Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Naihati By-Election

নৈহাটির ভোটে ‘খেলা হবে’! তৃণমূল প্রার্থী সনতের পক্ষে বার্তা তিন প্রধানের কর্তার, আরজি কর ক্ষতে প্রলেপ

ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার, মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত এবং মহমেডান কর্তা কামারুদ্দিন বলেছেন, সনতের মতো ফুটবল সংগঠক কম আছেন। বার্তা দিয়েছেন আইএফএ সচিবও।

Officials of East Bengal, Mohun Bagan and Mohammedan Sporting sent messages in support of Naihati\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s TMC candidate Sanath Dey

(বাঁ দিক থেকে) কামারুদ্দিন, দেবব্রত সরকার, দেবাশিস দত্ত এবং তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৭
Share: Save:

নৈহাটি বিধানসভার আসন্ন উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে-র সমর্থনে স্পষ্ট বার্তা দিলেন কলকাতার তিন প্রধান ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান স্পোর্টিংয়ের অন্যতম প্রধান কর্তারা। একই সঙ্গে রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্তও সনতের ‘খ্যাতি’ নিয়ে সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, তিন ক্লাব এবং আইএফএ কর্তাদের সেই বার্তা একত্রিত করে সোমবার দুপুরে এক্স হ্যান্ডলে সেগুলি পোস্ট করেছে তৃণমূলই।

এমনিতে খেলা এবং রাজনীতির সম্পর্ক নিবিড়। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সব রাজ্যেই। বিভিন্ন জাতীয় ক্রীড়া সংস্থায় তার প্রভাবও থেকেছে। এখনও থাকে। কলকাতা ময়দানের তিনটি বড় ক্লাবের সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সুসম্পর্ক’ রয়েছে। ক্লাবকর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। আইএসএল খেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে তিনটি ক্লাবের কর্তারা মমতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে থাকেন। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত সেই ‘সম্পর্ক’ সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিল। সরাসরি শাসকদলের এক প্রার্থীকে ভোটে সমর্থনের কথা তিনটি ক্লাব বা তাদের কর্তারা এর আগের কোনও ভোটেই করেননি। যদিও ইস্টবেঙ্গলের কর্তা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, এমন নজির আছে। তবে তিন প্রধানের কর্তাদের একযোগে সমর্থন দেওয়ার আবেদনের নজিরটি সাম্প্রতিককালে নেই। বস্তুত, ময়দান এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িতেরা মনে করতে পারছেন না, এমন ঘটনা এর আগে কলকাতা ময়দানে ঘটেছে কি না।

ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার, মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত এবং মহমেডান কর্তা কামরুদ্দিন বলেছেন, সনতের মতো ফুটবল সংগঠক কম রয়েছেন। তিনটি ক্লাব যখনই নৈহাটিতে খেলতে গিয়েছে, তখনই যে কোনও সমস্যায় মুশকিল আসান করেছেন সনৎ। মোটামুটি তিন কর্তাই একই সুরে সনতের ‘খ্যাতি’র কথা জানিয়েছেন। আইএফএ সচিব অনির্বাণও জানিয়েছেন, ‘ফুটবলের স্বার্থে’ সনতের ভূমিকার কথা। ওই ভিডিয়োতেই একেবারে শেষে প্রাক্তন ফুটবলার সংগ্রাম মুখোপাধ্যায় সরাসরি সনৎকে বিপুল ভোটে জেতানোরও আবেদন জানিয়েছেন ।

নৈহাটি স্টেডিয়ামে কলকাতা লিগ-সহ আইএফএ-র অনেক টুর্নামেন্টের খেলা হয় ইদানীং। মাঠ-ময়দানের সঙ্গে জড়িতদের একাংশ বলেন, ওই স্টেডিয়ামের উন্নতির স্বার্থে নৈহাটির তৃণমূল নেতা তথা অধুনা উপনির্বাচনে প্রার্থী সনতের ভূমিকা ছিল। ভোটের আগে সেই সনতের হয়ে বার্তা দিয়েছেন তিন প্রধানের কর্তা এবং আইএফএ সচিব। সেই বার্তার সুবাদে অনির্বাণ, দেবব্রত, দেবাশিস এবং কামরুদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সনৎও।

কেন এমন ‘বেনজির’ ঘটনা, তার ময়নাতদন্তে নেমে ময়দানি রাজনীতির সঙ্গে জড়িতেরা মনে করছেন, আরজি কর আন্দোলন এবং তজ্জনিত সিদ্ধান্তে বড় ম্যাচ বাতিল করার ‘ক্ষত’ মেরামত করতেই এই যৌথ বার্তা। সেই ‘ইতিবাচক’ বার্তা ক্লাবের গণ্ডি ছাড়িয়ে জুড়ে নিয়েছে আইএফএ-র মতো রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থাকেও।

আরজি কর আন্দোলনে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহমেডান সমর্থকেরা একসঙ্গে রাস্তায় নেমেছিলেন। ‘তিলোত্তমার’ পাশে ময়দান নামক মঞ্চও তৈরি হয়েছে। আরজি কর আবহেই গত ১৮ অগস্ট ডুরান্ড কাপে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের বড় ম্যাচ করার অনুমতি বাতিল করেছিল বিধাননগর কমিশনারেট। কারণ, দু’দলের সমর্থকেরা ঠিক করেছিলেন, মাঠে এবং গ্যালারিতে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হবে। ম্যাচ বাতিল হওয়ার পর বিকালে যুবভারতীর সামনে তিন প্রধানের সমর্থকেরা জমায়েত হয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। তাতে পুলিশের লাঠি চলেছিল। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল ইএম বাইপাস। সেই ঘটনাও কলকাতা ফুটবলের ইতিহাসে সাম্প্রতিক কালে ঘটেনি। বড় ম্যাচ বাতিল করায় পুলিস-প্রশাসনের সমালোচনা হয়েছিল। সেই ক্ষত মেরামত করতেই তৃণমূল তিন প্রধানের কর্তাকে দিয়ে সনতের পক্ষে বার্তা দেওয়ানোর চেষ্টা করেছে বলে অনেকের বক্তব্য। সনৎ নিজে অবশ্য সে সব মানতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া বা ক্ষত মেরামত করার বিষয় নেই। আরজি করের ঘটনা একটি সামাজিক অপরাধ। তার বিরুদ্ধে আমরাও রাস্তায় নেমেছি।’’

এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক আকচাআকচিও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়াকে। শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন, এই নির্বাচনী ঘটনায় নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। আইএফএ-এর মতো সংস্থার সচিব কী ভাবে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সমর্থনে বার্তা দিতে পারেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। পাল্টা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘রাজনীতি করতে যখন সমর্থকদের জার্সি পরিয়ে নামানো হয়েছিল, তখন দোষ হয়নি? ফুটবলের প্রসারের স্বার্থে সনতের ভূমিকার যদি প্রশংসা করে থাকেন তিন প্রধানের কর্তারা, তাতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নেই।’’

তিনটি বড় ক্লাব-সহ কলকাতার বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে তৃণমূল নেতা বা মুখ্যমন্ত্রী মমতার পরিবারের সদস্যদের যোগ নিয়ে বিরোধীরা প্রায়ই সমালোচনা করেন। ক্লাবের কর্তার পদে বৃত রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে ফুটবলার বা প্রাক্তন ফুটবলারদের ব্যবহার করা নতুন নয়। ২০০৬ সালের ভোটে ইস্টবেঙ্গলের তৎকালীন এক কর্তা সিপিএমের হয়ে লড়েছিলেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে সেই সময়ের ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের নিয়ে গিয়েছিলেন। ক্রীড়া সংস্থার রাজনীতিতে রাজনীতিকদের জড়িয়ে পড়াও নতুন নয়। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যেমন জড়িয়ে পড়েছিলেন সিএবি নির্বাচনে। জগমোহন ডালমিয়াকে হারাতে প্রকাশ্যেই কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের পক্ষ নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। যদিও ডালমিয়া হারেননি। কিন্তু তা-ও ছিল ময়দানের একটি সংস্থার নির্বাচন। তার পর থেকে এ বার উপনির্বাচনে তৃণমূলের সনতের হয়ে বার্তা দিলেন কলকাতার তিন প্রধান ক্লাব এবং আইএফএ সচিব। সাম্প্রতিক সময়ে যা নজিরবিহীন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy