Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Patients

হাসপাতালে অন্য রোগী এত কম! কাঠগড়ায় সরকারি নীতি

স্বাস্থ্য দফতরের খবর, গত ডিসেম্বরে এসএসকেএম-এ মোট রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৭৭৭২। দৈনিক গড় ছিল প্রায় ২৫০। সোমবার দুপুর ২টো পর্যন্ত সেখানে নতুন ১৩০ জন ভর্তি হয়েছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০৫:০৩
Share: Save:

হাসপাতালের বহির্বিভাগ-অন্তর্বিভাগে করোনা-আক্রান্ত নন— এমন রোগীর সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যাওয়ায়, অশনিসঙ্কেত দেখছেন সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক-প্রশাসকদের একাংশ।

স্বাস্থ্য দফতরের খবর, গত ডিসেম্বরে এসএসকেএম-এ মোট রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৭৭৭২। দৈনিক গড় ছিল প্রায় ২৫০। সোমবার দুপুর ২টো পর্যন্ত সেখানে নতুন ১৩০ জন ভর্তি হয়েছেন। এনআরএস-এ ১২৯ জন। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ৯৫। এনআরএস-এর জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, করোনার আগে শুধু জরুরি বিভাগে প্রতি দিন গড়ে ৮০০ রোগী আসতেন। প্রায় ১৯০০ শয্যার হাসপাতালে সোমবারের পরিসংখ্যান বলছে, মোট চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৭১৪। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এক প্রশাসক-চিকিৎসকেরও বক্তব্য, করোনার আগে প্রতি দিন ১১০০-১২০০ রোগী ভর্তি থাকতেন। এখন তা কমে ৬০০-৭০০। চিকিৎসক-প্রশাসকদের একাংশের মতে, সংক্রমণের ভয়ে অনেকে সরকারি হাসপাতালে আসছেন না। ট্রেন বন্ধ থাকায় জেলার রোগীর সংখ্যা কমেছে। তবে চিকিৎসকদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, এই বিপুল সংখ্যক মানুষের যে ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা তাঁদের এলাকায় সহজলভ্য এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। তা হলে জেলার হাসপাতাল থেকে প্রতি দিন শহরে শয়ে শয়ে রোগী রেফার
করতে হত না।

বহির্বিভাগের ছবিও এক। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সোমবার নতুন-পুরনো মিলিয়ে এসএসকেএম-এর বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১৪৫ জন। এনআরএস-এ ১২২৮। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ১২৭৮। ঘটনাচক্রে, সেই দুই হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী সংখ্যা কম, যেখানে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে। এসএসকেএম-এ যা নেই।

চিত্তরঞ্জন সেবা সদনের এক প্রশাসক-চিকিৎসক জানান, করোনার আগে দৈনিক গড়ে ৩০-৩৫ জন প্রসূতি ভর্তি হতেন। তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১৫। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক প্রশাসক-চিকিৎসক জানান, কোভিড হাসপাতালে মেডিসিনের বহির্বিভাগে রোগী দেখাতে এসেছিলেন ৮১ জন। রেডিয়োথেরাপিতে ৪১, ক্যান্সার ডে-কেয়ারে ১৯ জন।

এই পরিস্থিতির জন্য সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজকে কোভিড চিকিৎসায় যুক্ত করার নীতিকে দুষছেন সরকারি হাসপাতালের প্রশাসক-চিকিৎসকদের একাংশ। স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইট বলছে, পাঁচশো শয্যার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রতি দিনই অর্ধেক বেড খালি রয়েছে। মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, এম আর বাঙুরে ৬৭০ শয্যার মধ্যে ৩৬৬টি খালি। রাজারহাট সিএনসিআইয়ে ৪০০ শয্যার মধ্যে ২৫১টি ফাঁকা। চিকিৎসক-প্রশাসকদের একাংশের প্রশ্ন, যা শয্যা আছে তাই যখন ভর্তি হচ্ছে না তখন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজকে কোভিড হাসপাতাল করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো কেন করা হল!

তবে এস‌এসকেএম-এর মেডিসিন বিভাগের প্রধান তথা রাজ্যের করোনা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ বলেন, ‘‘মহামারির মোকাবিলায় যে প্রস্তুতি প্রয়োজন তা-ই করা হচ্ছে। যে রোগীরা কোভিড-আক্রান্ত নন, তাঁরাও যাতে পরিষেবা পান তা দেখা হচ্ছে। যাঁরা খুব অসুবিধায় রয়েছেন, তাঁরা ঠিক‌ই হাসপাতালে আসছেন।’’

‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’-এর সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘অন্য রোগীরা হাসপাতালে আসতে ভয় পেলে তা দূর করার দায়িত্ব সরকারেরই।’’ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক সজল বিশ্বাসের কথায়, ‘‘কোভিড রোগীদের রক্ষা করতে গিয়ে অন্য রোগীদের জন্য চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যায় ঘাটতি হচ্ছে। পরিকল্পনা ছাড়া এগোলে অচিরেই অসংখ্য মানুষ বিনা চিকিৎসার শিকার হবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Patients Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy