Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Jalpaiguri

ছেলের পরে খেত, হাতির হামলায় বিপন্ন বিষ্ণু দাস

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া টাকিমারির মহারাজ ঘাটে ২০ থেকে ২৫টি বুনো হাতির দল বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে তাণ্ডব শুরু করে বলে বাসিন্দারা জানান।

তছনছ হওয়া খেতে বিষ্ণু দাস ও বিমলা দাস। ছবি: সন্দীপ পাল

তছনছ হওয়া খেতে বিষ্ণু দাস ও বিমলা দাস। ছবি: সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৪
Share: Save:

ঠিক এক মাস আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা থেকে তাঁর ছেলে অর্জুনকে শুঁড়ে তুলে আছড়ে-পিষে মেরেছিল বুনো দাঁতাল হাতি। তার এক মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে সেই বিষ্ণু দাসের উঠোনেই এসে দাঁড়াল বুনো হাতির দল। বড় ছেলে অর্জুনের মাধ্যমিক পরীক্ষার কিছু দিন আগে, দু’বিঘা জমিতে ঝিঙের বীজ ছড়িয়েছিলেন বিষ্ণু। গাছে সবে ঝিঙে ধরতে শুরু করেছিল। কিন্তু খেতের সে ঝিঙেগাছ পিষে দিয়ে গেল বুনো হাতিরা। বৃহস্পতিবার বিষ্ণু দাস আর তাঁর মা বিমলা দাস তছনছ হয়ে যাওয়া খেতে বসে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন। বিষ্ণু বলছিলেন, ‘‘কী ক্ষতি করেছি আমি হাতিদের! তরতাজা ছেলেটাকে পিষে মারল! খেতটাও নষ্ট করে দিল!’’

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া টাকিমারির মহারাজ ঘাটে ২০ থেকে ২৫টি বুনো হাতির দল বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে তাণ্ডব শুরু করে বলে বাসিন্দারা জানান। বন দফতরকে খবর পাঠালেও, হাতি হামলা চালিয়ে যাওয়ার বহু পরে বনকর্মীরা আসেন বলে অভিযোগ তাঁদের। সন্ধে নামার খানিক বাদেই একটি আলু বোঝাই ট্রাক্টরেও হামলা চালায় হাতির দল। মাঠে রাখা সারি সারি বস্তাবন্দি লঙ্কা পা দিয়ে পিষে, শুঁড় দিয়ে আছড়ে ফাটিয়ে দেয়। এলাকার কৃষক পদ বিশ্বাস বলেন, ‘‘হাতি লঙ্কা খায় না। হয়তো মুখে দিয়ে ঝাল লাগায় রাগে বস্তা বস্তা লঙ্কা নষ্ট করেছে।’’

মহারাজ ঘাট গ্রামটি বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল লাগোয়া। এলাকাটি পরিবেশের নিরিখে ‘স্পর্শকাতর’ (ইকো-সেনসিটিভ জ়োন) বলে চিহ্নিত অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত নয়। তবে চিহ্নিত ‘হাতি করিডর’-এর পাশে এই গ্রাম। বন দফতরের দাবি, ওই গ্রামে হাতি ঢুকে পড়া নতুন কিছু নয় এবং জঙ্গলের পাশেই চাষের জমি থাকায় ফসলের লোভে হাতির দল আসে। বৈকুন্ঠপুরের সহ বনাধিকারিক মঞ্জুলা তিরকে বলেন, ‘‘হাতির দল কখনও জঙ্গলের ভিতরে থাকছে, কখনও বাইরে আসছে। বাইরে এলে বনকর্মীরা তাড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার ফিরে আসছে। ক্ষয়ক্ষতির জন্য নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, হবেও।’’

হাতির দলের হামলায় ছেলেকে হারানো বিষ্ণু দাসের ক্ষতির বহরই বেশি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। বিষ্ণু দাসের কলাগাছ ভেঙেছে হাতি। বেড়ায় ধাক্কা দিয়েছে। মুখে আলো ফেলায় হাতিটি পালিয়ে যায় দাবি বিষ্ণু দাসের। জমি বন্ধক নিয়ে ঝিঙের চাষ করেছেন বিষ্ণু। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এই চাষে। সে খেতের পুরোটাই নষ্ট করেছে হাতির দল। এ দিন সকালে বিষ্ণু দাসের মা বিমলা দাস খেতের চেহারা দেখে মাঠেই বসে পড়েন। নরম মাটি হাতির পায়ের চাপে বসে গিয়েছে। সকালেও স্পষ্ট ছিল বড় বড় ছাপ। তা যেন হাতির পায়ের নীচে পড়া নাতির দুঃসহ মৃত্যুর স্মৃতিকেই ফিরিয়ে এনেছে। বিমলা বুক চাপড়াতে থাকেন— ‘‘ঘরের ছেলেটাকে কেড়ে নিল হাতি! এ বার খেতটাও নষ্ট করল! আমাদের পরিবারের উপরে হাতিদের এত রাগ!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri Wild Elephant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy