কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অর্জুনের মা। মঙ্গলবার গোয়ালপোখরে। — নিজস্ব চিত্র।
মালদহের চাঁচলের কালীগঞ্জ থেকে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। কিন্তু দু’টি পরিবারের স্বজন হারানোর যন্ত্রণা এক করে দিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। মঙ্গলবার সকালে শিলিগুড়ি মেডিক্যালে মৃত্যু হয় কালীগঞ্জের স্নেহা মণ্ডল (৬) ও গোয়ালপোখরে সাহাপুরের অর্জুন রাম (২২)-এর। দু’টি এলাকাতেই শোকের ছায়া নেমেছে।
দুই ভাই-বোনের মধ্যে স্নেহা ছোট। সামসির একটি স্কুলে নার্সারিতে পড়ত সে। বাবা মহিলাল মানিকচক হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষক। মা ছবি চাঁচল ২ ব্লকের খেমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। বাবা-মায়ের সঙ্গে গত শুক্রবার জলপাইগুড়িতে মাসির বাড়ি গিয়েছিল স্নেহা। বাড়ি ফেরার জন্য সোমবার জলপাইগুড়ি রোড থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সাধারণ কামরায় ওঠেন মহিলাল। রাঙাপানির ছোট নির্মল জোতে দুর্ঘটনায় পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা। ডান পা ভেঙে যায় স্নেহার, আঘাতে তার পেটের কাছে ফুটো হয়ে যায়। শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ দিন সকালে স্নেহার মৃত্যু হয়। স্নেহার মা-ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কালীগঞ্জ সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঠিক পাশেই বাড়ি স্নেহাদের। সকালে মৃত্যুর খবর পৌঁছলে, আত্মীয়দের পাশাপাশি শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। প্রতিবেশীদের অনেকেই শিলিগুড়ি গিয়েছেন। বাড়িতে রয়েছেন স্নেহার জেঠিমা রিনা মণ্ডল। মহিলালের দুই ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা। রিনা বলেন, “ওর মুখে হাসি লেগে থাকত। আমাকে আর বড়মা বলে ডাকবে না! রেলের গাফিলতিতে মেয়েটাকে হারাতে হল!’’ বাড়ির বাইরে রাস্তার পাশে বসে থাকা স্নেহার সমবয়সী টিনা মণ্ডল, টুসি মণ্ডলেরও চোখে জল। তারা বলে, “ও কবে আসবে আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কেন এমন হল?”
গোয়ালপোখরের অর্জুন পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। শিলচর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় বাড়ি ফিরছিলেন। ফোনে সে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। শিলচরে এক বছর আগে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন অর্জুন। আলুয়াবাড়ি স্টেশনে নামার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তার কিছুক্ষণ আগেই ঘটে দুর্ঘটনা। প্রথমে তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। সোমবার গভীর রাতে তাঁর দেহ শনাক্ত হয়। মেডিক্যাল কলেজে ছিলেন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি। তিনি পরিবারের হাতে দেহ দ্রুত তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরিজনদের পাশাপাশি শোকস্তব্ধ এলাকার মানুষ। অর্জুনের বাবা শ্যামলাল বলেন, “উপার্জনকারী ছেলেটা চলে গেল। ক্ষতিপূরণ নিয়ে কী হবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy