রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরিতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় জমি মাফিয়াদের একাংশ সক্রিয় বলে অভিযোগ করলেন খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়ি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে বসে মন্ত্রী ওই অভিযোগ করেছেন। এমনকি, তিনি জমি মাফিয়াদের পিছন থেকে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেও। দূষণের কথা বলে বৈদ্যুতিক চুল্লির সরানোর প্রস্তাব নিয়ে রামঘাট এলাকার বাসিন্দাদের করা মামলা গত ৩০ জানুয়ারি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিন হাইকোর্টের রায়ের কপি হাতে নিয়ে মন্ত্রী ওই অভিযোগগুলি করেন। হাইকোর্টে রামঘাটে প্রকল্পের কাজ করতে বললেও কবে থেকে কাজ শুরু হবে তার সময়সীমা নিয়ে মন্ত্রী কিছু বলেননি। মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “দূষণের নাম করে রামঘাটের কয়েকজন হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। আদালত তা খারিজও করেছে। আসলে একাংশ জমির মাফিয়া ওই এলাকায় সক্রিয়। তাঁরা ওই জমিটি দখল করতে চায়। সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রী এদের পিছন থেকে মদত দিয়েছেন।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, ১৯৬৫ সাল থেকে ওই এলাকায় শ্মশান ঘাট রয়েছে। জমির মালিক এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ শুরু হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ৪ কোটি টাকা খরচ করে ২৭ বিঘা জমিতে প্রকল্পটি শুরু করে। তবে সেখানে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। শবদেহ নিয়ে আসা বাসিন্দাদের মারা হয়েছে। আইসি’র গাড়ি জ্বালানো হয়েছে। হিংসাত্মক কাজ হয়েছে। জমি মাফিয়াদের স্বার্থে আঘাত লাগছিল বলেই রাজনীতিতে সামনে আনা হয়েছে। হাইকোর্ট রামঘাটে কাজ ছাড়াও পুরসভাকে অন্যত্র প্রয়োজনে হলে চুল্লি তৈরি এবং কিরণচন্দ্র ঘাটের দুটি সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছে। রামঘাটের কাজ শুরু নিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য, “ওখানে অনেক সমস্যা হয়েছে। লোহা চুরি হয়েছে। ক্যাম্প অফিস ভাঙা। এলাকায় তছনছ করা হয়েছে। আমি পুর দফতর, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি। তার পরেই সব চূড়ান্ত হবে। বিরোধীদের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
মন্ত্রীর তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী অশোকবাবু। তাঁর দাবি, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর মুখে বড়-বড় কথা মানায় না। উনি কী কী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তা শহরের মানুষ সব জানেন। মন্ত্রী মশাই তো জমির ব্যবসায়ীদের পরামর্শদাতা বলেও শুনেছি। আরও কত কিছু শুনেছি।”
অশোকবাবুর যুক্তি, “প্রথমত রামঘাট পুরসভার শ্মশান নয়। আর কোথাও উন্নয়নের কাজ হলে সেখানকার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করাটাই রীতি। তা না করে উনি পুলিশ দিয়ে কাজ করতে গিয়েছিলেন।” সেই সঙ্গে অশোকবাবু জানান, আবেদনকারীরা ‘রিভিউ পিটিশন’ করবেন। গ্রিন বেঞ্চেও আবেদন করার চিন্তাভাবনা চলছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত বছরের শেষ থেকেই রামঘাটকে ঘিরে শিলিগুড়ির রাজনীতি সরগরম। সম্প্রতি রামঘাট আন্দোলনের অন্যতম নেতা মহানন্দ মণ্ডল অনুগামীদের নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগ দিয়েছেন। ওই ওয়ার্ডটি গত পুরভোটে ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলেই ছিল। পরবর্তীতে গোলমালের পর তৃণমূল রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে ‘পিছু হঠতে’ বাধ্য হয়। আদালতের নতুন নির্দেশের পর অবশ্য সরকার তথা তৃণমূল এলাকায় নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। তবে পুরভোটের আগেই কাজ শুরু হবে কি না তা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেখানে কাজ শুরু হলে ফের কোনও গোলমাল যদি হয়, তাতে ভোটের প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করছেন তৃণমূল নেততাদের একাংশ। সেই দিকটি খতিয়ে দেখেই এগোতে চাইছে সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy