উদ্ধারের পরে বসে রয়েছেন বৃদ্ধা লক্ষ্মীদেবী। নিজস্ব চিত্র
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে ভরা ভাগীরথীর সঙ্গে লড়ছিলেন ৮২ বছরের বৃদ্ধা। ভাসতে ভাসতে চলে গিয়েছিলেন প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে। শেষমেশ, জলের মধ্যে তাঁর হাত উঁচু করে কিছু ধরার চেষ্টা নজরে পড়ে এক ট্রলারচালকের। বেঁচে যান পূর্বস্থলীর লক্ষ্মী বিশ্বাস।
পরিবারের দাবি, এক সময় সাঁতরে নদী, পুকুর, দিঘি পারাপার করলেও বয়স বাড়ার পরে সাঁতার কাটতেন না লক্ষ্মীদেবী। বছর তিনেক আগে কোমরের হাড় ভাঙার পর থেকে লাঠি ছাড়া হাঁটাচলার ক্ষমতাও ছিল না। ফলে, মঙ্গলবার সকালে ভাগীরথীতে ভেসে যাওয়ার পরে, বৃদ্ধার খোঁজ না মেলায় পরিজনেরা প্রায় ধরেই নেন, দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। কিন্তু বেলা ১২টা নাগাদ লক্ষ্মীদেবী প্রতাপনগর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন খবর পেয়ে হকচকিয়ে যান তাঁরা। লক্ষ্মীদেবীর ছোট মেয়ে রিনা বিশ্বাসের কথায়, ‘‘সবই ঈশ্বরের কৃপা!’’
‘‘অবিশ্বাস্য কাণ্ড’’, বলছেন ইংলিশ চ্যানেল-সহ তিনটে চ্যানেল জয়ী কালনার সাঁতারু সায়নী দাস। তাঁর কথায়, ‘‘ওই মহিলা নিশ্চয় কোনও না কোনও ভাবে সাঁতার কেটেছেন। হতে পারে স্রোতের দিকে ভেসেছেন, তাই ওই বয়সে এতটা দূরে চলে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।’’
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ২ ব্লকের নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার নাতজামাই মদন বিশ্বাস জানান, রোজই ভোর ৫টা নাগাদ উঠে আশপাশে ঘুরে ফুল তোলেন লক্ষ্মীদেবী। কখনও ভাগীরথীতে স্নানও করতে যান। এ দিন বেশ কিছুক্ষণ তাঁকে দেখতে না পেয়ে সকাল ৭টা নাগাদ খোঁজ শুরু হয়।
মদনবাবু বলেন, ‘‘ঘাটে গিয়ে দেখি, হাঁটুজলে দিদার লাঠিটা আটকে আছে। তখনই মনে হয়েছিল, বিপদ হয়েছে।’’ আশপাশ থেকে লোকজন জড়ো করে, পুলিশে খবর দেওয়া হয়। ডুবুরি এনেও খোঁজা হয়। কিন্তু কিছু মেলেনি। ঘণ্টা পাঁচেক বাদে তাঁরা খবর পান, পূবর্স্থলীরই এক ট্রলারচালক ও দুই সিভিক ভলান্টিয়ার ভাগীরথী থেকে লক্ষ্মীদেবীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ আনাজবোঝাই ট্রলার নিয়ে নদী পার হচ্ছিলেন কুঠুরিয়া এলাকার বাপন রাজবংশী। তিনিই জলের মধ্যে বৃদ্ধার হাত দেখতে পান। পাড়ে থাকা দুই সিভিক ভলান্টিয়ার তন্ময় পাল এবং পিন্টু সরকার তাঁকে মোবাইলে এলাকার এক বৃদ্ধা ভেসে গিয়েছেন জানিয়ে কাছে গিয়ে ব্যাপারটা দেখতে বলেন। উদ্ধার হন বৃদ্ধা। তবে জল থেকে তোলার পরে, বেশ কিছুটা সময় লাগে তাঁর ধাতস্থ হতে।
বছর দু’য়েক আগে দামোদরে ১২ ঘণ্টা ভেসে হুগলির মুণ্ডেশ্বরী নদীতে উদ্ধার হয়েছিলেন মেমারির ৬২ বছরের বৃদ্ধা তপতী চৌধুরী। ঘটনা শুনে তিনিও বলেন, ‘‘সাঁতার না জানলে এমন কাণ্ড সম্ভব নয়। ওই দিন আমারই মনে হচ্ছিল, আর বোধ হয় ফিরব না। ৮২ বছর বয়সে উনি কী করে পারলেন, কে জানে!’’
পরিবারের দাবি, স্বামী ও জামাইয়ের পরপর মৃত্যুর ঘটনায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন লক্ষ্মীদেবী। কারও সঙ্গে ইদানীং বিশেষ কথা বলেন না। এ দিন বৃদ্ধা বলেন, ‘‘পা হড়কে গিয়েছিল। কিছুটা ভেসে যাওয়ার পরে, হাত-পা নাড়াতে শুরু করি। কতটা গিয়েছি, কত ক্ষণ ও ভাবে ছিলাম, ঠিক বুঝতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy