অরণ্য সপ্তাহের মুখে রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়াতে বিমানবন্দর লাগোয়া এলাকায় ২৭৩টি গাছ কাটার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গত ২৪-২৭ জুন কোচবিহার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বন, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ও এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিদের করা সমীক্ষায় কোচবিহার বিমানবন্দর লাগোয়া এলাকার ওই গাছগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১ জুলাই প্রশাসনের কর্তাদের কাছে ওই সমীক্ষা রিপোর্ট জমা পড়েছে। যে সমস্ত গাছ কাটা হবে সেই তালিকায় মেহগনি, গামার, কদম, আম, কাঁঠাল ও বেশ কিছু সুপারি গাছ রয়েছে। তার মধ্যে ২৩টি গাছ বিমানবন্দরের পিছন দিকে মরা তোর্সার পাড়ে ও বিমান বন্দরের সামনের দিকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ৪টি গাছ। তিনটি গাছ রয়েছে চকচকা এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চত্বরে ও বাকি গাছের বেশির ভাগই পঞ্চায়েত, পুরসভা এলাকার আওতাধীন সরকারি মালিকানাধীন জমিতে রয়েছে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন ও রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দু’জনেই কোচবিহার জেলার বাসিন্দা। তাই অরণ্য সপ্তাহের মুখে কোচবিহারে বিপুল সংখ্যক সবুজ ধ্বংসের এমন উদ্যোগে স্বাভাবিক ভাবে পরিবেশপ্রেমী মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যের বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “উড়ান চালুর পরিকাঠামো তৈরির জন্য যা যা প্রয়োজন তা করতে হচ্ছে। তবে পরিবেশের ক্ষতি করে কিছু করা হবে না। যত সংখ্যক গাছ কাটতে হবে তার চেয়ে বেশি গাছ লাগানো হবে।” এই ব্যাপারে রাজ্যের বনমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও ডিএফও কৌশিক সরকার দাবি করেছেন, “এই বার অরণ্য সপ্তাহে জেলায় সাড়ে ৭ লক্ষ চারা বিলি করা হবে। মোট ১০৫ হেক্টর এলাকায় সবুজায়ন করা হবে। ফলে এতে সমস্যার ব্যাপার নেই।”
প্রশাসনের করা সমীক্ষা থেকেই জানা গিয়েছে, গাছ কাটা ছাড়া বিমান বন্দর লাগোয়া এলাকায় দুটি হিমঘর, একটি জলের ট্যাঙ্ক ও ২৩টি বাড়ির উচ্চতা কমাতে হবে। এরই পাশাপাশি বিমান বন্দরের লাগোয়া চকচকা গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে বহুতল বাড়ির অনুমতি দেওয়ায় ক্ষেত্রে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার সবুজ সঙ্কেত নিয়ে এগোতে নির্দেশ দেয় প্রশাসন। ওই এলাকায় ক’টা বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে হবে তা নিয়েও বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেছেন, “আমাদের হাতে প্রাথমিক সমীক্ষা রিপোর্ট এসেছে। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার রিপোর্টও খুব দ্রুত পেয়ে যাব। সব কিছু খতিয়ে দেখার পরে রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়াতে পদক্ষেপ করা হবে।”
আপাতত কোচবিহার বিমানবন্দরে রানওয়ে রয়েছে ১০৬৯ মিটার। ফলে সেখানে ১৮ আসনের বেশি আসনের বিমান ওঠানামা সম্ভব নয়। কয়েক মাস আগে রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়াতে ৪৫ কোটি টাকা অনুমোদন করে রাজ্য সরকার। এর মধ্যে এএআইকে প্রথম কিস্তি হিসাবে ১৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়। তা দিয়ে মরা তোর্সার ওপর বক্স কালভার্ট তৈরি করে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৪৬০ ফুট বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়। কিন্তু রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে উড়ান চালু করতে সংলগ্ন এলাকার গাছ, উঁচু বাড়ির উচ্চতা কমানোর বিষয়টি নিয়ে জটিলতায় সেই কাজ থমকে গিয়েছে।
কোচবিহার সদরের মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা বলেন, “রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হলে ৭২ আসনের উড়ান চালুর সুবিধে মিলবে। তাই আমরা বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে বহুতল না করার জন্য প্রচার চালাচ্ছি। বিশেষ ক্ষেত্রে কেউ আবেদন করলে এএআই কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তবেই অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।”
কোচবিহারের পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস-এর সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “এর আগে গাছ কাটা হয়েছিল। কিন্তু বিমান চলাচল করেনি। এ বার গাছ কাটার আগে তাই ওই বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। নয়া কেন্দ্রীয় বন আইন অনুযায়ী যত গাছ কেটে ফেলা হবে তার বদলে লাগানো গাছগুলি পরের ২৫ বছর ধরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।আমরা এই ব্যাপারে চুক্তি দেখতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy