বকখালি সমুদ্রতটে ভেঙে গিয়েছে ফলক। ছবি: সমরেশ মণ্ডল।
রাতভর তেমন কিছু না হলেও, ডেনার প্রভাবে শুক্রবার ভোর থেকে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে দফায় দফায় বৃষ্টি শুরু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার উপকূল জুড়ে। ঝোড়ো হাওয়া আর জোয়ার মিলিয়ে সকালের দিকে উত্তাল হয়ে ওঠে নদী ও সমুদ্র। দিনভর ভারী বৃষ্টির ফলে রাস্তা ঘাট-সহ নিচু জায়গায় জল জমেছে। ধান চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে বহু কাঁচা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। কোথাও কোথাও ক্ষতি হয়েছে বাঁধের। ঝড়-জলের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের।
এ দিন সকালে বঙ্গোপসাগরে জোয়ার শুরু হয়। গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি মন্দিরের সামনে সমুদ্রতটে একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ে। ঢেউয়ের দাপটে নতুন করে সমুদ্র পাড়ের মাটি ধসতে শুরু করে। মন্দিরের সামনে এলাকার একটি অংশ সম্প্রতি মেরামত করে প্রশাসন। কিন্তু তা কাজে দেয়নি। এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত দাস বলেন, “মন্দির রক্ষা করতে হলে কংক্রিটের বাঁধ দিতে হবে। না হলে কপিলমুনির মন্দির মুছে যাবে।”
কাকদ্বীপ মহকুমার বঙ্কিমনগর, মহিষামারি, গোবর্ধনপুর, নান্দাভাঙা, নারায়ণগঞ্জ-সহ কয়েকটি জায়গায় বাঁধে ধস নেমেছে। বকখালি সমুদ্রতটের কাছে কয়েকটি দোকানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে সমুদ্রতটে ‘আই লাভ বকখালি’ লেখা বোর্ড।সাগরে ১৪,৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে এ বারে। প্রশাসন সূত্রের খবর, দুর্যোগে ক্ষতি হয়েছে ৩০-৩৫ শতাংশের কাছাকাছি। ৭৫০ হেক্টর আনাজ খেতের ৪০ শতাংশের কাছাকাছি প্লাবিত হয়েছে। সুন্দরবনের অন্যান্য ব্লকেও চাষের ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। কুলতলি ব্লকে প্রায় পঞ্চাশটি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্তত দু’টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ দিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ নবান্ন থেকে পরিস্থিতির খোঁজ নিতে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরাকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী পরে বলেন, “গঙ্গাসাগর মেলার মাঠের বেশ কিছু অংশে জল জমে ছিল। পরে তা কমে যায়। তবে মন্দির সুরক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।”
এ দিন সকালে পাথরপ্রতিমার শ্রীধরনগর পঞ্চায়েত এলাকায় ভাঙা গাছের উপর পড়ে থাকা বিদ্যুৎবাহী তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শুভজিৎ দাস নামে বছর ষোলোর এক কিশোরের। সকাল থেকেই গাছ কাটার কাজে হাত লাগাতে দেখা যায় সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এ দিন দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্নও ছিল বহু এলাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের দাপট কমায় অনেককেই দেখা যায় ত্রাণ শিবির থেকে ঘরে ফেরার পথ ধরতে।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “দুর্যোগে প্রাণ হারানো নাবালকের পরিবারের পাশে প্রশাসন আছে। তাঁদের আর্থিক সাহায্য করা হবে। শনিবার প্রশাসনের আধিকারিকরা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। এ ছাড়া জেলা জুড়ে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।” সাগর বিধানসভা এলাকার চন্দনপীড়ি গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীর খোঁজ নিলেন ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ। তিনি ত্রাণসামগ্রীও তুলে দেন গ্রামবাসীদের হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy