Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

আর যাব না রাজ্য ছেড়ে

দু’বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়েছিল। সাকিন মালদহ জেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত।

 ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ০৬:১৯
Share: Save:

মহারাষ্ট্রের মুলুন্দ থেকে মালদহের কালিয়াচক। দূরত্ব দু’হাজার কিলোমিটারের বেশি। কী ভাবে যে এতটা পথ গাড়িঘোড়া ছাড়া এলাম, এখনও ভাবতে ভয় লাগে! কেন এলাম? না এলে আমার দিন চলতো না। হাতে টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল। না খেতে পেয়ে মরতাম হয়তো।

দু’বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়েছিল। সাকিন মালদহ জেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। সেটা কালিয়াচক-২ ব্লকে। সেখানে তখন যে দিনমজুরির কাজ পেয়েছি, তাতে টেনেটুনে দিন চলতো। কিন্তু মাস পাঁচেক আগে বিয়ে করার পর হাঁড়ি যেন আর চড়ছিলই না। খোঁজখবর করে পাড়ি দিলাম মুলুন্দে। বহুতল নির্মাণে রাজমিস্ত্রির কাজ জুটে গিয়েছিল সেখানে। যে সংস্থার হয়ে কাজ করতাম, তাদের দেওয়া ঘরেই আরও দশ জনের সঙ্গে ঠাঁই মিলেছিল। খাবার খরচ নিজের। মাসে যা রোজগার হত, তার অর্ধেক টাকা মাকে পাঠিয়ে দিতাম। ভেবেছিলাম ইদে বাড়ি ফিরব। মুম্বই থেকে বাজার করে নিয়ে যাব মা আর বৌয়ের জন্য।

কিন্তু লকডাউন সব হিসেব উল্টে দিল। বন্ধ হয়ে গেল নির্মাণ কাজ। মহারাষ্ট্রে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ল করোনা। তাতেও ঘরে আটকে থেকে জমানো সামান্য টাকা দিয়ে কয়েক দিন চালিয়েছি। বাড়িতে কিছু পাঠাতে পারিনি এর মধ্যে। সঙ্গী শ্রমিকদেরও এক অবস্থা। সকলেই প্রায় কপর্দকশূন্য। তাই ধারও মিলছিল না। এ দিকে বাড়িতে ফোন করলেই মা আর স্ত্রীর কান্না। তাঁরাও তো একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন।

কিন্তু ফিরব কী ভাবে? বাস বা রেল, সবই বন্ধ। শেষে ঠিক করলাম, সাইকেলে করেই ফিরব। মা ও স্ত্রী মিলে এলাকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার করে আমার অ্যাকাউন্টে জমা দিলেন। নাসিক থেকে তিন হাজার টাকায় পুরনো সাইকেল কিনলাম। তাতে চেপে রওনা দিলাম। পকেটে রয়েছে বাকি দু’হাজার টাকা।

চলতে চলতে কড়া রোদে পুড়েছি। ভিজেছি বৃষ্টিতে। কোনও রাতে পেট্রল পাম্প, কোনও রাতে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানের বারান্দায় শুয়ে পড়েছি। কোনও দিন আবার গাছের নীচেও। পুলিশ অনেক জায়গায় আটকেছে। কিন্তু তাদের হাতে-পায়ে ধরে, মা-বৌয়ের কথা বলে অনুমতি পেয়েছি এগিয়ে যাওয়ার। মুলুন্দ থেকে মধ্যপ্রদেশ। তার পর উত্তরপ্রদেশ, বিহারের বিভিন্ন এলাকা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত রওনার ১৪ দিন পর বাড়িতে ফিরি। কী যে স্বস্তি, তা বলে বোঝাতে পারব না। তার আগে অবশ্য বাঙ্গিটোলা ব্লক হাসপাতালে গিয়ে স্ক্রিনিং করেছি। লালারসও নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাঠানো হয়েছে হোম কোয়রান্টিনে। স্ত্রীকে ১৪ দিনের জন্য বাবার বাড়িতে পাঠিয়েছি।

ঠিক করেছি, আর মুলুন্দে যাব না। এখানে যে কাজ পাব, কষ্ট হলেও তাতেই সংসার টেনেটুনে চালিয়ে নেব। প্রয়োজনে নুন-ভাত খাব সকলে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy