নৈহাটির বাড়িতে ভূষণ পাল। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
ভরদুপুরে আগন্তুককে দেখে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় মহিলার। অনুরোধ এল, ‘‘খিদে পেয়েছে, ভাত দে তো!’’ এই শুনে আত্মারাম খাঁচাছাড়া।
হাতে খুন্তি নিয়ে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেন গীতা পাল। পড়শিরা ছুটে আসেন। তাঁদেরও পা কাঁপছে দৃশ্য দেখে। মাসখানেক আগে যে লোকের শ্রাদ্ধে পাত পেড়ে খেয়ে গেলেন, সেই লোকই নাকি হাজির বাড়িতে!
হইচই থামতে অবশ্য বোঝা গেল, বড় একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। যিনি বাড়ি ফিরেছেন, তিনি ভূত নন। ভূষণ। বছর চুয়াত্তরের যে ভূষণ পালের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়েছে ক’দিন আগেই।
শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল নৈহাটির সাহেবকলোনি মোড় এলাকা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ভূষণ থাকতেন ভাইঝি গীতা এবং ভাইপো প্রদীপ পালের বাড়িতে। মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন বৃদ্ধ। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিন কয়েক পরে ফিরে আসেন। মাকে নিয়ে ভূষণের ছেলে ভাস্কর থাকেন মেদিনীপুরে। সেখানেই চাকরি-বাকরি করেন।
১০ নভেম্বর নৈহাটির বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ভূষণ। বেশ কয়েক দিন কেটে গেলেও খোঁজ মেলেনি। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে পরিবার।
৭ জানুয়ারি পুলিশ খবর দেয়, অজ্ঞাতপরিচতয় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। প্রদীপেরা যেন গিয়ে দেহ দেখে আসেন। প্রদীপ-ভাস্কররা দিন দু’য়েক বাদে হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখেন, শীর্ণকায় দেহ। মুখ দেখে পরিচয় বোঝার উপায় নেই। শেষমেশ ডান পায়ের আঙুল দেখে দেহ চিনতে পারা গিয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা। একটি আঙুল অন্য আঙুলের উপরে খানিকটা ওঠা।
দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পুলিশ। সৎকারের পরে নিয়মমাফিক শ্রাদ্ধশান্তি হয়। আর তার পরেই শুক্রবার দুপুরের ঘটনা।
গীতা বলেন, ‘‘আমি দুপুরে রান্না করছিলাম। হঠাৎ জানলার সামনে দেখি, কাকা দাঁড়িয়ে। ভাত চাইল। দেখে আমার তো হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। পরে বুঝলাম ব্যাপারটা আসলে কী!’’ পড়শি সুমিত দাসের কথায়, ‘‘ক’দিন আগে যাঁর শ্রাদ্ধে খেয়ে এলাম, সেই লোকটাই
সশরীরে হাজির, এমন ঘটনা ভাবতেই পারছি না।’’
পুলিশ জানিয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অসুস্থ এক বৃদ্ধকে ভর্তি করিয়েছিলেন স্থানীয় কিছু মানুষ। ৭ জানুয়ারি মারা যান তিনি। পরিচয় জানতে নিয়ম মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হয়েছিল। মৃতের ছবি ফের বিভিন্ন থানায় পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। যদি কোনও দাবিদার খুঁজে পাওয়া যায়, তখন অবশ্য অন্য জটিলতা অপেক্ষা করে আছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তাঁরা।
কী বলছেন ভূষণ নিজে?
তিনি আছেন নিজের খেয়ালেই। এদ্দিন ছিলেন কোথায়? প্রশ্ন শুনে খানিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন। তার পরে বললেন, ‘‘এই একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম।’’ আপনার শ্রাদ্ধ হয়ে গিয়েছে, জানেন কি?
জবাব মিলল, ‘‘তাই নাকি, কই আমাকে তো নেমন্তন্ন করেনি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy