কালিয়াচকে জাতীয় সড়কে থমকে থাকা ট্রাকের সারি। যানজটে উল্টোদিক থেকে বাসও আসতে না পারায় অপেক্ষায় যাত্রীরা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
গাড়ির চাকা গড়াতে না গড়াতেই ব্রেক। অতএব, ঘণ্টা দেড়েকের পথ হয়ে ওঠে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার।
এলাকার বাসিন্দা ও পরিবহণ কর্মীদের কিন্তু বক্তব্য, এই রাস্তা যে যানজট মুক্ত রাখা যায়, তার প্রমাণ মিলেছে ভোট চলার সময়েই। মাস খানেক আগেই এই এলাকার যানজট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকেরা। তখন ওই প্রতিনিধি দলের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের। তার পরপর বেশ কয়েকদিন কিন্তু এই এলাকা যানজট মুক্ত ছিল। তারপরে ফের যানজট শুরু হয়েছে।
মালদহের কালিয়াচকের যানজট নিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা পরিবহণ কর্মী থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রীদের। তাঁদের অভিযোগ, যানজট নিয়ন্ত্রণে কোনও নজরদারি নেই পুলিশ প্রশাসনের। সে জন্যই নিয়মিত যানজট যন্ত্রণার মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই পুলিশ প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। কালিয়াচক রুটের বাস চালক তপন দাস, অসিত কর্মকাররা বলেন, ‘‘গাড়ি চলতে না চলতেই ব্রেক কষতে হচ্ছে। এই ভাবেই আমাদের দিনের পর দিন মালদহ-কালিয়াচক রুটে চলাচল করতে হচ্ছে। এর ফলে গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে।’’ ঘনঘন ব্রেক কষার ফলে জ্বালানির খরচও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু যানজট রুখতে পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার।
তপনবাবু বলেন, ‘‘ভোটের সময় ভেবেছিলাম যানজট যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলাম। এখন বুঝতে পারছি যানজট আমাদের নিত্য সঙ্গী।’’ চালকদের কথায়, ‘‘তখন যদি রাস্তা যানজট মুক্ত করা সম্ভব হয়, তা হলে এখন নয় কেন?’’ তাঁদের অভিযোগের তির সেই পুলিশ প্রশাসনের দিকেই।
যদিও যানজট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে আশ্বাস দিয়ে দায় এড়িয়েছেন জেলার পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কে কাজ চলায় সামান্য সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা যানজট মেটানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি খুব শ্রীঘই সমস্যা মেটানো হবে।’’
কিন্তু যানজট হয় কেন? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহের ১৬ মাইল থেকে কালিয়াচকের জালালপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা জাতীয় সড়কের তুলনায় সরু। জাতীয় সড়ক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকার রাস্তা প্রায় ছয় মিটার চওড়া। যদিও জাতীয় সড়কের রাস্তা হওয়া উচিত কমপক্ষে সাড়ে সাত মিটার চওড়া। জাতীয় সড়ক সরু হলেও, জনসংখ্যা এবং যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এলাকায়। এ ছাড়া জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণেরও কাজ চলছে। এখানে চার লেনের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। মালদহের গাজলের দিকে চতুর্থ লেনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কালিয়াচকের দিকে চলছে চতুর্থ লেন তৈরির কাজ। সুজাপুর থেকে ইংরেজবাজারের অধিকাংশ রাস্তার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন ১৬ মাইল থেকে সুজাপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কালিয়াচকের চৌরঙ্গি মোড়, নওদা যদুপুর এলাকায় জব্বর দখল উচ্ছেদ করে, রাস্তার দুই ধারের মাটি খননের কাজ চলছে। রাস্তার উপরেই ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। এ ছাড়া বালি, পাথর সব রাস্তার উপরেই রয়েছে। ফলে জাতীয় সড়ক আরও সরু হয়ে গলির মতো পরিণত হয়েছে। যার জন্য এলাকায় যানজট ক্রমশ বাড়ছে। এর পাশাপাশি রয়েছে যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও, দায়সারা ভাবে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে অভিযোগ। এ ছাড়া রাস্তার মাঝে কোনও গাড়ি খারাপ হয়ে থাকলে তা অন্যত্র সরাতেও তৎপর হতে দেখা যায় না কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কর্তাদের।
যার ফলে কালিয়াচকের চৌরঙ্গি মোড়, কলেজ মোড়, নওদা যদুপুর, জালালপুর, সুজাপুরে যানজটের চেনা ছবি দেখা যায়। এই সব এলাকায় যানজটের কারণ হিসেবে পুলিশের এক কর্তা বলেন, রাস্তার দুই ধারেই ব্যবসায়ীরা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেন। রাস্তার উপরে দাঁড়িয়েই চলে বেচাকেনা। এর মাঝেই ছোট থেকে বড়ো সব ধরনের যানবাহণ অস্থায়ী ভাবে গাড়ি পার্কিং করে যাত্রী ওঠা নামা করে। তার উপরে রয়েছে নিয়ম ভেঙে গাড়ি চলাচল। যা রুখতে কোন পদক্ষেপ করে না কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশেরা। এই বিষয়ে এক ট্রাফিক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব রয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি চালকেরা অনেক সময় আমাদের গুরুত্ব দেন না। বাধা দিতে গেলে উল্টে আমাদের গালিগালাজ করা হয়। যার জন্য অনেকেই ঢিলে ঢালা মনোভাব নিয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পর্যাপ্ত কর্মী মোতায়েন করতে হবে।’’ মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূনবাবু বলেন, ‘‘এই বিষয়গুলিও দেখা হবে।’’
এখন কলেজগুলিতে পাস কোর্সের পরীক্ষা চলছে। কালিয়াচক এবং সাউথ মালদহ কলেজের পরীক্ষার্থীদের সিট পড়েছে মালদহ কলেজে। সাউথ মালদহ কলেজের ছাত্রী পায়েল সরকার, শাবনম খাতুন প্রমুখেরা বলে, ‘‘সকাল দশটা থেকে আমাদের পরীক্ষা শুরু। সময়ের মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হচ্ছি সাড়ে সাতটা নাগাদ। তারপরেও সময়ের মধ্যে আমরা পৌঁছাতে পারছি না। সকাল থেকেই জাতীয় সড়কে যানজট লেগে থাকছে। এই বিষয়ে প্রশাসনের উচিত গুরুত্ব দিয়ে বিষয় দেখা।’’
মালদহ জেলা শাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘জুন মাসের মধ্যেই জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ শেষ হয়ে যাবে। আর বছর খানেকের মধ্যে ওই এলাকা জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ হবে। আশা করছি তারপরে যানজট অনেকটা মিটবে। আর এমন অবস্থায় কী ভাবে যানজট মেটানো যায় তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy