Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
সালিশিতে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ

দুর্ঘটনার পরেও মামলা করেনি পুলিশ, উঠছে প্রশ্ন

শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তায় দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকা বিলাসবহুল গাড়ির ধাক্কায় বাইক আরোহী দুই তরুণ ছিটকে গুরুতর জখম হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেও পুলিশ কোনও মামলা রুজু করেনি। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ শিলিগুড়ি শহরের পানিট্যাঙ্কি মোড়ে ঘটনাটি ঘটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৫
Share: Save:

শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তায় দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকা বিলাসবহুল গাড়ির ধাক্কায় বাইক আরোহী দুই তরুণ ছিটকে গুরুতর জখম হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেও পুলিশ কোনও মামলা রুজু করেনি। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ শিলিগুড়ি শহরের পানিট্যাঙ্কি মোড়ে ঘটনাটি ঘটে।

জখম তরুণদের মধ্যে একজন শিলিগুড়িতে নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। অন্যজনকে বিমানে কলকাতায় নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই ঘটনার পরে নেতা-ব্যবসায়ীদের একাংশের চাপে ‘সালিশি’র মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে দিতে পুলিশের কয়েকজন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। জখম দুই যুবক শৌভিক ও স্নেহাশিস ভট্টাচার্য দুই ভাই। তাঁদের বাবা সুভাষ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এখন চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। পুলিশ আইনত যা করণীয় সেই পদক্ষেপ করুক। আমরাও অভিযোগ করব।”

এই ঘটনার পরে পুলিশ কর্তাদের একাংশের কাছে তৃণমূল নেতা নান্টু পাল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মহেন্দ্র সিঙ্ঘলের বিরুদ্ধেও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন। কারণ, ওই বিলাবহুল গাড়িটি মহেন্দ্রবাবুদের। তবে নান্টুবাবু দাবি করেছেন, তিনি কোনভাবেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁর দাবি, “দুর্ঘটনার সময়ে কাছাকাছি ছিলাম বলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই। একজনের গাড়িতে করে দুজনকে নার্সিংহোমে পাঠিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করিয়ে দিই। মহেন্দ্রকে আমি চিনি। তা বলে আমার দিক থেকে ওই ব্যাপারে পুলিশকে কোনও চাপ দিইনি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হতে পারে। যাই হোক, আমি চাই পুলিশ মামলা করে ব্যবস্থা নিক। কেউ অভিযোগ না করলে আমিই পুলিশের কাছে অভিযোগ করব।”

তবে পুলিশের পদস্থ অফিসারদের কাছে পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির ওসি মহেশ সিংহের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন তৃণমূলেরই একাংশ। তৃণমূলের কয়েকজন নেতা জানান, ফাঁড়ির অত কাছে দুর্ঘটনার পরে ওসি কেন বাইকটি বাজেয়াপ্ত করাননি সেটাই তো রহস্য। এমনকী, যে গাড়িটি ধাক্কা মেরেছে বলে অভিযোগ, সেটির মালিকের নাম-ঠিকানা জানা সত্ত্বেও কেন পুলিশ তা থানায় নিয়ে যায়নি সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। সে দিন গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন, পুলিশ তা খতিয়ে দেখে গ্রেফতার করেনি কেন সেই প্রশ্নের ওসির ভূমিকা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন তৃণমূলের জেলা কমিটির কয়েকজন সদস্য। ওসি মহেশবাবুর দাবি, “জখমদের বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ওঁরা অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে সব ব্যবস্থা করা হবে।” কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে যদি অজ্ঞাতপরিচয় কেউ অচৈতন্য হয়ে যান, সে ক্ষেত্রেও গাড়ি আটকে চালককে গ্রেফতার করে মামলা দায়ের করতে হয় পুলিশকে। তা হলে এ ক্ষেত্রে কেন হচ্ছে না? ওসির যুক্তি, “জখমদের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহনও অভিযোগের বিষয়টি শুনেছেন। তিনি বলেন, “কোনও দুর্ঘটনায় রক্তপাতের ঘটনা ঘটলে পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা খোঁজ নেব। তবে লিখিত অভিযোগ এলে পদক্ষেপ করতে কোনও গাফিলতির ঘটনা ঘটবে না।”

যাঁর গাড়ি, সেই মহেন্দ্রবাবু অবশ্য দুর্ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “গত মঙ্গলবার রাতে চালক যখন গাড়ি নিয়ে ফিরছিল, সে সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। একটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বলে শুনেছি। আমাকে প্রথমে জানানোও হয়নি।” সেই চালক কোথায় তা তিনি জানেন না বলে মহেন্দ্রবাবুর দাবি। কেন চালককে থানায় আত্মসমর্পণ করাননি সেই প্রশ্নেও নিরুত্তর মহেন্দ্রবাবু।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরাও। শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবী অখিল বিশ্বাস বলেন, “পুলিশ তো নিজে থেকেই মামলা দায়ের করত। কোন গাড়ি ধাক্কা মেরেছে, তা সকলেই জানেন বলছেন। অথচ পুলিশ চুপচাপ কেন বসে রয়েছে বুঝতে পারছি না। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য দুর্ঘটনা হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে পারত।”

জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিনন্দন চৌধুরীর প্রশ্ন, “ধরা যাক, আমি যখন কলকাতায় রয়েছি, তখন আমার বাড়িতে চুরি হল এবং কে চুরি করেছে পুলিশ তা জেনে গেল। তবে কী অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করে, কবে মামলা দায়ের হবে, আদৌও হবে কিনা তার জন্য পুলিশ অপেক্ষা করবে?”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy