Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Jyotipriyo Mallick

রহস্যময় মেরুন ডায়েরিতে লেখা রয়েছে ‘বালুদা’, কোটি কোটি টাকার লেনদেন! দাবি ইডি সূত্রে

রেশন বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। গত ১৪ অক্টোবর ওই দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগে ব্যবসায়ী বাকিবুরকে গ্রেফতারের পরে উঠে আসে জ্যোতিপ্রিয়ের নাম।

Jyotipriya Mallick

রাজ্যের বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:২৩
Share: Save:

পরতে পরতে দুর্নীতির অভিযোগ। ভুয়ো সংস্থার নামে বেআইনি লেনদেন, সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে তা শোধ না-করা, কয়েক মাসের মধ্যে কোটি টাকা ব্যাঙ্কে জমা করা, এই রকম অজস্র অভিযোগকে সামনে রেখে রাজ্যের বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় হেফাজতে নিল ইডি।

ইডি-র তদন্তে উঠে এসেছে একটি মেরুন ডায়েরির কথা। আদালতে ইডির দাবি, সেই ডায়েরির উপরে লেখা রয়েছে ‘বালুদা’। উল্লেখ্য, জ্যোতিপ্রিয়ের ডাক নাম বালু এবং তিনি সেই নামেই বেশি পরিচিত। ইডি দাবি করেছে, জ্যোতিপ্রিয়ের এক ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই ডায়েরি, সেখানে বিভিন্ন তারিখের পাশে প্রচুর টাকা লেনদেনের তথ্য রয়েছে। সেই ডায়েরিতে কাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে এবং কাদের টাকা দেওয়া রয়েছে, তার উল্লেখও রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রের দাবি।

এর আগে ওই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে। তিনি এখন ইডি হেফাজতে। মন্ত্রীকে বাকিবুরের সামনে বসিয়ে জেরা করলে আরও নতুন তথ্য পাওয়ার আশায় তদন্তকারীরা। যদিও শুক্রবার সন্ধ্যায় মন্ত্রীকে ভর্তি করানো হয়েছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বেরোলেই তাঁকে জেরা করতে পারবেন তদন্তকারীরা।

ইডির অভিযোগ, ২০১৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নিয়মমাফিক যে হলফনামা জমা দিতে হয়েছিল মন্ত্রী তথা নির্বাচনে প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয়কে, সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা রয়েছে। ইডির দাবি, তার এক বছরের মধ্যে মন্ত্রীর স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ছ’কোটি টাকা জমা পড়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে কী করে এত টাকা এল, তার উত্তর খুঁজতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

শুক্রবার এই রকম বেশ কিছু তথ্য আদালতের সামনে পেশ করেছেন ইডির আইনজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ, রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় ওরফে বালু। ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। পরে ২০২১-এ তাঁকে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হলেও খাদ্য দফতরের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁকে রেখে দেওয়া হয়েছিল, যেখান থেকে প্রচুর টাকার লেনদেন হত।

রেশন বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। গত ১৪ অক্টোবর ওই দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগে ব্যবসায়ী বাকিবুরকে গ্রেফতারের পরে উঠে আসে জ্যোতিপ্রিয়ের নাম। তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, হেফাজতে নিয়ে বাকিবুরকে জেরা করতেই তিনি বহু তথ্য দেন ইডিকে। যার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মন্ত্রীকে। উল্লেখ্য, রাজ্যের বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকেও সম্প্রতি জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা।

আদালতে প্রাথমিক ভাবে ইডির অভিযোগ, রেশন সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করতেন বাকিবুর। সেই বিক্রির টাকা পাঠাতেন জ্যোতিপ্রিয়কে। ইডির দাবি, ২০১৬-এর নভেম্বর থেকে ২০১৭-র মার্চ পর্যন্ত, মাত্র পাঁচ মাসে বালুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬.০৩ কোটি টাকা জমা করা হয়েছে। আর ২০১৬-র নভেম্বর মাসে মন্ত্রীর মেয়ে প্রিয়দর্শিনীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৩.৭৯ কোটি টাকা। প্রিয়দর্শিনী এখন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব। কয়েক মাস আগেই তাঁর নিয়োগ হয়েছে।

ইডি জানিয়েছে, তদন্তে বাকিবুর এবং এক ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা সামনে এসেছে। সেখানে মল্লিক পরিবারের টিকিট বুকিং সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে। মন্ত্রী-পরিবারের উড়ানের টিকিট কেটেছিলেন বাকিবুর। তদন্তকারী সংস্থাটির দাবি, পরে ওই টিকিট বাতিল হয়ে যায় এবং তার জন্য গুনাগারও দিতে হয় বাকিবুরকে।

এ দিন আদালতে ইডির আইনজীবীদের দাবি, মন্ত্রীর স্ত্রী মণিদীপা মল্লিক ও মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিকের নামে শ্রী হনুমান রিয়েলকন প্রাইভেট লিমিটেড, গ্রেসিয়াস ইনোভেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড এবং গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড নামে যে তিনটি সংস্থা রয়েছে যেখানে একাধিক ভুয়ো সংস্থা মারফত ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগও হয়েছে। এ-ও দাবি, জ্যোতিপ্রিয়ের পরিবারের সদস্যদের সংস্থার সঙ্গে তাঁর আর্থিক লেনদেন হয়েছিল বলে জেরায় কবুল করেছেন বাকিবুর।

এ দিন তথ্য দিয়ে আদালতে ইডি জানিয়েছে, ২০২২ সালে ওই তিন সংস্থার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে এবং সংস্থাগুলি বন্ধ করে যে ২০ কোটি ২৪ লক্ষ ১৬ হাজার ১৯৪ টাকা পাওয়া যায়, তা বাকিবুরের শ্যালক অভিষেক বিশ্বাসের নামে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আদালতে ইডির দাবি, বৃহস্পতিবার মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশির সময়ে তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ের বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে তাঁরা প্রথমে ওই তিন সংস্থার সঙ্গে তাঁদের কোনও রকম যোগাযোগের কথা মানতে চাননি। তল্লাশিতে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে ওই তিনটি সংস্থার স্ট্যাম্প উদ্ধার হলে তাঁরা জানান, অভিজিৎ দে-র নির্দেশেই ওই তিনটি সংস্থার নথিতে তাঁরা সই করেছেন। অভিজিৎ জ্যোতিপ্রিয়ের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করতেন।

ইডির এ-ও দাবি, ওই সংস্থাগুলির মাধ্যমে ১২.০৬ কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি অনু‌যায়ী, বাকিবুর জেরায় বলেছেন, ঋণের আকারে সেই টাকা গিয়েছে জ্যোতিপ্রিয়ের কাছে। সেই ঋণ শোধ হয়নি আজও।

অন্য বিষয়গুলি:

Jyotipriyo Mallick TMC arrest ED
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy