকর্মী দেখিয়ে দিলেন মর্গের পাশের অস্থিরোগ বিভাগের ভবন। দেখা গেল, সিঁড়ি দিয়ে ওঠার রাস্তায় দুই পুলিশ পাহারায়। ভবনের পিছন দিকের লিফটের সামনেও রয়েছেন হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মী। দোতলায় উঠে দেখা গেল, লিফটের দরজার ঠিক উল্টো দিকে বিভাগে প্রবেশের পথ। ভিতরে ওয়ার্ডের মাঝ বরাবর একটি শয্যায় শুয়ে বছর বারোর কিশোর। শয্যার উপরেই তার পাশে পড়ে একটি ফাইল। উপরে নাম লেখা কিশোরের। শয্যার ঠিক সামনে টেবিল পাতা। তার পাশে চেয়ার নিয়ে বসে নজরদারি চালাচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। কিশোরের দু’পাশে দু’টি শয্যা ফাঁকা রাখা হয়েছে। তার পর থেকে রয়েছেন অন্য রোগীরা।

ওই ঘর থেকে বারান্দার দিকে বেরিয়ে ডান দিকে গেলে আর একটি ঘর। দরজার সামনে বসে এক উর্দিধারী পুলিশ। কোনও মতে ঢুকতেই চোখে পড়ে একটি শয্যার সামনে টেবিল পাতা। তার সামনে পাহারায় বসে দুই পুলিশ। সামনের যে শয্যা ঘিরে এই বন্দোবস্ত, সেখানে এক পাশে কাত হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছেন এক জন। এখানেও এই শয্যার দু’পাশের দু’টি শয্যা ফাঁকা। কাছে গিয়ে জানতে চাওয়া হল, আপনিই কি প্রসূন? কথা শুনে তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালেন পুলিশকর্মীরা। চোখ খুলেছেন শয্যায় থাকা ব্যক্তিও। হাত, গলায় একাধিক কাটা দাগ তাঁর। পুলিশকর্মীরা জানতে চাইলেন, কোথা থেকে আসা হয়েছে? সংবাদমাধ্যমের লোক শুনেই চিৎকার শুরু করলেন ওই ব্যক্তি। বললেন, “আমি কিন্তু বাঁচতে চাই না।” আপনিই কি আপনার স্ত্রী এবং বৌদিকে খুন করেছেন, প্রশ্ন করা গেল কোনও মতে। রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠলেন পুলিশকর্মীরা। ধমকানো শুরু হল শয্যায় থাকা ব্যক্তিকেও। তার মধ্যেই মাঝবয়সি বললেন, “দাদা সব জানে। পুলিশকেও সব বলেছি।”

কেন মৃত্যু চাইছেন? উত্তর আর শোনা হয়নি। বেরিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়ে পুলিশ অস্থিরোগ বিভাগের সব ক’টি দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয়। ফোনে ছবি তোলা হয়েছে কি না, যাচাই করে রাস্তা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে যান এক পুলিশ। তিনিই বলেন, “এমনিই ঝামেলা কম নয়, তার উপরে এঁরা দুই ভাই কিছু খেতে চাইছেন না। শুধু মাঝেমধ্যে একটা ফোন চাইছেন, কাউকে নাকি ফোন করে ডাকতে চান। কিন্তু কাকে, কেন ডাকতে চান, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছুই বলছেন না।”

এ দিনও অবশ্য লালবাজার স্পষ্ট করতে পারেনি, ট্যাংরায় তিনটি ‘খুন’ কে করেছেন এবং কী ভাবেই বা সমস্তটা ঘটানো হয়েছে। আর্থিক অনটনের দিক তদন্তে উঠে এলেও সেটাই মূল কারণ কি না, স্পষ্ট হয়নি তা-ও। পুলিশ সূত্রে শুধু জানা গিয়েছে, বোলপুরে কারখানার কাজ চালানোর জন্য এক সময়ে কেনা জমি সম্প্রতি বিক্রি করতে চাইছিলেন দে পরিবারের সদস্যেরা। পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, “আর কয়েকটা দিক নিশ্চিত হওয়া বাকি। হয়ে গেলেই সমস্তটা জানানো হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tangra Murder Case Tangra Police Interrogation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}