Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

নিজেদের গ্রাম থাকবে তো? চিন্তায় নিজগাঁ

এলাকাবাসী জানান, ১০০ বছরেরও বেশি আগে বিহারের ছপরা থেকে কাজের খোঁজে মালদহের রতুয়ার আড়াইডাঙা পঞ্চায়েত এলাকায় এসে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা বসবাস শুরু করেছিলেন।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

বাপি মজুমদার 
রতুয়া শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১৭
Share: Save:

কয়েক দিন ধরে সকাল হলেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে যাচ্ছেন শাহজাদা আনসারি। শুধু তিনি নন, জমি ও বাড়ির নথি জোগাড়ে বিএলএলআরও অফিসে ছুটছেন পড়শিদের অনেকেই। অনেকে যাচ্ছেন আধার ও ভোটার কার্ডের ভুল সংশোধন কোথায় হবে, তার খোঁজে।

এলাকাবাসী জানান, ১০০ বছরেরও বেশি আগে বিহারের ছপরা থেকে কাজের খোঁজে মালদহের রতুয়ার আড়াইডাঙা পঞ্চায়েত এলাকায় এসে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা বসবাস শুরু করেছিলেন। গ্রামের নাম দিয়েছিলেন নিজগাঁঁ, মানে ‘নিজের গ্রাম’। কিন্তু নতুন নাগরিকত্ব আইন আর এনআরসি লাগু হলে সেই গ্রাম তাঁদের নিজের থাকবে কিনা, এ দেশেই তাঁরা থাকতে পারবেন কিনা—সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে শাহাজাদাদের।

নিজগাঁর শ’তিনেক পরিবারের লোকেদের একই অবস্থা। স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকাবাসীর ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ শ্রমজীবী। কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ দিনমজুর, কেউ শ্রমিক। সকাল হলেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কাজে যান তাঁরা। কিন্তু কয়েক দিন ধরে সেই রোজনামচা বদলেছে। নথি জোগাড়ে যাচ্ছে দিনের অনেক সময়ই। এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন একটাই— তাঁরা দেশে থাকতে পারবেন তো?’’

নিজগাঁর বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, তাঁরা বাইরের কোনও দেশ থেকে এখানে আসেননি। কাজকর্ম করে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা জমি কিনে ঘরবাড়ি গড়েছেন। জমিও কিনেছেন কেউ কেউ। কিন্তু অনেকেরই জমির পরচা নেই। নতুন আইনের জেরে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে তা ভাবতে পারেননি তাঁরা। কাজকর্ম ফেলে জমির সেই নথি জোগাড়ের চেষ্টা শুরু করেছেন সকলেই।

কিন্তু পুরনো সেই পরচা জোগাড় করতে নাজেহাল হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এলাকাবাসীর একাংশের নালিশ, নথি জোগাড়ে এলাকায় এলাকায় দালাল-চক্র গজিয়ে উঠেছে। যাঁরা মোটা টাকার বিনিময়ে প্রয়োজনীয় জমি বা অন্য নথি জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলছেন। দিনের পর দিন সরকারি অফিসে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে অনেকেই সে সব দালালদের খপ্পরে পড়ছেন বলে অভিযোগ।

শাহাজাদা বলেন, ‘‘কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। সংসারের অবস্থা ছন্নছাড়া। কখনও শুনছি, ১৯৭১ সালের আগের নথি না থাকলে দেশছাড়া হতে হবে। কখনও শুনছি, ১৯৪৮ সালের নথি লাগবে। কোনটা যে ঠিক, কোনটা ভুল বুঝতে পারছি না। দেশছাড়া হতে হবে কি না, সেই আতঙ্কে ঘুমও হচ্ছে না। আমরা গরিব মানুষ, সরকারি অফিসে গিয়ে কী করতে হবে, অনেক সময় তা বুঝকেই পারছি না।’’

তাঁর মতোই অবস্থা নিজগাঁর পাতলু আনসারি, আনতাজুর আনসারিদের। পাতলু বলেন, ‘‘আধার কার্ডে পাতলু আনসারি আর ভোটার কার্ডে আনসারি পাতলু রয়েছে। কাজ ফেলে সেই নথি ঠিক করতেই কালঘাম ছুটছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Citizenship Amendment Act CAA NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy