প্রতীকী ছবি
তাঁর পায়ের তলায় সর্ষে, হাতের মুঠোয় যেন অর্ধেক দুনিয়া।
দার্জিলিঙের কর্মা লামাকে এমনটাই বলে থাকেন পাহাড়, সমতলের মানুষ। বলবেন না-ই বা কেন? গত ২০ বছর ধরে তিনি চষে ফেলেছেন উত্তরবঙ্গের জঙ্গল, পাহাড়ের আনাচকানাচ, মায় নেপাল, ভুটান, সিকিমও। গাইডের কাজ করেন তিনি। পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখান নানা চেনা-অচেনা জায়গা। শৈলশহরের জাকির হোসেন রোডে ছোট্ট বাড়ি। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সংসার। গত দু’মাসে কর্মার এই সাধের দুনিয়া ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করেন। সেখান থেকে গত দু’মাসের বেতনবাবদ কিছু টাকা পাওয়ায় সংসার চলছে। কর্মার কথায়, ‘‘সে-ও তো বেসরকারি স্কুল। ক’দিন দেবে জানি না। হাতের জমানো টাকাও খরচ হচ্ছে। করোনা তো আমাকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। সরকার না দেখলে কী করব জানি না!’’
কর্মা একা নন, এর মধ্যে পাহাড়ের ৭০ জন গাইড সরকার, জিটিএ-র কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। তাঁদের কাছাকাছি রয়েছেন সুনীল সাহার মতো মানুষও। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বাসিন্দা সুনীল পেশায় ‘লাক্সারি টুরিস্ট’ গাড়ি চালান সুনীল। ২৩ বছর ধর পাহাড়, সমতল এক করে ফেলেছেন। এখনও গর্ব করে বলেন, ২০১১ সালে সিকিমে ভূমিকম্পের পরে গ্যাংটক যাওয়ার পথে নিজের গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটির দেখা দেওয়ায় তাঁর গাড়িতে চড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সুনীলবাবু বলেন, ‘‘গত দু’মাস ধরে জীবনের কঠিনতম সময় কাটাচ্ছি।’’
সুনীল বলেন, ‘‘ঘর ভাড়ার টাকা, ছেলের পড়াশুনো, সংসার খরচ— আর পারছি না। টাকা চাইলে মালিক দিচ্ছেন। কখনও ৫০০, কখনও হাজার। কিন্তু ওঁরও তো ব্যবসা নেই। আর কত দিনই বা দেবেন! ২১ মার্চ শেষবার দার্জিলিং থেকে ফিরেছিলাম। আবার কবে পর্যটক নিয়ে যেতে পারব, জানি না।’’ এখন আনাজ বিক্রি করবেন ভাবছেন। বা অন্য ব্যবসা। কিন্তু পুঁজি কোথায়? বললেন, ‘‘দিল্লি সরকার তো নথিপত্র দেখে চালকদের ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে শুনলাম। ’’
এই হাল হোটেল কর্মী, বেসরকারি পর্যটন সংস্থার কর্মীদের অধিকাংশের। এই ছবি যেমন পাহাড়ে, তেমনই ডুয়ার্স, গৌড়বঙ্গ— সর্বত্র। মালদহ থেকে মাঝেমধ্যে গৌড় বা আদিনা দেখাতে নিয়ে যান যাঁরা বা রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাসের সঙ্গে জড়িত লোকজন, সকলের ক্ষেত্রেই এক ছবি। কেউ জানেন না, এর পর কী হবে?
উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমে হোটেল রয়েছে, এমন একটি সংস্থায় কাজ করেন দেবজ্যোতি গুহঠাকুরতা। দু’মাস ধরে বন্ধ হয়ে থাকা একটি হোটেলের ম্যানেজারও তিনি। আরও ২৫ জন কর্মীও আছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মালিক বেতন তো দিচ্ছেন। সংস্থার সব হোটেল বন্ধ, ব্যবসা নেই। তাই আর কত দিন বেতন পাব, জানি না!’’
কেন্দ্রীয় সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা কি কিছু কাজে লাগবে? এত গভীরে ঢুকে ভাবতে পারেন না কর্মীদের সকলে। তাঁরা বরং তাকিয়ে আছেন, রাজ্য সরকার যদি কিছু সুরাহা দেয়। সম্প্রতি পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শিলিগুড়িতে বৈঠক ডেকেছিলেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। কিছু মানুষকে ১০০ দিনের কাজ, কাউকে কাউকে বিকল্প জীবিকার কথাও বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রের কথা বলতে পারব না। তবে এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy