জখম শিখা মিত্র। রায়গঞ্জের নার্সিংহোমে। ছবি: তরুণ দেবনাথ।
ছিনতাইকারীকে রুখতে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন এক প্রৌঢ়া। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ভোর চারটে নাগাদ মালদহের সামসি স্টেশনের কাছে রাধিকাপুর এক্সপ্রেস থেকে শিখা মিত্র নামে ওই মহিলা পড়ে যাওয়ার পরে তাঁর যাত্রাসঙ্গী ভাগ্নী অঙ্গনা দে বারবার চেন টানা সত্ত্বেও গুরুত্ব দেননি গার্ড এবং রেলপুলিশ কর্মীরা। লাইনের ধারে পড়ে থাকা আহত শিখাদেবীকে ফেলে রেখেই ট্রেন চলে যায় সামসিতে। তার পরে রেলপুলিশ উদ্ধারকারী দল পাঠিয়ে অজ্ঞান শিখাদেবীকে উদ্ধার করে।
চিৎপুর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছেড়েছিল রাধিকাপুর এক্সপ্রেস। স্লিপার কামরায় পাশাপাশি দু’টি লোয়ার বার্থে ছিলেন শিখাদেবী ও তাঁর ভাগ্নী। শ্রীপুর পার হওয়ার পরে ট্রেন যখন সামসির কাছাকাছি হঠাৎ হাতের পাশে রাখা ছোট ব্যাগে টান লাগায় ঘুম ভেঙে যায় অঙ্গনার। আধো-অন্ধকার কামরায় এক ব্যক্তিকে তাঁর ব্যাগ নিয়ে পালাতে দেখেই, চিৎকার করে ওঠেন তিনি। বোনঝির চিৎকার শুনে উঠে শিখাদেবী চোরের পিছু নেন। দরজার সামনে এসে চোরকে জাপটেও ধরেন তিনি। স্টেশনের কাছাকাছি এসে যাওয়ায় ট্রেনের গতি তখন কমই ছিল। অঙ্গনাদেবী জানান, ব্যাগ সমেত ওই দুষ্কৃতী চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দেয়। শিখাদেবী যে হেতু ব্যাগটি ধরেছিলেন, তাই দুষ্কৃতীর লাফানোর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাগে টান পরায় শিখাদেবীও চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যান। মাসিকে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যেতে দেখে হকচকিয়ে যান অঙ্গনা। কী করবেন ভেবে না পেয়ে, চেন টেনে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন।
অঙ্গনা জানিয়েছেন, কিন্তু তত ক্ষণে ট্রেন ঘটনাস্থল থেকে অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছিল। পরে ট্রেন থামলে রেলপুলিশ কর্মীরা এসে তাঁর কাছ থেকে জানতে চান, কেন তিনি চেন টেনেছেন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, সব কথা খুলে বলা সত্ত্বেও তখন তাঁর কোনও কথাই শোনা হয়নি। ট্রেনও ফের চলতে শুরু করে। বাধ্য হয়েই আবার চেন টেনে ট্রেন থামান তিনি। ট্রেনের গার্ডের কামরায় গিয়ে ঘটনাটি জানান। কিন্তু গুরুত্ব দেননি গার্ডও। কাউকেই ট্রেন থেকে পড়তে দেখা যায়নি বলে ট্রেন চালু করে দেওয়া হয়। অঙ্গনাদেবীর অভিযোগ, সেই অবস্থাতে বারবার চেন টেনে ট্রেন দাঁড় করানোর জন্য গার্ড তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকিও দেন। কোনও উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই তিনি পাশের কামরায় গিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ফোন চেয়ে রায়গঞ্জে তাঁর বাড়িতে যোগাযোগ করেন। অঙ্গনাদেবী জানান, পরের স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে সহযাত্রীরাও গার্ডের কাছে যান। তাঁরাই গার্ডকে একটি অনুসন্ধানকারী দল পাঠাতে বাধ্য করেন। ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছিল ৪০ মিনিট। শেষ পর্যন্ত রেল পুলিশের উদ্ধারকারী দল লাইনের ধার থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় শিখাদেবীকে উদ্ধার করে আনে।
শিখাদেবীকে প্রথমে চাঁচল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁর বাড়ির লোক তাঁকে রায়গঞ্জের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান। সেখানে শুক্রবার দুপুর তিনটে নাগাদ তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর উপরের পাটির তিনটি দাঁত ভেঙে গিয়েছে, তাঁর ঠোঁটে এবং কপালেও গুরুতর চোট লেগেছে। তবে শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল। রায়গঞ্জ স্টেশনের রেল পুলিশের ফাঁড়িতে ঘটনার কথা জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন অঙ্গনা। শিখাদেবীর বাড়ি যাদবপুরে। অঙ্গনার বাড়ি রায়গঞ্জে। অঙ্গনা শিখাদেবীর বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করেন। সে দিন তাঁরা দু’জনে অঙ্গনাদের বাড়িতেই যাচ্ছিলেন। অঙ্গনা জানান, খোয়া যাওয়া ওই ব্যাগটিতে নগদ তিন হাজার টাকা, দু’টি মোবাইল, প্যান কার্ড এবং ভোটার কার্ড ছিল।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার বিভাগের ডিআরএম অরুণকুমার শর্মা বলেন, “রেল কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। কর্তব্যরত কোনও রেলকর্মীর বিরুদ্ধে গাফিলতি প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মালদহ রেল পুলিশ সূত্রে খবর, রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে বৃহস্পতিবার একজন সহকারী সাব ইনস্পেক্টর-সহ চার জন রেল পুলিশের কনস্টেবল নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ির রেল পুলিশের সুপার উজ্জ্বল ভৌমিক বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তও চলছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সকলের কাছেও খোঁজখবর করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy