নকশালবাড়ির কর্মিসভায় দার্জিলিং কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়ার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে ‘গার্ডেন ভিলেজ’ বা বাগিচা গ্রামের দাবিতে সরব হয়েছেন চা শ্রমিকরা। মঙ্গলবার নকশালবাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভায় এই প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছিলেন চা শ্রমিকরা।
বাগানগুলির অফলনযোগ্য ও পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে এই গ্রাম গড়ার দাবি ওঠে। মূলত অবসরের পর এই শ্রমিকদের স্থায়ী আস্তানা গড়ে দিতেই এই উদ্যোগ। তবে ভোট বিধি চালু হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কথা বলতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। নির্বাচনের পরে বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে এ ব্যাপারে তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অলক চক্রবর্তী।
প্রায় হাজারেরও বেশি চা শ্রমিক এ দিন এই দাবি নিয়ে উপস্থিত হন। যদিও এই দাবি নিয়ে এককাট্টা ডান বাম সমস্ত সংগঠনও। এমনকী এই দাবিকে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছেন চা বাগান মালিকেরাও। রাজ্য সরকার উদ্যোগী হলে তাঁদের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এই ব্যপারে মন্ত্রীর পাশাপাশি শ্রম দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে।
তৃণমূল টি প্লান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অলক চক্রবর্তী বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই লিখিতভাবে আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা অন্য সংগঠনে থাকার সময়ই তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। তখন তিনি তা নিয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজ হয়নি।”
ফলে নতুন করে তৃণমূল নেত্রীর কাছে এই দাবি জানানো হবে বলে তিনি জানান। এই দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়ছেন বলে দাবি করেন আইএনটিইউসি নেতারাও। দার্জিলিং জেলা আইএনটিইউসির সভাপতি বিজয় নাথ দাবি করেন, বাম আমলে তাঁদের পক্ষ থেকেই এই দাবি প্রথম তোলা হয়েছিল। তিনি বলেন, “নিয়মিত এই বিষয় নিয়ে আমরা বিভিন্ন বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। মুখ্যমন্ত্রী যদি দাবি পূরণে উদ্যোগ নেয়, আমাদের আপত্তি নেই।” এই দাবির সমর্থনে যে কোনও যায়গায় যেতে রাজি বামপন্থী সংগঠন শ্রমিক সংগঠন সিটুও। তাঁদের চা শ্রমিক নেতা গৌতম ঘোষ বলেন, “এই দাবি যুক্তিযুক্ত। শ্রমিক স্বার্থে যে কোনও ভাল কাজের সমর্থন করব।”
উত্তরবঙ্গে এই মুহূর্তে বড় চা বাগান রয়েছে ৩৭৮ টা। ছোট বড় মিলিয়ে বাগানের সংখ্যা ২৭ হাজারের বেশি। প্রতি বছর গড়ে ৫০ হাজার শ্রমিক অবসর নেন। ফলে একটা বড় অংশের জন্য এই স্থায়ী আস্তানা দরকার। শিলিগুড়ির যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “আমার কাছে এখনও সরকারিভাবে কোনও প্রস্তাব আসেনি। এলে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে উচ্চতর কতৃপক্ষকে জানাব।”
গঙ্গারাম, টুনা, দাগাপুর, ইন্দুয়ার, সতীশচন্দ্র, সুবলভিটা, বাগরাকোট সহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা হাজির ছিলেন এদিনের দাবি পেশ করতে। যদিও সরাসরি কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সময়ে চা বাগানের একটা অংশ পতিত হয়ে পড়ে। সেখানে আর নতুন চা গাছ জন্মায় না। সেই অংশগুলি দীর্ঘদিন ধরে, পড়ে থাকার ফলে দখল হয়ে যাচ্ছে। ওই জায়গাগুলিকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে চা শ্রমিকদের ঘর দেওয়ার দাবি উঠেছে। তবে সরাসরি লিজে নেওয়া জমিগুলি চা বাগানের কাছ থেকে নেওয়ার অসুবিধা রয়েছে। তাই অলকবাবুর দাবি, “এই বাগানগুলির পতিত অংশ কেন্দ্র সরকার যদি লিজ ফেরত নিয়ে প্রকল্পেরক জন্য দেয়, তাহলে এটা সম্ভব। এটা রাজ্য সরকারকেই মধ্যস্থতা করতে হবে।”
গঙ্গারামের রাজেশ তির্কি, বা বাগরাকোটের ইন্দ্র বাহাদুর ভুজেলরা চাইছেন এই সমস্যার সমাধান করুক মুখ্যমন্ত্রীই। বাগানের পতিত অংশ কাজে লাগলে আপত্তি নেই বাগান কর্তৃপক্ষেরও। বিজয়নগর চা বাগানের ম্যানেজার অমিতাভ রায় বলেন, “আমরাও অনেক সময় ঘর করে দিই। সরকারি ভাবে এই কাজ হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।” অনেক সময় বাইরের লোকজনও সুযোগ নেয়। এমন যাতে না হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই বলে দাবি তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy