নিয়োগ মামলায় ধৃত অয়ন শীল। —ফাইল চিত্র।
পুরসভায় নিয়োগ মামলার তদন্তে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই। তৃণমূলের আর এক নেতা তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের বাড়িতেও চলছে সিবিআই-তল্লাশি। এ ছাড়া, একাধিক পুরসভায় রবিবার সকালে সিবিআই আধিকারিকেরা হানা দিয়েছেন। হালিশহর, কাঁচরাপাড়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং কৃষ্ণনগরে তল্লাশি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
পুর-নিয়োগ মামলায় কিছু দিন আগে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে গিয়েছিল ইডি। প্রায় সাড়ে ১৯ ঘণ্টা তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চলে। রাত পৌনে ২টো নাগাদ আধিকারিকেরা বেরোন। যে পুর-নিয়োগ মামলার সূত্রে ইডি এবং সিবিআই সম্প্রতি এত তৎপর, তার সূত্রপাত কোথায়? কী ভাবে কার সূত্র ধরে বিস্তীর্ণ দুর্নীতির জাল উন্মোচন করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা?
এই তদন্তের গোড়ার দিকে ফিরে তাকালে উঠে আসে একটাই নাম— অয়ন শীল। শিক্ষক নিয়োগ মামলায় হুগলি তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। শান্তনুর সূত্রে অয়নের কথা জানতে পারেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। তাঁর চুঁচুড়ার বাড়ি এবং সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। শিক্ষক নিয়োগ মামলাতেই অয়নকেও গ্রেফতার করে ইডি।
অয়নের অফিসে তল্লাশি চালাতে গিয়ে পুর-নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি উদ্ধার করা হয়। পাওয়া যায় অনেক ওএমআর শিট। এতেই প্রকাশ্যে আসে শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি পুরসভার বিভিন্ন পদে নিয়োগের দুর্নীতির কথাও। যদিও অয়নের আইনজীবী দাবি করেছিলেন, অয়নের সংস্থা পুরসভার নিয়োগের বিষয়টি পরিচালনা করত। সেই সূত্রেই বাড়তি কিছু ওএমআর শিট অয়নের অফিসে রয়ে গিয়েছে।
পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির কথা এর পর আনুষ্ঠানিক ভাবে সিবিআই এবং আদালতকে জানায় ইডি। গত ২২ এপ্রিল হাই কোর্টের নির্দেশে এই মামলায় এফআইআর দায়ের করে সিবিআই তদন্ত শুরু করে। একই সঙ্গে ইসিআইআর দায়ের করে ইডিও। ওই এফআইআরে বিভিন্ন পুরসভার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল।
অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক পুরসভায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে সিবিআই। তাদের অভিযোগ, পুরসভাগুলিতে অনেক পদেই টাকা দিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে। একটি ‘রেট চার্ট’ প্রকাশ্যে আসে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা যায়, পুরসভায় শ্রমিক এবং গাড়িচালক, ঝাড়ুদার এবং গ্রুপ ডি-র চাকরিতে সর্বনিম্ন চার লক্ষ টাকা করে, গ্রুপ সি, টাইপিস্ট এবং সহকারীর চাকরিতে সর্বনিম্ন সাত লক্ষ টাকা করে জমা দিতে হত। তবেই মিলত চাকরি। যদিও তৃণমূলের তরফে এই ‘রেট চার্টের’ তত্ত্ব উড়িয়ে দেওয়া হয়। তাদের দাবি, সরকারি বা বেসরকারি কোনও ক্ষেত্রেই এই ধরনের ‘রেট চার্ট’ থাকা সম্ভব নয়। আর যদি থাকেও, কেউ নিশ্চয়ই নিজের বাড়ি বা অফিসে তা সাজিয়ে রাখবেন না। তাই কেন্দ্রীয় সংস্থার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল।
অয়নের সূত্রে তাঁর পুত্র অভিষেক শীল, বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তী, পুত্রের বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়-সহ একাধিক নাম উঠে আসে। তাঁরাও কোনও না কোনও ভাবে অয়নের সংস্থা এবং পুরসভার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ ওঠে। তদন্তকারী সংস্থা জানতে পারে, ইমনের বাবা নগরোন্নয়ন দফতরে একদা কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তিনি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। অয়নের পুত্রের সঙ্গে ইমনের যৌথ অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়। অয়নের বান্ধবী শ্বেতা এক সময় কামারহাটি পুরসভাতে চাকরি করতেন বলে খোঁজ পান তদন্তকারীরা।
মাঝে পুর-নিয়োগের তদন্ত কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। কিছু দিন আগে গত ৫ অক্টোবর এই মামলার সূত্রেই খাদ্যমন্ত্রী রথীনের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। এক যোগে ১০ থেকে ১২টি দলে ভাগ হয়ে বরাহনগর, সল্টলেক-সহ মোট ১২টি জায়গা একই দিনে তারা তল্লাশি চালায়। তার তিন দিনের মাথায় এ বার ফিরহাদ, মদনের বাড়িতে গেল সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy