অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে দিঘায় রিয়া এবং রমা। —নিজস্ব চিত্র।
হলদিয়ায় মা-মেয়ের জোড়া খুনের মামলায় তদন্তে প্রতিদিনই উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য! দু’বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই শেখ সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আলাপ হয় আয়েশা ওরফে রিয়া ওরফে কৌশানির।পুলিশ সূত্রে খবর, জেরার মুখে সাদ্দাম তাঁদের জানিয়েছেন, দু’বছরের সামান্য বেশি সময় আগে তাঁর আলাপ হয় নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা রিয়া দে-র সঙ্গে।
সাদ্দামের দাবি, সেই সময় তিনি জানতেন না যে রিয়ার সঙ্গে একাধিক যুবকের সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় তিনি দাবি করেছেন, যখন তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় রিয়ার, তখন সাদ্দাম অবিবাহিত ছিলেন। সেই কারণেই রিয়াকে তিনি বিয়ে করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। জেরায় তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সেই সময়ে অর্থাৎ ২০১৮ সালে সাদ্দামের সঙ্গে রিয়ার এতটাই ঘনিষ্ঠতা ছিল যে তাঁরা প্রায়ই একসঙ্গে থাকতেন। দুর্গাচকের হাজরা মোড়ের একটি বাড়িও ভাড়া করেছিলেন সাদ্দাম। যেখানে এসে থাকতেন রিয়া। অনেক সময় রিয়া তাঁর মাকে নিয়েও আসতেন। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল সাদ্দামের। সেই সময়েই মা-মেয়েকে নিয়ে দিঘা, মন্দারমণিতেও ছুটি কাটাতে গিয়েছেন সাদ্দাম।
পুলিশ সাদ্দামের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছে। জানা যায়, রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছিলেন তাঁর দাদা। তা নিয়ে ওইপরিবারে সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু তার পরেও সাদ্দাম ভাড়াবাড়িতে রেখে দিয়েছিলেনরিয়াকে। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় সাদ্দাম তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন যে, হঠাৎ করেই তিনি জানতে পারেন, রিয়ার সঙ্গে আরও অনেক যুবকের সম্পর্ক রয়েছে। ফেসবুকে কৌশানি বিশ্বাস, উর্বি, আয়েশা নামে প্রোফাইল খুলে বিভিন্ন যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতেন রিয়া। সাদ্দামের দাবি, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসতে চান তিনি।
আরও পড়ুন: খিদিরপুরে মহিলা বক্সার নিগ্রহের ঘটনায় ১ বছরের জেল ৩ জনের
সাদ্দামের সঙ্গে রিয়ার এতটাই ঘনিষ্ঠতা ছিল যে তাঁরা প্রায়ই একসঙ্গে থাকতেন
তখন থেকেই সাদ্দামকে ব্ল্যাকমেল করতেন রিয়া এবং তাঁর মা রমা, জেরায় এমনটাই জানিয়েছেন অভিযুক্ত সাদ্দাম। তাঁর এক দাদা পুলিশকে জানিয়েছেন, এক বছর আগে লাখ চারেক টাকা নগদ দিয়ে সম্পর্ক চুকিয়েছিল সাদ্দাম। পুলিশের কাছে সাদ্দামের দাবি, ওই সময়ে রমা কথা দিয়েছিলেন যে, তাঁরা সাদ্দামের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের যে ঘনিষ্ঠ ছবি-ভিডিয়ো ছিল কখনও তা প্রকাশ্যে আনবেন না। অভিযুক্তের পরিবারের দাবি, এক বছরে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা মা-মেয়ের পিছনে খরচ করেছেন সাদ্দাম। পুলিশের দাবি, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, সাদ্দামের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে গেলেও হাজরা মোড়ের ওই বাড়ি ছাড়েননি রিয়া-রমা।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় আট মাস আগে সাদ্দাম বিয়ে করেন। সেই খবরও পৌঁছয় রিয়া-রমার কাছে। সাদ্দাম পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, বিয়ের পর কয়েক মাস কাটতেই ফের টাকার দাবি করতে শুরু করেন রমা। সঙ্গে হুমকি— রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সমস্ত ছবি পৌঁছে দেওয়া হবে সাদ্দামের স্ত্রীর কাছে। তার পর থেকেই ফের হাজরা মোড়ের ওই ভাড়াবাড়িতে নিয়মিত আসা যাওয়া শুরু করেন রমা-রিয়া। জেরায় সাদ্দাম স্বীকার করেছেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতেও সাদ্দাম ওই ভাড়াবাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনজন মিলে অনেক রাত পর্যন্ত মদ্যপান করেন। তার মধ্যেই টাকা-পয়সা নিয়ে রমার সঙ্গে এক দফা বচসা হয় সাদ্দামের। এর পরেই ভোররাতে বেহুঁশ মা-মেয়েকে সাদ্দাম নিজের শাগরেদদের সাহায্যে নিয়ে যান নদীর পাড়ে, জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে খুন করা হয় তাঁদের।
আরও পড়ুন: দিল্লির আগুনের আঁচ যেন কলকাতায় না পড়ে, সতর্ক পুলিশ
যদিও সাদ্দামের এই গোটা বয়ানবিশ্বাস করতে পারছেন না তদন্তকারীরা। তাঁদের একজন মঙ্গলবার বলেন,‘‘সাদ্দামের কথায় অসঙ্গতি রয়েছে। সাদ্দাম অনেক কথাই গোপন করছে।” তবে তাঁরা স্বীকার করেন যে, সাদ্দামের বক্তব্যের কয়েকটি অংশ সত্যি। তিনি যে রমা এবং রিয়ার জন্য অনেক টাকা খরচ করেছেন তা সত্যি। ওই তদন্তকারী বলেন, ‘‘সাদ্দামের কাছ থেকে বেশ কিছু ছবিও পাওয়া গিয়েছে যা থেকে স্পষ্ট যে রমা-রিয়াকে নিয়ে দিঘা মন্দারমনি বেড়াতে গিয়েছিলেন সাদ্দাম।’’ তবে তদন্তকারীরা নিশ্চিত— হঠাৎ করে নয়, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই সাদ্দাম খুন করেছিলেন দু’জনকে। তদন্তকারীদের দাবি, সাদ্দামকে আরও জেরা করা প্রয়োজন।তাঁদের আশা, জেরায় বেরিয়ে আসবে আরও নতুন তথ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy