দু’সপ্তাহেই বদলে গেল পরিস্থিতি।
অনাবৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গের খরা পরিস্থিতি ঘোষণার দাবি উঠেছিল জুলাই মাসে। বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২০-৩০ শতাংশ। গত দু’সপ্তাহের টানা বৃষ্টি সেই হিসেব বদলে দিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। এখন ফের ক্ষতিপূরণের দাবি উঠছে। তবে তা প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান থেকে ভুট্টা। যদিও এখনও বিস্তীর্ণ এলাকার খেতে জল জমে থাকায়, ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে ওঠা সম্ভব হয়নি বলে কৃষি দফতর জানিয়েছে।
সেচ দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি এলাকায় চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তার ২৫ শতাংশ-ই গত দু’সপ্তাহে হয়েছে। একই ভাবে বানারহাট, হাসিমারা, মালবাজারে গত ১৩ থেকে ২৬ অগস্ট পর্যন্ত বছরের গড়ে ৩০ শতাংশ বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, গত দু’সপ্তাহে ডুয়ার্সের বানারহাটে ১৪৬৭ মিলিমিটার, হাসিমারায় ১৩৪১ মিলিমিটার এবং মালবাজারে ৯৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জলপাইগুড়িতে ৬৩৫, শিলিগুড়িতে ৫৯৯, আলিপুরদুয়ারে ৬৮৭, তুফানগঞ্জে ৭৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা গত দশ বছরে নজিরবিহীন বলে সেচ আধিকারিকদের দাবি। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত জানিয়েছেন, ওই বৃষ্টির জেরেই ঘাটতি পূরণ হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মৌসুমী অক্ষরেখা অবস্থান পরিবর্তন করে হিমালয়ের পাদদেশে সরে আসাতেই এই বিপুল বৃষ্টি।
গত দু’সপ্তাহের এই টানা বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ নদীর জল একসঙ্গে বাড়তে শুরু করে। বেশ কিছু বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকটি নদীর জলোচ্ছ্বাসে একাধিক গ্রাম ভেসেছে। যদিও সেচ দফতরের দাবি, টানা বৃষ্টিতে যতটা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, তার সিকিভাগও হয়নি। দু’সপ্তাহে তিস্তা, জলঢাকা, রায়ডাক, তোর্সার মতো নদীতে টানা হলুদ সর্তকতা জারি রয়েছে। তিন দফায় লাল সতর্কতাও জারি করতে হয়েছিল নদীগুলিতে। কালজানি, তিস্তা, তোর্সা, তাতসি, রায়ডাক সব নদীই এখনও বিপদসীমা ছুঁয়ে বইছে।
যদিও সেচ দফতরের দাবি, এই পরিস্থিতিতেও শুধুমাত্র একটি পঞ্চায়েত বাঁধ ছাড়া অন্য কোনও নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যে এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল, সেগুলি থেকেও জল কমতে শুরু করেছে। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত দু’সপ্তাহে উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তা চমকে দেওয়ার মতো। বিশেষত জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারের মতো বন্যাপ্রবণ জেলায় এই প্রবল বর্ষণেও বড় কোনও বিপর্যয় ঘটেনি।” তাঁর দাবি, বর্ষার শুরু থেকেই সেচ আধিকারিকেরা প্রতিটি নদীতে নজরদারি চালিয়ে ছিলেন। বর্ষার আগেই বাঁধ সংস্কারের কাজ সেরে রাখাতেই পরিস্থিতি সামলানো গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “জুলাই মাসের শুরু থেকেই মৌসুমী অক্ষরেখা অবস্থান বদলাতে শুরু করেছিল। সে কারণে বৃষ্টির ঘাটতি দেখা গিয়েছিল। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই অক্ষরেখা অবস্থান বদলে হিমালয়ের পাদদেশ এলাকায় ফিরে আসে এবং ওই এলাকাতেই থেকে যায়। সে কারণেই টানা বৃষ্টি হয়েছে।” যদিও আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে দফতরের পূর্র্বাভাসে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy