গোছগাছ: বিজেপি শিবির থেকে ফেরত যাচ্ছে চেয়ার। নিজস্ব চিত্র
তখন বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। একটু আগে সপ্তম রাউন্ডের ফল জানা গিয়েছে। এতক্ষণ এগিয়ে থাকা বিজেপি এই রাউন্ডে পিছিয়ে গিয়েছে ৩২০৪ ভোটে। এগিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী তপন দেবসিংহ। হঠাৎ দেখা গেল, গণনাকেন্দ্র থেকে বার হয়ে আসছেন কমলচন্দ্র সরকার। একা। নিরাপত্তারক্ষীদের দেখে বিষণ্ণ হাসলেন। সামান্য কয়েকটা কথা বললেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তার পরে একাই চলে গেলেন দলীয় কার্যালয়ের দিকে। অথচ এ দিন গণনাকেন্দ্রে প্রথম পৌঁছছিলেন কমলই। তাঁরও আধ ঘণ্টা পরে, বেলা ১২টা নাগাদ গণনাকেন্দ্র থেকে বার হয়ে কোনও দিকে না তাকিয়ে চলে গেলেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী ধীতশ্রী রায়ও। তিনি এর পরে আর ফোনও তোলেননি।
প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভা নির্বাচনে ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকা একটি আসনে এ ভাবে কেন হারল বিজেপি? কংগ্রেস বিধায়কের মৃত্যুতে খালি হওয়া আসন জোট বেঁধেও কেন খোয়াল হাত ব্রিগেড? বিজেপি শিবিরে কেউ কেউ বলছেন, রাহুল সিংহের মতো রাজ্য নেতা এবং বিপ্লব দেবের মতো অন্য রাজ্যের ওজনদার নেতা এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে দীর্ঘ সময় প্রচারে দেখা যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি আত্মতুষ্টি, নাকি কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাজ করেছে বিজেপির মধ্যে? সরাসরি কেউ কিছু বলতে চাননি। তবে দেবশ্রী নিজে বলেছেন, ‘‘উপনির্বাচনের ফল সাধারণত শাসকদলের পক্ষে যায়। কারণ, শাসকদল রাজ্যের ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন। কালিয়াগঞ্জের ক্ষেত্রেও রাজ্যের মন্ত্রীরা এক বছর সময় ধার চেয়ে কলেজ তৈরি, হাসপাতালের উন্নয়ন-সহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফলে তারই প্রতিফলন হয়েছে।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘বিজেপিতে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। আমি গোটা দেশের মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেও যতটা সম্ভব প্রচারে সময় দিয়েছি।’’
বাম-কংগ্রেস জোটের প্রচারের ছবিটা আরও খারাপ। ধীতশ্রীর পাশে মোহিত সেনগুপ্ত-সহ জেলা নেতৃত্বকে সে ভাবে দেখা যায়নি। দেখা যায়নি বামেদের বড় কোনও নেতাকেও। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির বাড়ি রায়গঞ্জে। অসুস্থ হওয়ার ঠিক আগে শেষবার পুজোয় এই বাড়িতে এসেছিলেন প্রিয়। তার পরে রায়গঞ্জ প্রিয়পত্নী দীপাকে জিতিয়ে লোকসভায় পাঠিয়েছে। কিন্তু এ বারের ভোটে সেই দীপাও প্রায় অনুপস্থিত। ভোট দিয়ে এসেছিলেন ঠিকই। কিন্তু প্রচারে তাঁকে শেষ কয়েক দিনের বেশি পাওয়া যায়নি। মোহিত এবং দীপাকে শেষ দু’দিন প্রচারে দেখা গিয়েছে। দলের রাজ্যস্তরের নেতারা এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁদের নিয়ে নাম-কা-ওয়াস্তে যে সভা হয়, তাতে লোক আসেনি। লোক টানার চেষ্টাও হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস কর্মীদেরই অনেকে। তাঁরা এ-ও বলছেন, ‘‘এ ভাবে গা ছাড়া দিয়ে থাকলে এই জোট কোনও দিন প্রভাব ফেলতে পারবে? না হলে ২০১৬ সালে প্রমথ রায় যেখানে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ভোট পেয়েছিলেন, সেখানে তাঁর মেয়ে এ দিন কী ভাবে ১৮ হাজার ৮০০ ভোট পান!’’
এখানেই তৃণমূলের কৌশলের তারিফ করছে কংগ্রেস সমর্থকদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, ‘‘তৃণমূল প্রথম থেকেই নেতাদের নামিয়েছিল প্রচারে। সেই দলে যেমন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রথম সারির নেতা তথা মন্ত্রীরা ছিলেন, তেমনই ছিলেন অর্পিতা ঘোষের মতো পাশের জেলার নেতাও। পার্থপ্রতিম রায়কে কোচবিহার থেকে এনে রাজবংশী ভোটকে নিজেদের দিকে টানতে চেয়েছিল তারা। ভোটের ফলেই স্পষ্ট, সেই কাজে অনেকটাই সফল তৃণমূল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy