Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
রহিমাবাদ চা বাগান

মজুরি নিয়ে বিক্ষোভ, ফের বন্ধ বাগান

মজুরি দেওয়া নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাগানের অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে মালিক ও ম্যানেজারকে হাজির করানোর দাবি করেছিলেন কয়েকশো শ্রমিক। বুধবার ভোরে কাজে যোগ দিতে গিয়ে তাঁরা দেখলেন, অফিস ও বাগানে তালা ঝুলিয়ে চলে গিয়েছেন ডুয়ার্সের রহিমাবাদ চা বাগান কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৭
Share: Save:

মজুরি দেওয়া নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাগানের অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে মালিক ও ম্যানেজারকে হাজির করানোর দাবি করেছিলেন কয়েকশো শ্রমিক। বুধবার ভোরে কাজে যোগ দিতে গিয়ে তাঁরা দেখলেন, অফিস ও বাগানে তালা ঝুলিয়ে চলে গিয়েছেন ডুয়ার্সের রহিমাবাদ চা বাগান কর্তৃপক্ষ। প্রথমে বুঝতে পারেননি তাঁরা। কারখানা বন্ধ দেখে হইচই শুরু করে দেন। তার পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের জানিয়ে দেয়, নিরাপত্তা না থাকার কারণ দেখিয়ে থানায় গিয়ে কাজ বন্ধের নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ।

এর জেরে রাতারাতি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বাগানের ৭৪৪ জন শ্রমিক। এই নিয়ে ডুয়ার্সে মোট ৯টি চা বাগান বন্ধ হল। আলিপুরদুয়ারের সহকারি শ্রম কমিশনার বিশ্বজিত্‌ মুখোপাধ্যায় বলেন, “রহিমাবাদ বন্ধ হওয়ার কথা জেনেছি। আমি জেলার বাইরে আছি। বাগান খোলার ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

সম্প্রতি ডুয়ার্সের বাগরাকোটের সোনালি চা বাগানে বকেয়া মজুরি নিয়ে বিক্ষোভের সময়ে বাগান মালিককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। মালিকপক্ষের দাবি, বকেয়ার দাবিতে আন্দোলনের নামে শ্রমিকরা রাতের বেলা এসে মানেজারদের হুমকি এবং ভয় দেখানোয় বাগান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, সোনালি চা বাগানের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। ওই বাগানের ম্যানেজার মনোজ রায় বলেন, “বকেয়ার দাবিতে মঙ্গলবার রাতে দুই শতাধিক শ্রমিক আমাদের এক সহকারি ম্যানেজারকে ঘেরাও করে রাখেন। আন্দোলনের নামে হুমকি দেওয়া হয়। ভয় দেখানো হয়। আমরা নিরাপত্তা অভাব বোধ করছি। আমাদের উপর হামলা করার ছক কষা হয়। ওই সহকারি ম্যানেজার পালিয়ে বাঁচেন। এই অবস্থায় বাগান চালানো কোনও ভাবে সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ দিতে বাধ্য হয়েছি।” শামুকতলা থানার ওসি বিনোদ গজমের বলেন, “রহিমাবাদ চা বাগানের মালিকপক্ষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়ে বুধবার সকালে থানায় সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ দিয়ে যান। এর পরেই ওই বাগানে পুলিশ মোতায়েম করা হয়েছে।”

চা বাগান মালিকদের সংগঠন ডিবিআইটিএ-র অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় বাগচী জানান, গত জুনে ১৪ দিন বাগান বন্ধ থাকার পরে শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে বাগান খুলেছিল। শ্রমিকরা তা মানছেন না বলে সচিবের দাবি। শ্রমিকরা বাগান চালাতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আদতে উল্টো পথে হাঁটছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “শ্রমিকরা পাওনার দাবিতে আন্দোলন করতেই পারেন। সে আন্দোলন দিনে না করে রাতের অন্ধকারে কেন করা হচ্ছে? শ্রমিকেরা কেন হুমকি দিচ্ছেন? সোনালি এবং দলমোড় চা বাগানের ঘটনার কথা কেউ ভুলে যাননি। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে বাগান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”

তৃণমূল টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাস ইউনিয়নের ইয়াসিন আনসারি ও সিটু অনুমোদিত চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের মহম্মদ হোসেন, আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নির্মল খালকোরা বলেন, “এমন কোনও কিছু ঘটেনি যে বাগান বন্ধ করে দিতে হবে। নভেম্বর মাসের মজুরির টাকা গত শনিবার দেওয়ার কথা ছিল। পরে মঙ্গলবার দেওয়ার কথা বলা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টাকা না দেওয়ায় শ্রমিকরা সহকারি ম্যানেজারের কাছে যান। তিনি ম্যানেজারের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। রাত ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তিনি না আসায় শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে যান।” তাঁদের দাবি, বকেয়ার দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালাচ্ছিলাম। মালিক পক্ষ মিথ্যা অভিযোগ করে চলে গেলেন।

শ্রমিকদের আরও অভিযোগ, ২৬ সপ্তাহের রেশন বকেয়া রয়েছে। বেতন মিলছে না সঠিক ভাবে। স্বাস্থ্য পরিষেবা, জ্বালানি, কম্বল, ছাতা, আবাসন মেরামত-সহ অন্যান্য সমস্ত পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত জুন মাসে শ্রম দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে প্রতি মাসে একটি করে বকেয়া রেশন এবং অন্যান্য পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত হলেও মালিক পক্ষ সেগুলি কিছুই দিচ্ছে না।

চা শ্রমিক সালতানা নিশা, ফিলমানা মুন্ডা ও যামিনী খাতুন-রা বলেন, “শ্রমিক কর্মচারিদের ঘরে খাবার নেই। রেশন, মজুরি না মেলায় এই বাগানের স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কর্মচারী এক অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিত্‌সা মিলছে না। শ্রমিক আবাসন পাঁচ বছর ধরে সংস্কার হচ্ছে না। জ্বালানি, চা পাতা কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। মালিক পক্ষের কাছে বারবার দাবি জানিয়েও বকেয়া পাওনা মিলছে না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy