সিকিমের পথে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে কালিঝোরায় ধস। — বিশ্বরূপ বসাক
টানা বৃষ্টিতে দিশাহারা উত্তরের পর্যটন। কেউ এনজেপি বা বাগ়ডোগরা থেকে নির্দিষ্ট হোটেল, রিসর্ট বা হোম স্টে-তে পৌঁছতে পারেননি। যাঁরা পৌঁছেছেন, তাঁরা আটকে বসে আছেন ঘরে। কোথাও রাস্তা বন্ধ ধসের জন্য, কোথাও এতটাই বিপজ্জনক যে খুব ধীরে গাড়ি চলছে। এর মধ্যে শিরে সংক্রান্তি আগামী অন্তত ২৪ ঘণ্টা ভারী ও অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস। এমন চললে দার্জিলিং পাহাড় এবং ডুয়ার্সের একাধিক গ্রাম, জনপদ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর বিপদ বাড়বে সিকিমেরও।
দুর্ভোগে সিকিম
সিকিমের লাইফলাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক গত বুধবার থেকেই কয়েক বার বন্ধ হয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পঙের রাস্তাও বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবারও বেশ কয়েক বার এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ দিন সকালে ধস নামে কালিঝোরার রাস্তায়। সকাল ৯টা নাগাদ বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। ঘণ্টা দেড়েক পরে ধস সরিয়ে যান চলাচল শুরু হলেও দুপুর দু’টো নাগাদ রম্বি এলাকায় জাতীয় সড়কের একটি অংশ বসে যায়। বিরিকধারা এলাকায় রাস্তার কিছু অংশে ফাটল দেখা যায়। ফের বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। তবে মেরামতির পরে রাস্তা খোলে। ছোট মাঝারি আরও বেশ কিছু ধসের কারণে মেল্লি, ২৯ মাইল এলাকাতেও দু’দফায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। যার জেরে দিনভর শিলিগুড়ির সঙ্গে সিকিমের যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়েছে। দুভোর্গে পড়তে হয়েছে পর্যটক এবং বাসিন্দাদেরও।
বৃষ্টি-ধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিকিমের সব এলাকাই। তবে প্রশাসনের দেওয়া রিপোর্টে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ সিকিম। জেলার ৭টি প্রধান রাস্তাই ধসে বিপর্যস্ত। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ৫টি পাহাড়ি গ্রাম। পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য নামচি, জোরথাং, রংপোর রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বন্ধ পেলিঙের যোগাযোগ। মেল্লি থেকে পেলিং যাওয়ার রাস্তা ধসে বিপর্যস্ত। ঘুরপথে নামচি হয়ে পেলিং যাতায়াত করা ছাড়া উপায় নেই। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যস্ত বৃষ্টি চলেছে সিকিমে। বড় ধস নামলে পুরো রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হতে পারে। তার জেরে প্রশসানের তরফে সর্তক করা হয়েছে সেনা বাহিনীকেও।
সাফারি আছে, পর্যটক নেই
বৃষ্টির যা তেজ, তাতে চিলাপাতা, মেন্দাবাড়ি, জয়ন্তী, রাজাভাতখাওয়ার জঙ্গলপথে সাফারিতে এলেন না কেউ। চিলাপাতার জঙ্গলে ৬টি জিপের সাফারির অনুমতি রয়েছে। এ দিন একটিতেও সাফারি হয়নি। জয়ন্তী ও রাজাভাতখাওয়ার একই অবস্থা। সকাল থেকে কখনও ইলশেগুড়ি কখনও বা মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। চিলাপাতার রেঞ্জার পুলকেশ গোস্বামী বলেন, ‘‘বৃষ্টির জন্য পর্যটকরা তো ঘরে বসে কাটালেন।’’ রাজাভাতখাওয়ার সাফারি গাড়ির চালক নীতু ভট্টাচার্য হতাশ— ‘‘সমানে বৃষ্টি চলছে। কে আর বের হবে?’’ টানা বৃষ্টিতে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে গাড়ি সাফারি চালু থাকলেও লোকজন খুবই কম হচ্ছে। পার্কের অধিকর্তা অরুণ মুখোপাধ্যায় জানান, দশমী থেকে বৃষ্টিতে সাফারির হাল খুবই খারাপ।
বুকিং বাতিল
ডুয়ার্সে এসে প্রাকৃতিক দুযোর্গের মুখে পড়ার আশঙ্কায় টপাটপ বুকিং বাতিল হচ্ছে। লাটাগুড়ি-মূর্তির একাধিক রিসর্টের আগাম বুকিং বাতিল হয়েছে। রিসর্ট মালিকদের সংগঠন গরুমারা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় জানালেন এ কথা। উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুর থেকে গত মঙ্গলবার তিনটি পরিবার একত্রে ডুয়ার্স ভ্রমণে এসেছিল। তাদেরই এক জন, রিঙ্কি নাথ বলে গেলেন, ‘‘ক্যালেন্ডার দেখে এক বছর ধরে পরিকল্পনা করে এসেছিলাম। এসে দেখলাম এখানে তো এখনও বর্ষা। ঠিকমতো একখানা ছবিও তুলতে পারলাম না।’’ যাঁরা এসেছেন, তাঁরা রিসর্ট ছেড়ে বের হতে পারছেন না।
তাই জমছে না মালবাজারের একটি জনপ্রিয় ভাতের হোটেলও। হোটেল মালিক অমিতাভ ঘোষ বলেন, ‘‘খাবে কে? পর্যটকদের তো দেখাই নেই।’’ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাস্তার বেহাল দশা। চালসা থেকে কুমাই যাওয়ার রাস্তায় অন্তত দশটি ফাটল তৈরি হয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে লাভা যাওয়ার রাস্তা খোলা থাকলেও, লোলেগাঁওয়ের পথে তৈরি হয়েছে ‘রেনকাট’। বৃষ্টি চলতে থাকলে রাস্তার একদিক ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। গজলডোবার জঙ্গলপথের পিচের রাস্তা ভেঙে কয়েক ইঞ্চি পুরু কাদার স্তর। বড় গাড়ির চাকা পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উত্তরবঙ্গের ট্যুর অপারেটরদের অন্যতম সংগঠন এতোয়ার কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘আশা করব রাস্তাগুলির দ্রুত সংস্কার হবে। না হলে পর্যটকদের প্রতি পদে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’’ পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছেন, ডুয়ার্সের রাস্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
উড়ানও বাতিল
এ দিন বৃহস্পতিবার বাগডোগরা থেকে কলকাতা, দিল্লি-সহ ১৫টি গন্তব্যে উড়ান ছিল। তার মধ্যে সাতটি বিমান বাতিল হয়েছে। বিমানবন্দরের তরফে জানানো হয়েছে, নাগাড়ে বৃষ্টি বিমানের ওঠা-নামায় সমস্যা তৈরি করে। সেই সঙ্গে বেলা বাড়ার পরে দৃশ্যমানতাও কমতে থাকে। বাগডোগরায় ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম বা আইএলএস এখনও না হওয়ায় এই অবস্থায় বিমান ওঠানামা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ দিন স্পাইসজেট এবং ইন্ডিগো-র ২টি এবং গো-এয়ার, ভিস্তারা, জেট এয়ারের একটি করে বিমান বাতিল হয়েছে। দিল্লি থেকে আসা ইন্ডিগোর বিমান আলো কম থাকায় বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামতেই পারেনি। বাতিল হয়েছে কলকাতা এবং দিল্লি থেকে আসা বাকি তিন জোড়া বিমানও। বিমানবন্দরের অধিকর্তা রাকেশ সহায় বলেন, ‘‘সব বিমানসংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে। যাত্রীরা যাতে দুর্ভোগে না পড়েন, তার দিকে নজর রাখা হয়। বিকল্প টিকিট পেতে সাহায্য করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy