Advertisement
E-Paper

শিক্ষকের সংখ্যা কমলে স্কুলছুট বৃদ্ধির আশঙ্কা

বর্তমানে স্কুলশিক্ষায় উচ্চ প্রাথমিক ও নবম-দশম স্তরে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ধারাবাহিক নিরবিচ্ছিন্ন পরীক্ষা মধ্যে দিয়ে হয়।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সুকল্যাণ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৪৩
Share
Save

দেশের মহামান্য সর্বোচ্চ আদালতের এক নজিরবিহীন রায়দানের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলে এক অভূতপূর্ব সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলার ডুয়ার্সের চা বাগান এলাকার বিভিন্ন স্কুলে তার যথেষ্ট প্রভাব পড়তে চলেছে। ডুয়ার্সের চা বাগান এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির নিরিখে এই সঙ্কটের স্বরূপ অনেক গভীরে নিহিত।

শহর বাদ দিয়ে চা বাগান, বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন স্কুলে এমনিতেই শিক্ষক সংখ্যার ঘাটতি রয়েছে। এর আগে যখন বদলি প্রক্রিয়া চালু ছিল, তখন এই সব স্কুল থেকে প্রচুর শিক্ষক, শিক্ষিকা শহরাঞ্চলে বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন। সেই শূন্যস্থান এখনও পুরোপুরি পূরণ হয়নি। তার মধ্যে এ বার ওই রায়ের জেরে যদি বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকেন, তা হলে দৈনন্দিন পড়াশোনা চালানো এক কথায় কঠিন হবে।

বর্তমানে স্কুলশিক্ষায় উচ্চ প্রাথমিক ও নবম-দশম স্তরে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ধারাবাহিক নিরবিচ্ছিন্ন পরীক্ষা মধ্যে দিয়ে হয়। সার্বিক ভাবে এই গোটা প্রক্রিয়ার উপরেই এর জেরে একটা আঘাত নেমে আসবে। সাধারণ ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে প্রতিটি বিষয়ের জন্য এক জন করে শিক্ষকই নিয়োজিত থাকেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রে কোনও বিদ্যালয়ে কোনও বিষয়ের এক জন শিক্ষকও থাকবেন না। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে। খুব দ্রুত দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন বিদ্যালয়গুলিতে শুরু হবে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠদানে সমস্যা হবে।

সার্বিক শিক্ষার মানের দিক দিয়ে ডুয়ার্স এলাকা অন্য জায়গার থেকে পিছিয়ে রয়েছে। পরবর্তীতে এই মান কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, বিষয়টি সত্যিই গভীর উদ্বেগের। বিদ্যালয়গুলির আর্থিক স্থিতি এমন জায়গায় নেই যে নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষকের সংস্থান করতে পারবে।

সাম্প্রতিক সময়ে ডুয়ার্স এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এমনিতেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। তার কারণ ওই সব বিষয়ের শিক্ষক না থাকা। এই রায়ের পরে যাঁরা রয়েছেন, সেই সংখ্যাও অনেক কমে যেতে পারে। অনেক বিদ্যালয়ে করণিক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও থাকবেন না। স্কুলের নিত্যদিনের প্রশাসনিক কাজ সামলানোর ক্ষেত্রেও তার জেরে তৈরি হতে চলেছে প্রতিবন্ধকতা।

চা বলয়, বনবস্তি এলাকার ছাত্রছাত্রীরা এখনও শহরের তুলনায় পাঠ্য বিষয় আত্মস্থ করার ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার উপরেই বেশি নির্ভরশীল।
সেই সুযোগও যদি কমে যায়, তা হলে সত্যিই সঙ্কট অন্য রূপে আসবে।

রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্কলারশিপ ও ছাত্র-বৃত্তি প্রদানের কাজেও শিক্ষক- শিক্ষিকাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকে। সেই দিকেও একটা বাধা আসবে। চা বাগান এলাকার স্কুলগুলিতে এমনিতেই প্রতি দিন শিক্ষার্থীদের গড় উপস্থিতির হার ভাল নয়। তার মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যা কমে গেলে স্কুলছুট বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকছেই।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়দানের আগে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যে সমস্ত শিক্ষক- শিক্ষিকারা পাঠদান করছিলেন, তাঁদের চাকরি বাতিল হলে দৈনন্দিন পাঠদান প্রক্রিয়াও কোথাও কোথাও স্তব্ধ হয়ে যাবে। পরিস্থিতি যাতে অত্যন্ত দ্রুত আগের জায়গায় পৌঁছে যায়, এই আশা করা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনও উপায় নেই।

প্রধান শিক্ষক, জলপাইগুড়ি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

school dropouts

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}