জাল নোটের পথ।
এক দিকে, বাংলাদেশ সীমান্ত। অন্য দিকে, বিহার, ঝাড়খণ্ড সীমানা রয়েছে মালদহে। ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে মালদহকে ‘করিডর’ হিসাবে ব্যবহার করে জাল নোটের চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে, দাবি রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগের। গোয়েন্দাদের দাবি, ওপার থেকে আসা জাল নোট হাত বদলে মালদহে হয়ে সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে। হাতবদলের সময় ‘ক্যারিয়ারেরা’ ধরা পড়লেও অধরা থেকে যাচ্ছে চক্রের মূল পান্ডারা।
জাল নোট পাচারের অভিযোগে বুধবার ধৃত নাসিউল শেখকে জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে, দাবি পুলিশের তদন্তকারী কর্তাদের। পুলিশ জানিয়েছে, কালিয়াচকের সুজাপুর থেকে নাসিউলকে রাজ্য পুলিশের ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’ (এসটিএফ) গ্রেফতার করে। পরে, ‘এসটিএফ’ নাসিউলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। নাসিউলের মোবাইলের ‘কল-লিস্ট’ খতিয়ে দেখে, চক্রে ‘জড়িত’ অন্যদেরও হদিস মিলেছে, দাবি পুলিশের। এ বারে উদ্ধার হওয়া দু’ লক্ষ ৮৫হাজার টাকার জাল নোটের মান নিয়েও উদ্বিগ্ন পুলিশের তদন্তকারী কর্তারা। তাঁদের দাবি, এ বারে উদ্ধার হওয়া ৫০০ টাকার নোটগুলি প্রায় নিঁখুত। সাধারণ মানুষের পক্ষে আসলের সঙ্গে জাল নোটের ফারাক করা খুবই কঠিন। মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত বাকিদেরও খোঁজ শুরু হয়েছে।”
কী ভাবে নোটগুলি মালদহে ঢুকছে, উঠছে প্রশ্ন। মালদহের সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলিতে কান পাতলেই শোনা যাবে পাচারের কৌশল। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, এখন জাল নোট পাচারের রমরমা কারবার কিছুটা কমেছে। তার পরেও বাংলাদেশ হয়ে এ পারে জালনোট ঢুকছে। ও পার থেকে জাল নোটের বান্ডিল এ পারে পূর্ব নির্ধারিত নির্দিষ্ট জায়গায় ছুড়ে ফেলা হয়। পরে, ‘ক্যারিয়ারেরা’ খেতে চাষের কাজে নামে গিয়ে জাল নোটের বান্ডিল সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।
পাচারের এই কৌশলের কথা অজানা নয়, রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগের কাছেও। গোয়েন্দাদের দাবি, বাংলাদেশের শিবগঞ্জ থানা বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে। শিবগঞ্জ থেকে কখনও দৌলতপুর, কখনও আবার শব্দলপুর, শশ্মানি, পারদেওনাপুর দিয়ে জাল নোট জেলায় ‘ঢোকানো’ হচ্ছে। এ ছাড়া, সীমান্তের মতো মালদহে বিহার, ঝাড়খণ্ড সীমানাও রয়েছে। সে সীমানাগুলিতে অবাধেই যাতায়াত করা যায়। মালদহ থেকে ট্রেন এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে দেশের যে কোনও প্রান্তে যাওয়া যায়। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জাল নোটের কারবার চালাচ্ছে চক্র। যদিও সীমানাগুলিতে নিয়মিত ‘নাকা চেকিং’ করা হয় বলে জানিয়েছেন মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব।
নোট-বন্দির পরেও জালনোটের কারবার বন্ধ না থাকায় রাজনৈতিক চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সীর দাবি, “প্রধানমন্ত্রী নোট-বন্দি করে জাল নোটের কারবার বন্ধ হয়ে যাবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। এখন নতুন নোটেরও কারবার চলছে।” কংগ্রেস নেতা ইশা খান চৌধুরী বলেন, “নোট-বন্দির নামে মানুষকে হয়রানি করা হলেও, এখনও জাল নোট বন্ধ হয়নি। নিয়মিত জাল নোট উদ্ধারেই তা স্পষ্ট হচ্ছে।” যদিও বিজেপির উত্তর মালদহের সভাপতি উজ্জ্বল দত্তের বক্তব্য, “নোট-বন্দির ফলেই জাল নোটের কারবারে রাশ টানা সম্ভব হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy