কোচবিহারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
শুধু প্রশাসনিক সফর নয়, উত্তরবঙ্গে দলের অন্দরমহলটাও গুছিয়ে দিয়েই কলকাতা ফিরবেন তিনি। সোমবার বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহার শহরে দলীয় সভা থেকে এ দিন এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জী) ইস্যুতে বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করলেন তিনি। নাম না করে আক্রমণ করলেন আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল এমআইএম-কে। আর গোষ্ঠী কোন্দলের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে এলেন নিজের দলের জেলা নেতৃত্বকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান যে, এখন থেকে রাজ্যের যে প্রান্তেই যাবেন, সেখানেই প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচিতেও সময় দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তেমনই এক কর্মসূচিতেই কোচবিহারে মমতা এ দিন তীব্র আক্রমণ করেন বিজেপি-কে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর এবং মালদহের সব আসনে এ বার লোকসভা নির্বাচনে হারতে হয়েছে তৃণমূলকে। তা নিয়ে আক্ষেপ এ দিন গোপন রাখেননি মমতা। তিনি দাবি করেন, ৩৪ বছরের বাম জমানায় কেউ উত্তরবঙ্গের দিকে ‘ফিরেও তাকাননি’। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গত ৯ বছরে তাঁর সরকার কোন কোন উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে, নিজের ভাষণে এ দিন তার তালিকা তুলে ধরেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। তার পরেও বিজেপির ‘অপপ্রচারে’ অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে মন্তব্য করে এ দিন তিনি আক্ষেপ ব্যক্ত করেন।
মমতা এ দিন বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যক্রমে অপপ্রচারের কাছে অনেকেই মাথা নত করে দিয়েছেন। রাতের অন্ধকারে অপারেশনটা কী ভাবে টাকা দিয়ে করেছে, তা ভাবতেই পারিনি।’’ অসম থেকে টাকা ঢোকানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগানো হয়েছে— এমন অভিযোগও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন করেন।
আরও পড়ুন: নতুন জটিলতা! জোট নিয়ে কথাই হয়নি, সনিয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বললেন পওয়ার
এনআরসি প্রসঙ্গেও এ দিন ফের সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে মানুষকে অধিকার দেবে না, কিন্তু ভোটে জেতার জন্য টাকা বিলি করবে।’’ এনআরসি-র আগে যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করা হচ্ছে, সেই বিলকেও এ দিন কটাক্ষ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘ওটা আসলে আর একটা খুড়োর কল। নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে সবাইকে ৬ বছরের জন্য বিদেশি বানিয়ে দেবে।’’
শুধু ‘টাকা বিলি’ বা এনআরসি ইস্যুতে নয়, সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির অভিযোগ তুলেও এ দিন বিজেপি-কে ফের বিঁধেছেন মমতা। গোটা বাংলায় বিজেপি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিতে চাইছে বলে বলে মমতা অভিযোগ করেন। সেই প্রসঙ্গেই নাম না করে আক্রমণ করেন হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল এআইএমআইএম-কে (অল ইন্ডিয়া মজলিশ-এ ইত্তেহাদুল মুসলিমিন)। তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘হিন্দুদের মধ্যে যেমন অনেকে উগ্রবাদী রয়েছেন, তেমন সংখ্যালঘুদের মধ্যেও রয়েছেন।’’ সেই উগ্রবাদীদের নিয়েই একটি দল বাংলার রাজনীতিতে ঢুকতে চাইছে বলে মমতা ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘‘তাদের বাড়ি এখানে নয়, তাদের আসল বাড়ি হায়দরাবাদে। মনে রাখবেন, ওরা বিজেপির টাকা খায়।’’ বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে এমআইএম বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে বলে মমতা ইঙ্গিত দেন। ওই দলের ‘অপপ্রচারে’ সাড়া না দেওয়ার আহ্বানও জানান তৃণমূল চেয়ারপার্সন।’’
এর পরেই ছিল নিজের দলের প্রতি সতর্কবার্তা। উত্তরবঙ্গে এখন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলর, বিধায়ক, সাংসদরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করছেন বলে এ দিন মন্তব্য করেন দলনেত্রী। এই সমন্বয় অনেকটা আগে থেকে দেখা গেলে বিজেপি দাঁত ফোটাতে পারত না— দলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: হাতে ড্রোন, বিদেশি অস্ত্র, ক্ষত সারিয়ে মাওবাদীরা বড় হামলায় তৈরি, বলছে গোয়েন্দা রিপোর্ট
দলে কে ভাল কাজ করছেন, কে করছেন না, সব খোঁজ তিনি রাখছেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন কোচবিহারের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জানান। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ, মিহির গোস্বামী, পার্থপ্রতিম রায়দের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে মমতার বার্তা— কোনও গোষ্ঠী কোন্দল তিনি বরদাস্ত করবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘একটাই গোষ্ঠী, জোড়াফুল, আর কোনও গোষ্ঠী নেই।’’
কোচবিহার শহরে আলো নিয়ে মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে স্থানীয় পুরসভার টানাপড়েনের কথা তিনি যে জানেন, তা-ও মমতা বুঝিয়ে দেন। অসুস্থ রবীন্দ্রনাথ এ দিনের সভায় ছিলেন না। তিনি এখন কলকাতায় চিকিৎসাধীন। কিন্তু কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান মঞ্চেই ছিলেন। মমতা সরাসরি তাঁকেই বলেন যে, তিনি আর টানাপড়েন সহ্য করবেন না। পুরসভাকেই আলোর দায়িত্ব নিতে হবে— চেয়ারম্যানকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কোচবিহার জেলায় গোটা দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে— এই বার্তা এ দিন বার বার দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মমতা। আর বলেছেন, ‘‘মিরজাফরদের দল থেকে বার করে দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy