মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদহে আসার আগে তাঁর থাকার জন্য নির্দিষ্ট হোটেলের বিদ্যুৎসংযোগ ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দমকল সার্টিফিকেট দিয়েছিল। তার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের এয়ারকন্ডিশন যন্ত্রে আগুন লাগার ঘটনার তদন্তে নেমে দমকল কী করে ‘রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি’-র জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করল, প্রশ্ন তুললেন মালদহের সেই হোটেলের মালিক দিলীপ অগ্রবাল।
পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মালদহে আসার দু’দিন আগে নারায়ণপুরের ওই বেসরকারি হোটেলের সমস্ত ঘরের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। দমকলের তরফে ‘ফায়ার সার্টিফিকেট’-ও দেওয়া হয়। দমকলের নিয়ম অনুসারে, ভবনের সমস্ত বিদ্যুতের লাইন, এসি মেশিন, গিজার-সহ যাবতীয় বৈদ্যুতিন সামগ্রী পরীক্ষা করা ছাড়াও ভবনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেই ওই সার্টিফিকেট দেওয়ার নিয়ম। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে এসি-তে আগুন লাগার ঘটনার পর হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দমকল জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করে। দমকলের এই ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন দিলীপবাবু।
১৭ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের ঘটনার পরদিনই দিলীপবাবু দাবি করেছিলেন এসি-বিভ্রাটের জন্য তাঁর কোনও দোষ নেই। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী নিজেও তা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তৃণমূল দলের তরফে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনার কথা বলা হলেও, মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনার পরেও ওই হোটেলেই ছিলেন। রবিবার দুপুরে হোটেল ছাড়ার আগে নিজের হাতে আঁকা চারটি ছবিও দিলীপবাবুকে উপহার দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পর দমকলের ইংরেজবাজারের ওসি সইদুল ইসলাম রাতেই হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ ফায়ার সার্ভিস অ্যাক্ট-১৯৫০ এর ১১ সি ও ১১ জে জামিন-অযোগ্য ধারায় মালদহ থানায় অভিয়োগ দায়ের করেন। দমকলের ওসি তাঁর অভিযোগে হোটেলের এসি মেশিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। এর পর আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে কলকাতা থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা আসেন। প্রাথমিক তদন্তে ইলেকট্রিক সরঞ্জামের ত্রুটির জন্য এসি মেশিনে আগুন লেগেছে বলে জানানো হয়।
মঙ্গলবার দিলীপবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী হোটেলে ওঠার দু’দিন আগে পুলিশ, প্রশাসন ও দমকলের অফিসারেরা হোটেলে বৈঠক করেন। মুখ্যমন্ত্রী যে ঘরে থাকবেন, সেই ঘরটি-সহ ওই তলার ১৮টি ঘরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তাঁর অভিযোগ, “দমকলের সার্টিফিকেট দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী আসার একদিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মী-অফিসাররা হোটেলের দোতলার ১৮টি ঘর তালাবন্ধ করে চাবি নিয়ে নেন। সেই সময় কারও রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি বা গাফিলতি ধরা পড়ল না। অথচ এসি মেশিনে শর্ট সার্কিটে আগুন লাগার পর দমকল গাফিলতির অভিযোগ তুলছে।” দিলীপবাবুর দাবি, ফরেন্সিক রিপোর্ট এলেই স্পষ্ট হবে যে তাঁর তরফে কোনও গাফিলতি ছিল না।
গোটা বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে দমকল কর্তৃপক্ষ। সইদুল এ দিন বলেন, “যা জানানোর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” আর রাজ্যের ডিরেক্টর (ফায়ার) গৌরপ্রসাদ ঘোষ বলেন, “নিয়ম মেনে যা করার তা করেছি।”
দমকল অভিযোগ জানানোর পাঁচদিন পরেও পুলিশ অবশ্য হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ওই এসি মেশিনের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা হোটেলের ঘরটি সিল করে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy