তৃণমূলে যাওয়া নিয়ে পুরনো টুইট মুছে দেওয়ায় অভিজিৎকে নিয়ে জল্পনা নতুন করে। —ফাইল চিত্র।
জোড়াফুল শিবিরে যাওয়ার জল্পনা খারিজ করে দিয়েছিলেন মাত্র তিন দিন আগেই। জানিয়েছিলেন, যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে কারও সঙ্গে কোনও কথা হয়নি তাঁর। কিন্তু সেই টুইট মুছে দিয়ে এ বার নিজেই দলবদলের জল্পনায় হাওয়া জোগালেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। আর তাতেই কংগ্রেস পরিবারের সদস্য অভিজিৎকে খুব শীঘ্র তৃণমূলে দেখা যেতে পারে বলে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
শুক্রবার সপুত্র মুকুল রায়ের তৃণমূলের ফিরে আসা নিয়ে যখন তোলপাড় বাংলার রাজনীতি, সেই সময় অভিজিতের তৃণমূলে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়। সেই নিয়ে টুইটারে মুখ খোলেন অভিজিৎ। লেখেন, ‘এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলিনি আমি।’ এর পর আলাদা করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কেও সাক্ষাৎকার দেন তিনি। বলেন, ‘‘আমি কংগ্রেসেই আছি। তৃণমূল বা অন্য কোনও দলে যোগ দিচ্ছি বলে যে খবর আসছে, তা সত্য নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে তৃণমূল ভবন থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গিপুরের বাড়িতে বসে রয়েছি। টেলিপোর্ট করে কেউ না পাঠালে আজ বিকেলে কোনও দলেই যোগ দেওয়া সম্ভব নয় আমার পক্ষে।’’
সে যাত্রায় তাঁকে নিয়ে জল্পনা একরকম ধামাচাপা পড়ে গেলেও, তৃণমূলে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি বলে যে টুইট করেছিলেন অভিজিৎ, তা মুছে ফেলে নিজেই নতুন করে জল্পনা উস্কে দিলেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, নিজের পুরনো দাবি খণ্ডন করতেই কি তিন দিন আগের টুইট মুছে ফেললেন অভিজিৎ? তাহলে কি তৃণমূলের সঙ্গে কথাবার্তা এগিয়েছে তাঁর? যদিও তৃণমূলে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না, নিজের টুইটে এমন কোনও দাবি অভিজিৎ করেননি, বরং ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছিলেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
শুধু তাই নয়, টুইট মুছে দেওয়ার পর সম্প্রতি তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে অভিজিতের সাক্ষাৎ নিয়েও নতুন করে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর জঙ্গিপুরে অভিজিতের আনাগোনা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ফের সেখানে তাঁর যাতায়াত বেড়েছে বলে খবর।
গত সপ্তাহে জঙ্গিপুরের দেউলির বাড়িতে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ তথা জেলা সভাপতি আবু তাহের, জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রী আখরুজ্জামান এবং সাবিনা ইয়াসমিন, বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস-সহ তৃণমূলের আরও বেশ কয়েক জন নেতা-নেত্রীর সঙ্গে ‘বিশেষ’ বৈঠকও করেন অভিজিৎ। এর মধ্যে খলিলুরের কাছে ২০১৯-এ পরাজিত হন তিনি। তৃণমূলের এই নেতা-মন্ত্রীরা একসময় কংগ্রেস করতেন, প্রণবের ঘনিষ্ঠও ছিলেন। পরবর্তী কালে জোড়াফুলে যোগ দেন।
ঘটনাচক্রে যে দিন জঙ্গিপুরের বাড়িতে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিজিৎ, সে দিনই মুর্শিদাবাদে বজ্রাঘাতে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান সদ্য নিযুক্ত তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পরই আবু তাহের অভিজিৎকে ফোন করে জঙ্গিপুরে তাঁর বাড়িতে হাজির হন। তাই অভিজিৎকে দলে টানতে অভিষেকের ভূমিকা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকে নেহাত ‘সৌজন্য’ বলে সে সময় ব্যাখ্যা করেন অভিজিৎ।
তবে অভিজিৎ জল্পনা এড়ানোর চেষ্টা করলেও, আবু তাহেরের বক্তব্য ছিল, ‘‘আমরা চাইছি বিজেপি বিরোধী সমস্ত গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ দলে আসুন। তাতে আমাদের দল সমৃদ্ধ হবে। কারণ আগামী দিনে আরও বড় লড়াই রয়েছে। তার জন্য শক্তি সঞ্চয় করা প্রয়োজন।’’ তাই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, ২০১৯-এ অভিজিতের বিরুদ্ধে ‘সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার অভিযোগ আনলেও, এখন তাঁর জন্য দরজা খোলা রাখছে তৃণমূল।
শুধু তাই নয়, অভিজিৎকে জঙ্গিপুর বিধানসভার আসনটি থেকে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে তৃণমূল সূত্রে। নীলবাড়ির লড়াইয়ে সপ্তম দফায় ভোট হওয়ার কথা ছিল জঙ্গিপুরে। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত আরএসপি প্রার্থী প্রদীপ নন্দীর। খুব শীঘ্র জঙ্গিপুরে উপ নির্বাচন হতে চলেছে। এক সময় দীর্ঘদিন কংগ্রেস থেকে জঙ্গিপুরের সাংসদ ছিলেন প্রণব। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর উপনির্বাচন হলে সেখান থেকে সাংসদ হন অভিজিৎ। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, জঙ্গিপুরের সাংসদ পদটি খুইয়েছেন অভিজিৎ। তাই সেখান থেকেই তাঁকে বিধায়ক হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে তৃণমূল। নীলবাড়ির লড়াইয়ে শূন্যে পরিণত হয়েছে কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে দেখতে পারেন অভিজিৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy