Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Nutrition defficiency

Nutritional Deficit: তালা পড়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে, রাজ্য জুড়ে ক্রমেই বাড়ছে শিশুদের অপুষ্টি

তৃতীয় ঢেউয়ের আগে যাদের নিয়ে সব থেকে বেশি চিন্তা, সেই শিশুদের অপুষ্টি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আর এর মূলে মূলত অঙ্গনওয়াড়িতে তালা-চাবি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

‘রং বদলে’ যাচ্ছে শিশুদের। ‘সবুজ’ থেকে কেউ হয়েছে ‘লাল’, কেউ আবার ‘হলুদ’।

‘রঙের এই রকমফেরই বলে দিচ্ছে, রাজ্য জুড়ে শিশুদের একাংশ এখন অপুষ্টির অতলে। করোনা যুঝতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বারবার বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ তৃতীয় ঢেউয়ের আগে যাদের নিয়ে সব থেকে বেশি চিন্তা, সেই শিশুদের অপুষ্টি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আর এর মূলে মূলত অঙ্গনওয়াড়িতে তালা-চাবি।

বয়স অনুপাতে ওজন ও উচ্চতার নিরিখে পুষ্ট-অপুষ্ট শিশু চিহ্নিত হয় রং দিয়েই। ‘লাল’ হল চরম অপুষ্ট, ‘হলুদ’ মাঝারি অপুষ্ট আর ‘সবুজ শিশু’ হল স্বাভাবিক। করোনা-কালে গত বছর মার্চ মাস থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকায় এই পুষ্টি নিরূপণ প্রক্রিয়াটাই বন্ধ ছিল। কোভিড পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় মাস দুয়েক হল বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের ওজন নেওয়া শুরু করেছেন। তাতেই দেখা যাচ্ছে, নতুন করে অপুষ্ট হয়েছে বহু শিশু।

সরকারি ব্যবস্থায় ছ’মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের রান্না করা পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয় অঙ্গনওয়াড়ি থেকে। অন্তঃসত্ত্বা ও শিশু জন্মানোর পরে ছ’মাস পর্যন্ত প্রসূতিরাও খাবার পান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর মার্চ থেকেই বন্ধ রাজ্যের সব অঙ্গনওয়াড়ি। মাঝে কয়েক মাস খাদ্যসামগ্রী বিলিও বন্ধ ছিল। এখন অবশ্য অভিভাবকদের মাসে মাসে ডেকে চাল, ডাল, আলু দেওয়া হচ্ছে। ডিম, সয়াবিনের মতো পুষ্টিকর খাবার মিলছে না। আর যে চাল-ডাল মিলছে, আর প্রান্তিক সব পরিবারে তা ভাগ হয়ে যাচ্ছে বাকিদের সঙ্গে। ফলে, পুষ্টির ঘাটতি হচ্ছে বিস্তর।

পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম হোক বা পশ্চিম বর্ধমান কিংবা বীরভূম— ছবিটা সর্বত্র একই। পূর্ব বর্ধমানে করোনার আগে ২৭৩ জন অপুষ্ট শিশু ছিল। গত মাস থেকে ওজন নেওয়া শুরু হতে দেখা যাচ্ছে, অনেকেরই ৫০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজন কমেছে। চরম অপুষ্ট অর্থাৎ 'লাল' শিশুও বেড়েছে। আইসিডিএস-প্রকল্পের জেলা আধিকারিক পাপিয়া হালদার চক্রবর্তী বলেন, "রাজ্যে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।"

বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের চারটি ব্লকের মধ্যে রাইপুরে ৮২ জন, রানিবাঁধে ৭৪ জন, সারেঙ্গায় ৭৭ জন ও সিমলাপালে ৭ জন অপুষ্ট শিশুর সন্ধান মিলেছে। হিড়বাঁধ ব্লকে অপুষ্ট শিশু সর্বাধিক। স্থানীয় নন্দা অঙ্গনওয়াড়ির অধীন বছর আড়াইয়ের সোমা মাজি অপুষ্ট শিশুর তালিকায় রয়েছে। অথচ করোনার আগে সোমা অপুষ্ট ছিল না। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লকে শুকজোড়া তালতলা অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী অপর্ণা ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘করোনার আগে আমার কেন্দ্রে হলুদ শিশু ছিল না। এক যমজ শিশু লাল ছিল। কিন্তু গত জুনে চারটি শিশু লাল, চারটি শিশু হলুদ হয়েছে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলায় অপুষ্ট শিশুদের জন্য একাধিক ‘পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র’ স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে চলে। সেখানেও পুরো প্রক্রিয়া থমকে। হুগলিতে শুধু গোঘাট-২ ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতে চরম অপুষ্ট শিশু চিহ্নিত হয়েছে ৭২ জন। কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনাতেও বাড়ছে অপুষ্টিতে ভোগা শিশু।

কোচবিহারের শিতলখুচির ভাওর থানা গ্রামের দশ বছরের জয়শ্রী অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। তার বাবা ভুটভুটি চালক জয়দেব অধিকারী বলেন, “মেয়েটাকে রোজ ফল খাওয়াতে বলেছিল। পারি না।’’ মালদহের হবিবপুরের অমরপুর গ্রামে মা বাহা টুডুর সঙ্গে থাকে রুতিমা। বাহা বলেন “অঙ্গনওয়াড়ির চাল দিয়ে আমাদের তিন চারদিন চলে। মেয়েটাকে ভাল খাওয়াতে পারি না।”

শুধু কী শিশু! হবু মায়েরাও পুষ্টিতে বঞ্চিত। ফলে, বহু শিশু জন্মাচ্ছেই কম ওজন নিয়ে। সুস্থ নবজাতকের ওজন ২.৫ কেজি বা তার বেশি হওয়া উচিত। অথচ ২০২১ শুরুর আগেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ২.৫ কেজির নিচে প্রায় ৭৭ শতাংশ শিশু জন্মেছে। তাদের মধ্যে ১২.৫ শতাংশের ওজন এক কেজিরও নীচে। এই মুহূর্তে ওই হাসপাতালের শিশু বিভাগে যে ৬৭ জন ভর্তি আছে তাদের ৪৫ জনই কম ওজনের। হাসপাতালের ‘মাতৃ মা’র বিভাগীয় প্রধান ভাস্করানন্দ শীলও বলছেন, “কম বয়সে মা হওয়ার পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের উপযুক্ত পুষ্টির অভাব কম ওজনের শিশু জন্মানোর অন্যতম কারণ।”

অন্য বিষয়গুলি:

Nutrition defficiency mal nutrition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy