চোখে জল পিয়ারী বেগমের। নিজস্ব চিত্র
সাতসকালে ব্যস্ত সড়কের মাঝেই মাদুর পেতে বসে এক বৃদ্ধা। তাঁকে ঘিরে জটলা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাস-সহ যাবতীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ হল। দীর্ঘ হল যানজট। পরিস্থিতি সামলাতে এল পুলিশ। জানা গেল, একমাত্র ছেলে আর বৌমা দেখে না। তাই পথে এসে বসেছেন স্বামীহারা বছর ষাটেকের পিয়ারী বেগম।
রবিবার সকালে তমলুক থানার চনশ্বরপুর হাইস্কুলের কাছে তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কে ওই বৃদ্ধার একার এই অবরোধে হইচই পড়ে যায় এলাকায়। পরে পুলিশ বৃদ্ধাকে বুঝিয়ে সরাতে চেষ্টা করে। কিন্তু বৃদ্ধার দাবি ছিল, তাঁর জন্য পুলিশ কিছু একটা করুক। পিয়ারীর কথায়, ‘‘একমাত্র ছেলেকে জমিজমা লিখে দিয়েছি। কিন্তু ছেলে-বৌমা দেখে না, খেতে দেয় না। অন্যের বাড়িতে থাকতে হয়।’’ সব শুনে পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন তিনি।
বাবা-মায়ের প্রতি ছেলে-বৌমার অবহেলার অভিযোগ নতুন নয়। এ নিয়ে থানা-পুলিশ, কোর্ট-কাছারিও হয় হরদম। তবে তার বিহিত চেয়ে বৃদ্ধার সড়ক অবরোধ কার্যত নজিরবিহীন। ঘটনায় তৎপর হয়েছে তমলুক থানার পুলিশ। বৃদ্ধার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এ দিনই তাঁর ছেলে-বৌমার খোঁজে বাড়িতে যান পুলিশকর্মীরা। তবে ছেলে পিয়ারু মহম্মদ তখন আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে যান বলে অভিযোগ। আর পিয়ারুর স্ত্রী দাবি করেন, ‘‘শাশুড়িকে আমরা বাড়িতেই থাকতে বলেছিলাম। উনি থাকতে চাননি।’’ সব শুনে শাশুড়িকে নিয়েই তাঁদের থানায় যেতে বলে যায় পুলিশ।
চনশ্বরপুর বাজার লাগোয়া দক্ষিণ বাগুয়ান গ্রামের বাসিন্দা পিয়ারীর স্বামী মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। একমাত্র ছেলে বছর তেতাল্লিশের পিয়ারু মহম্মদ কর্মসূত্রে ভিন্ রাজ্যে থাকেন। তবে ছেলে-বৌমার সঙ্গে তাঁর অশান্তি চলছিল। কয়েক মাস আগে বৃদ্ধা বাড়ি ছেড়ে প্রথমে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। পরে থাকছিলেন প্রতিবেশীর বাড়িতে। অভিযোগ ছেলে-বৌমার অবহেলার বিহিত চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুরাহা হয়নি। রবিবার তাই বাড়ির অদূরে একাই পথ অবরোধে বসে পড়েন।
এ দিন ওই অবরোধে আটকে পড়া তমলুকের হরিদাসপুরের বাসিন্দা মানস বেরা বলছিলেন, ‘‘আজ নার্সিংয়ের এন্ট্রাস পরীক্ষা ছিল। মেয়েরকে নিয়ে যাওয়ার পথে দেখি এক বৃদ্ধা একা রাস্তা আটকে বসে আছেন। এমন সচরাচর দেখা যায় না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সামসদোহা খান জানালেন, ‘‘ছেলে ইদের ছুটিতে আসার পরে বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন বৃদ্ধা। কিন্তু ওরা বাড়িতে রাখতে চায়নি। আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি যাতে বৃদ্ধা বাড়িতে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে।’’ তমলুক থানা সূত্রের খবর, বৃদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি পদেক্ষপ করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy