Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Cooch Behar

‘মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছেন, ভাল থাকিস’

বিবার বিকেলে কোচবিহারের হাড়িভাঙায় কৃষক সভার নেতা আফজাল হোসেনের (৭২) স্মরণসভা হয়। সিপিএমের পক্ষ থেকেই ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল।

বাম নেতার স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন শঙ্কর দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র

বাম নেতার স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন শঙ্কর দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩৩
Share: Save:

সিপিএম নেতার স্মরণসভায় হাজির হলেন তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। জানালেন, ব্যক্তিগত ভাবে সিপিএমকে পছন্দ না করলেও, সে দলের অনেক মানুষ সমাজকে অনেক কিছু দিয়েছেন। এমনই এক জন বাম নেতা জন আফজাল হোসেন। প্রয়াত বাম কৃষক নেতার সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথাও স্মরণ করলেন হাড়িভাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শঙ্কর দেবনাথ। কোচবিহারের হাড়িভাঙায় রাজনীতির রং পেরিয়ে সৌজন্যের এমনই ছবি দেখা গেল।

রবিবার বিকেলে কোচবিহারের হাড়িভাঙায় কৃষক সভার নেতা আফজাল হোসেনের (৭২) স্মরণসভা হয়। সিপিএমের পক্ষ থেকেই ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়। সে সভাতেই হাজির হয়েছিলেন হাড়িভাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতেরতৃণমূল প্রধান শঙ্কর দেবনাথ। শঙ্করের কথায়, ‘‘এখানে রাজনীতি বড় বিষয় নয়। আফজল হোসেন আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে খুবই ভালবাসতেন। তাঁর সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। তাই আমন্ত্রণ পেয়ে স্মরণসভায় যোগ দিয়েছি।’’ সিপিএম নেতা নীহাররঞ্জন দাসের কথায়, ‘‘আফজাল হোসেন দলের নানা দায়িত্বে ছিলেন। সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। তাঁর স্মরণসভায় সবাই যোগ দেবেন, এটাইস্বাভাবিক। তৃণমূলের প্রধানও যোগ দিয়েছিলেন।’’

এই হাড়িভাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতে সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের টিকিটে ১৬ জন সদস্য জয়ী হন। বাকি তিন জন নির্দল জয়ী হন। পরে, তাঁরাও রাজ্যের শাসক দলে যোগদান করেন। ২০১৩ সালের আগে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে বামেরা ক্ষমতায় ছিল। তার পর থেকে তৃণমূল ক্ষমতায়। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ২০১৩ সালের পর থেকে বামেরা ওই এলাকায় দুর্বল হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে বামেদের সংগঠন কার্যত পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। শাসক-বিরোধী কোনও আন্দোলন তেমন ভাবে আর গড়ে তুলতে পারেনি বামেরা। বামেদের অবশিষ্ট নেতা-কর্মীরাও কার্যত ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালের পরে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে শক্তিশালী হয়ে ওঠে বিজেপি। তাদের সঙ্গেই শাসকের মূল বিরোধ তৈরি হয়। এই অবস্থায় গত কিছু দিন ধরে ফের সংগঠনের শক্তি বাড়াতে দলীয় কার্যকলাপ বাড়িয়ে দেয় বামেরা। তাতেও অবশ্য নতুন করে বামেদের সঙ্গে শাসকের বিরোধ সে ভাবে বাড়েনি।

আফজাল হোসেন সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি কৃষকসভার নেতাও ছিলেন। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, আফজাল অনেক সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিরোধীদের অনেকের সঙ্গে আফজালের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল ছিল। সে দিক চিন্তা করে বামেরা এলাকার সবাইকেই স্মরণসভায় থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। সে ডাকেই সাড়া দেন শঙ্কর। শঙ্কর নিজেও বলেছেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে সিপিএমকে পছন্দ করি না। কিন্তু সিপিএমের কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা সমাজকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে মানুষ অনেক কিছু শিখেছেন। আফজল হোসেন তাঁদের মধ্যে এক জন। তিনি যখন শয্যাশায়ী, তখন আমি গিয়েছিলাম। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছেন, ‘ভাল থাকিস’। এ সব কথা এখন মনে পড়ছে।’’

সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, ‘‘আফজল হোসেন দীর্ঘদিন সিপিএম করেছেন। তিনি নানা সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সবার সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক ছিল। তাই তাঁর স্মরণসভায় রাজনীতি না দেখে, আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, ‘‘স্মরণসভায় যে কেউ যেতেই পারেন। তা নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। কিন্তু এমনিতে তৃণমুল ও সিপিএম বুঝে গিয়েছে, বিজেপিকে আটকানো সম্ভব নয়। তাই অনেক জায়গায় তাদের এক সঙ্গেদেখা যাচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar CPIM TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy