ফাইল চিত্র।
আরও নানা বিষয়ের মতো করোনার ভুয়ো ভ্যাকসিন শিবির নিয়েও নিত্যদিন পরস্পরের দিকে দোষারোপের আঙুল তুলে চলেছে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস। আবার, রাজ্য পুলিশ জাল টিকার তদন্ত করা সত্ত্বেও আগামী সপ্তাহে আদাজল খেয়ে ঝাঁপাতে চলেছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও। এর আগে কলকাতায় ঘটে যাওয়া এমন কোনও ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি।
তা হলে এ বার ইডি কোমর বাঁধছে কেন? ইডি-র দাবি, ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং’ আইন অনুযায়ী দেশের যে-কোনও প্রান্তে যে-কোনও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তারা তদন্ত করতে পারে। সেই ক্ষমতা তাদের দেওয়া আছে। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, যে-হেতু কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের দ্বৈরথ এখন চরমে, তাই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের ঘনিষ্ঠদের এই তদন্তের আওতায় আনার চেষ্টা করছে কেন্দ্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, জাল টিকার তদন্ত সম্পর্কে ইডি ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের কাছে সবিস্তার তথ্য চাইলেও তাদের হাতে এসেছে শুধু ‘স্টেটাস রিপোর্ট’। যার অর্থ, ভুয়ো ভ্যাকসিনের ব্যাপারে এ-পর্যন্ত কাদের কাদের জেরা ও কাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, কাদের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে— তার একটি তালিকা। ইডি জানাচ্ছে, সবিস্তার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে তারা। সেই রিপোর্ট পেলেই এই মামলায় কোন কোন ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির সংস্রব আছে, তার খোঁজখবর করার কাজ শুরু হবে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসারদের দাবি, ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ড নিয়ে প্রাথমিক খোঁজখবর করে তাঁরা জেনেছেন, মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে কিছু ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির যোগাযোগ স্পষ্ট। ইডি-র অভিযোগ, কোনও এক চিকিৎসকের হাত ধরে পুরসভায় পা রেখেছিল ওই প্রতারক। তার পরে পুরকর্তাদের একাংশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে প্রতারণার জাল বিছিয়েছিল দেবাঞ্জন। ওই যুবকের পাশাপাশি সেই সব ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিরাও এই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে উঠতে পারেন বলে দাবি করেছেন ইডি-র তদন্তকারীরা।
অভিযোগ উঠছে, ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন সমাজের এক শ্রেণির ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির মদত পেত। কিন্তু অদ্যাবধি সেই ‘প্রভাবশালীদের’ কারও নামই পুলিশের মুখ থেকে উঠে আসেনি বা এমন কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানা যায়নি। এই কাণ্ডে যুক্ত সন্দেহে এখনও পর্যন্ত যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা কোনও না-কোনও ভাবে দেবাঞ্জনের বেআইনি কাজে সাহায্য করতেন বলে অভিযোগ। তাঁদের কেউ সেই অর্থে প্রভাবশালীদের মধ্যে পড়েন না।
ঠিক কার বা কাদের মদতে দেবাঞ্জনের এত রমরমা, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। দেবাঞ্জনের নীল বাতির গাড়ি কলকাতা পুরসভার অভ্যন্তরে কেন ভিআইপি পার্কিংয়ে জায়গা পেত, দেবাঞ্জন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে দুই লরি ভর্তি মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিনামূল্যে দিয়েছিল, কোন দাপুটে পুরকর্তা দেবাঞ্জনের কাছ থেকে ১০ হাজার পিপিই কিট নিয়েছিলেন— এ-সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন তদন্তকারীরা।
আজ, সোমবার পুলিশি হেফাজত থেকে দেবাঞ্জনকে আবার আদালতে পেশ করার কথা। এবং কাল, মঙ্গলবার ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট চেয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy