কালিম্পংয়ে গরমের চোটে হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাখা লাগানোর আর্জি পর্যটকদের। প্রতীকী চিত্র।
গরম লাগলে ঠান্ডা জায়গায় বেড়াতে যাওয়াই দস্তুর। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে এ রাজ্যের কালিম্পং এবং সিকিমের গ্যাংটকে যাঁরা বেড়াতে গিয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। অনেক পর্যটক সেখানে ঠান্ডা না পেয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাখা লাগানোর আর্জি জানাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার গ্যাংটকে দু’দিনের জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে, যা ‘বিরল’ বলেই দাবি আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকদের। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জায়গায় জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। ভূগোলের বিশেষজ্ঞদের আবার দাবি, রাজস্থানের ঘটনার পিছনে রয়েছে স্থানীয় আবহাওয়ার প্রভাব।
চলতি বছরেই যেন আবহাওয়ার এই তীব্রতা বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। মে মাসের মাঝ বরাবর পর্যন্ত সিকিমে বিভিন্ন জায়গায় তুষারপাত হয়েছিল। কিন্তু তার পরে সিকিমে বেড়াতে এসে হতাশ হচ্ছেন কোনও কোনও পর্যটক। গ্যাংটকে গত দু’দিনে তাপমাত্রা বেড়েছে। রোদের তাপ মারাত্মক। বুধবার গ্যাংটক সংলগ্ন তাদং এলাকার তাপমাত্রা ৩১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। হোটেলগুলিতে ফ্রিজ থাকলেও, ৯০ শতাংশ হোটেলে পাখা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) প্রয়োজনই হয় না। কিন্তু গরম বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছে হাঁসফাঁস।
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর থেকে উত্তর সিকিমের লাচুং বেড়াতে এসেছেন শ্রীমন্ত বাগ। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তাপমাত্রা এতটা বেড়ে গিয়েছিল গরমে কষ্ট হচ্ছিল। ব্যালকনিতে বসে কিছুটা সময় কাটালাম।’’ তবে তাপমাত্রা খুব বেড়ে গেলেও গরমের অনুভূতি খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অন্য পর্যটকেরা। ঝাড়খণ্ডের পিন্টু কুমার সিংহল বলেন, ‘‘রাতে গায়ে চাপা নিয়েই ঘুমোতে হয়েছে।’’ পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘সিকিম হসপিটালিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি নারায়ণ শর্মা বলেন, ‘‘দুই তারা শ্রেণির নীচে যে হোটেলগুলি রয়েছে, সেগুলিতে গরম পড়ায় একটু বেশি সমস্যা হয়েছে। সেগুলিতে অন্তত পক্ষে পাখা লাগানোর অনুরোধ করছেন পর্যটকেরা।’’
রাজস্থানের জয়সলমেরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মঙ্গলবার মাত্র ২৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। যোধপুরে সে দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে কালিম্পঙের তাপমাত্রা ওই দিন ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার এর আগে দেখা গিয়েছে, কালিম্পঙের তুলনায় শীতল দিন কাটিয়েছে কোচবিহার। জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রেও বুধবার তাপমাত্রা হয়ে যায় ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মার্চ থেকে মে মাসের ব্যবধানে গত দেড় দশকে যা দেখা যায়নি বলে দাবি আবহাওয়া দফতরের। দুই দিনাজপুর এবং মালদহের জন্য আগামী ৭ জুন পর্যন্ত তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।
এ রকম পরিস্থিতির জন্য অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত করছেন আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁদের দাবি, হঠাৎ করে কোনও একটা এলাকায় চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে ভারসাম্যহীনতার কারণেই। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘আমার চাকরি জীবনে সিকিমে কখনও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হবে বলে ভাবিনি। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে, বিভিন্ন জায়গায় স্বাভাবিক আবহাওয়ার ভারসাম্য যে নষ্ট হয়ে চলেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।’’
যদিও ভূগোলের অধ্যাপকেরা দাবি করছেন, কালিম্পঙের মতো জায়গায় ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলেও, যোধপুর বা জয়সলমেরের মতো জায়গায় কালিম্পঙের থেকে তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক সুবীর সরকার বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের উপরে যেমন বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত গত কয়েক দিন থেকে সক্রিয় রয়েছে, তেমনই জয়সলমের বা যোধপুরে বৃষ্টি হয়েছে কি না, সেখানে আবহাওয়া মেঘলা ছিল কি না, সেগুলো ভাল করে খতিয়ে দেখা দরকার।’’ তাঁর দাবি, কোনও একটি জায়গার তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বা হঠাৎ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় আবহাওয়া ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে রাজস্থান এলাকায় ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। তার ফলে, রাজস্থানের কয়েকটি শহরে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বেড়েছে। মরুভূমির মতো জায়গায় তিন মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। সেটাও এক রকমের অস্বাভাবিকতার লক্ষণ বলে দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy