Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

বন্ধ চা বাগান খুলতে উদ্যোগী সরকার

গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে চাপের মুখে এ বার বন্ধ রায়পুর ও রেডব্যাঙ্ক চা বাগান খুলতে উদ্যোগী হল রাজ্যের শাসক দল। রবিবার জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল রায়পুর এবং রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে যায়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের দুই সাংসদ সহ দলের অন্য নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি ও বানারহাট শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:০০
Share: Save:

গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে চাপের মুখে এ বার বন্ধ রায়পুর ও রেডব্যাঙ্ক চা বাগান খুলতে উদ্যোগী হল রাজ্যের শাসক দল। রবিবার জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল রায়পুর এবং রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে যায়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের দুই সাংসদ সহ দলের অন্য নেতারা। বাগান খুলতে দু’জন নতুন মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে শ্রমিকদের জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। বিষয়টি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কেও জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

রায়পুর চা বাগানে গত এক মাসে অর্ধাহার-অপুষ্টিতে ছ’জনের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পরে গত ২৯ জুন খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বাগানে গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন বাম বিধায়কদের একটি প্রতিনিধি দল। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি দল এবং কংগ্রেস বিধায়করাও বন্ধ বাগান পরিদর্শন করেন। ত্রাণ বা আশ্বাস নয়, বাগান খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রায়পুর এবং ডুয়ার্সের রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে গত কয়েকদিনে মন্ত্রী থেকে শুরু করে যে ক’টি প্রতিনিধি দল গিয়েছে, সকলকেই একই আর্জি জানিয়েছেন শ্রমিকরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল,বাগান না খুললে তাঁদের সমস্যা কোনও ভাবে মিটবে না। রোখা যাবে না অপুষ্টিতে আক্রান্ত শ্রমিকের মৃত্যু মিছিল। ঘনঘন চা বাগানের পরিদর্শনেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শ্রমিকরা।

ত্রাণ নিতে দীর্ঘ লাইন চা বাগানে (বাঁ দিকে)। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছেন
তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। রবিবার ছবিগুলি তুলেছেন সন্দীপ পাল ও রাজকুমার মোদক।

রবিবার তৃণমূলের প্রতিনিধি দল রায়পুর চা বাগানের বন্ধ কারখানার সামনে পৌঁছলে শ্রমিকদের ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসেন মিনতি ওঁরাও ও বিন্দি মুণ্ডা। সৌরভবাবুর হাত জড়িয়ে বলেন, “চাল, ডাল দিয়ে যে কিছুই হবে না। বাগান খুললে দেখবেন কোনও সমস্যা থাকবে না।” সৌরভবাবু শ্রমিকদের জানান, বাগান খোলার জন্য মুম্বই ও উত্তরবঙ্গের দু’জন বড় শিল্পদ্যোগীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলের সহকারী জেলা সভাপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আজ সোমবার এক জন শিল্পদ্যোগী ও সব বর্তমান মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা বাগানে যাবেন। আইনগত সবদিক খতিয়ে দেখবেন। আগামী দশ দিনের মধ্যে বাগান চালু হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

তবে বাগান খোলার আশ্বাসেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না শ্রমিকরা। বাসন্তী মুণ্ডা, সরস্বতী ওঁরাও, ববিতা মুণ্ডার মতো মহিলা শ্রমিকরা প্রতিনিধি দলের কাছে জানতে চান, “আগের মতো বোনাসের সময় হলে এই মালিক পালিয়ে যাবে না তো?” তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভবাবুর আশ্বাস, “আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা হবে। যাঁরা আসবেন তাঁরা কথা বলবেন।” তৃণমূলের সহকারী জেলা সভাপতি গৌতম দাস চা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, “সব দিক দেখে এবার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবুও এ দিন বলেন, “সরকারের থেকে জেলা প্রশাসনকে দ্রুত বাগান খোলার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” শ্রমিকদের মধ্যে মাথা পিছু পাঁচ কেজি চাল, ডাল, আলু সয়াবিন, দুধ সহ নানা সামগ্রী বিলি করেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়। মৃত জিতবাহান মুণ্ডার সেভেন ও ফাইভের পড়ুয়া দুই মেয়ের নামে দশ হাজার টাকা ব্যাঙ্কে ফিক্সড করা এবং দু’জনের দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বাগানের প্রায় চার’শো জন ছাত্র ছাত্রীর নিয়মিত স্কুল যাওয়ার জন্য গাড়ির তেলের ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন তাঁরা।

এদিকে রবিবার বন্ধ রায়পুর চা বাগানে গিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশো শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোট ১৭ জন চিকিৎসক। সংস্থার জলপাইগুড়ি জেলা ইউনিটের সম্পাদক তথা জেলা সদর হাসপাতালের সুপার সুশান্ত রায় এই দিন বলেন, “অপুষ্টি ও রক্তাল্পতায় ভুগছেন বাগানের শ্রমিকরা। সংস্থার পক্ষ থেকে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত নিয়ে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy