Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Higher Secondary 2022

WBCHSE Results 2022: প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি দৃষ্টিহীন রেনেসা-বিশ্বদীপকে

বিশ্বদীপের বাবা দিনমজুর। শিলিগুড়ি মহকুমার বিধাননগরের ভিমবার দৃষ্টিহীন স্নেহাশ্রমে থেকে বিধাননগর সন্তোষিণী বিদ্যাচক্রে পড়েছেন বিশ্বদীপ।

জয়ী: রেনেসা দাস ও বিশ্বদীপ রায়।

জয়ী: রেনেসা দাস ও বিশ্বদীপ রায়।

সৌমিত্র কুণ্ডু ও নীতেশ বর্মণ
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২২ ০৯:০৩
Share: Save:

তিন বছর বয়সে চোখের অসুখে দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। তবে প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি রেনেসা দাসকে। উচ্চ মাধ্যমিকের এক দিন আগে জানতে পারেন, নির্ধারিত ‘রাইটার’ আসতে পারবেন না। রাতারাতি নতুন ‘রাইটার’ ঠিক করে বসেন পরীক্ষায়। রেনেসা পেয়েছেন ৪৮৪ নম্বর। প্রতিকূলতা দমাতে পারেনি জন্মান্ধ বিশ্বদীপ রায়কেও। কখনও পড়া রেকর্ড করে শুনেছেন, কখনও এক বার শুনেই মনে রেখেছেন। সহকারীকে নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন৩০৯ নম্বর।

রেনেসার বাবা বিশ্বজিৎ দাস দোকানকর্মী। শিলিগুড়ির পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লিতে ভাড়া বাড়িতে বাস। শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি থেকে রেনেসার পড়াশোনা শুরু। কিন্তু ব্রেল হরফে সব বই না মেলায় পরে সমস্যা হয়। বিশ্বজিতের মতো তিনিও শিক্ষকদের পড়ানোর রেকর্ডিং বাড়িতে এনে শুনতেন। মা বর্ণালি দাস বই থেকে পড়ে মেয়েকে রেকর্ড করে দিতেন। রেনেসার স্বপ্ন ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দেওয়া। আপাতত ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়তে চান। ইচ্ছা দিল্লির কলেজে ভর্তি হওয়া। কিন্তু মা-বাবাকে ছেড়ে অত দূরে? রেনেসার উত্তর, ‘‘সমস্যা হবে। তবে আমি কাটিয়ে উঠতে পারব।’’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত রেনেসা। তাঁর ঝোঁক গানেও। তাই পাঠ্য বিষয়ে মিউজিক বেছেছিলেন। অনলাইন গানের ক্লাসে নিজেকে তৈরিও করছেন। তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অত্যুহা বাগচী বলেন, ‘‘লড়াই করার মানসিকতা থাকলে প্রতিবন্ধকতাও যে হার মানে, রেনেসা তারই উদাহরণ। কোনও সাহায্য দরকার হলে আমরা অবশ্যই করব।’’

বিশ্বদীপের বাবা দিনমজুর। শিলিগুড়ি মহকুমার বিধাননগরের ভিমবার দৃষ্টিহীন স্নেহাশ্রমে থেকে বিধাননগর সন্তোষিণী বিদ্যাচক্রে পড়েছেন বিশ্বদীপ। তিনি শিক্ষক হয়ে গরিব পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে চান। কিন্তু কলেজে পড়ার জন্য তাঁর পাশে এখন কে দাঁড়াবেন, সেটাই চিন্তার। বিশ্বদীপ বলেন, ‘‘কেউ পাশে দাঁড়ালে কলেজের পড়া শেষ করতে পারব। লড়াই চালিয়ে যাব।’’ বিশ্বদীপের আদত বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে। দুই মেয়ে, এক ছেলেকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছিলেন দিনমজুর বাবা। আশপাশে ব্লাইন্ড স্কুল না থাকায় ছেলের পড়াশোনা থমকে যাচ্ছিল। পড়শিদের সাহায্যে কোচবিহারে অন্ধদের একটি স্কুলে ভর্তি করান। সেখান থেকেই মাধ্যমিক পাশ করেন বিশ্বদীপ। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য আসতে হয় বিধাননগরের নিখরচার আশ্রমে। আশ্রমের প্রধান অনন্ত রায় জানান, বিশ্বদীপের স্মার্টফোন নেই। শিক্ষকদের ফোনেই পড়া শুনতেন। করোনার সময় অনেকে আশ্রম ছেড়ে গেলেও বিশ্বদীপ আশ্রমেই ছিলেন। সন্তোষিণী বিদ্যাচক্রের প্রধান শিক্ষক অসীম রায় বলেন, ‘‘বিশ্বদীপের এই লড়াই অন্যদের অনুপ্রেরণা দেবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary 2022 Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy