Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

নথি নেই ধীরেনের, পাশে মোজাফ্‌‌ফর

এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাফ্ফর ও অন্য প্রবীণেরা। কোন এগারোটি নথি এনআরসি হলে প্রয়োজন তার তালিকা পকেটে নিয়ে প্রতিদিন হাটের দোকানে গিয়ে বসছেন মোজাফ্ফর। কী কাগজ লাগবে সকলকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

নথির খোঁজে। নিজস্ব চিত্র

নথির খোঁজে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

মধ্য গগন থেকে সূর্য্য তখন সামান্য হেলেছে। তবুও তেজ তখনও বেশ কড়া। ছাতা মাথায় ধীরপায়ে হেঁটে একটি বেড়ার গেটের সামনে দাঁড়ালেন মোক্তাল হোসেন। গেটের পরে উঠোন আর তার তিন দিকে সার দিয়ে দালান বাড়ি। ‘‘কৃষ্ণ বাড়ি আছিস? রাখাল?’’ বারকয়েক ডাকলেন মোক্তাল। ডাক শুনেই বেরিয়ে এলেন দু’জন। সঙ্গীর পরিচয় দিয়ে এলাকারই বাম নেতা মোক্তাল বললেন, ‘‘ইনি খবরের কাগজ থেকে এসেছেন। এনআরসি নিয়ে কথা বলবেন।’’ শোনামাত্র তীব্র আপত্তিতে মাথা নাড়লেন দু’জন। কোনও কথা বলবেন না জানিয়ে মুখ ঘুরিয়ে হাঁটা দিলেন ঘরের দিকে।

কিছুটা দূরেই মোজাফ্ফর হোসেনের বাড়ি। সেখানে গিয়ে পরিচয় দিতেই সত্তর ছোঁয়া বৃদ্ধ বগলদাবা করে নিয়ে এলেন হলুদ হয়ে যাওয়া কিছু কাগজ। পরম মমতায় খুলে দেখালেন তার কোনওটা পঞ্চাশ সালের দলিল, কোনওটা তাঁর বাবার চাকরির নথি। সবই ১৯৭১ সালের আগে। কিন্তু তাঁর পড়শিরা কেন এনআরসি নিয়ে কথা বলতে চান না। প্রশ্ন শুনেই বললেন, ‘‘আরে, আমাদের গ্রামে এনআরসি নিয়ে মুসলিমরা নন, আতঙ্কে ভুগছেন হিন্দুরাই।”

জায়গাটা চাউলহাটির ভাঙামালি গ্রাম। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এই গ্রামে শ’দেড়েক মুসলিম পরিবারের বাস। আর হিন্দু পরিবার রয়েছে গোটা ৩৫। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন স্বাধীনতার আগে থেকেই মুসলিম পরিবারগুলো রয়েছে এখানে। আর হিন্দু পরিবারগুলো মূলত দেশভাগের পরে এসেছে। অনেকেই এসেছে উদ্বাস্তু হয়ে। সেই সময় উদ্বাস্তুদের পাট্টা দেওয়া হয়েছিল কেউ আবার জমি কিনে বসবাস শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেসব কাগজ এখন খুঁজে পাচ্ছেন না পরিবারগুলো। যেমন বললেন ধীরেন রায়, ‘‘বাবা একটা জমি কিনেছিলেন। কিন্তু সে সময় তো মুখে মুখে জমি বিক্রি হতো। রেকর্ড হয়নি। এখন কাগজ পাব কোথায়?’’

স্থানীয় মুসলিম পরিবারগুলি প্রয়োজনে সরকারি দফতরের রেকর্ড থেকে বাপ-ঠাকুরদার কোনও না কোনও নথি জোগাড়ের ব্যবস্থা করেছেন। সমস্যায় পড়েছে হিন্দু পরিবারগুলি। তাঁদের পূর্বপুরুষের সব নথিই বাংলাদেশের। ধীরেন রায় বলেন, ‘‘ঠাকুরদা বাংলাদেশে থাকতেন, বাবার স্কুলও সেখানে। বউ-ছেলে-নাতিদের নিয়ে আবার উদ্বাস্তু হতে হবে।”

এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাফ্ফর ও অন্য প্রবীণেরা। কোন এগারোটি নথি এনআরসি হলে প্রয়োজন তার তালিকা পকেটে নিয়ে প্রতিদিন হাটের দোকানে গিয়ে বসছেন মোজাফ্ফর। কী কাগজ লাগবে সকলকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বললেন, “আমার কাছেই একটি পুরনো দলিল রয়েছে, যাতে দুটো হিন্দু পরিবারের নাম আছে। সেই দলিল ওদের দিয়ে দেব। আমাদের এলাকার জমির পুরনো খতিয়ান বের করতে বলেছি। সেখানে সব রেকর্ড থাকবে। পাশে আছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

NRC NRC Documents Indo Bangladesh Border
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy