Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
21 July TMC Rally

মমতার বার্তা, ঘরে পুরনো সাইকেলের খোঁজ নেতাদের

দলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশের বক্তব্য, প্রথম যখন তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসে, তখন শাসক দলের নেতারা হয় সাইকেলে, না হলে হেঁটেই জনসংযোগ করতেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩৩
Share: Save:

‘‘পুরনো সাইকেলটা কি ঠিক আছে?’’ দলনেত্রীর নির্দেশের পরেই এক নেতা নিজের বাড়িতে ফোন করে তড়িঘড়ি গুদাম ঘর খুলে পুরনো সাইকেলের খোঁজ নিতে বলেন বাড়ির লোকেদের। জেলার এক তরুণ নেতা প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, কোচবিহারে ফিরেই তিনি একটি সাইকেল কিনবেন। এক প্রবীণ নেতা অবশ্য আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘এই বয়সে কি আর সাইকেল চালাতে পারব! যতটা সম্ভব হেঁটে ঘুরব। সময় করে দিদিকে সেই বার্তা দেব।’’ রবিবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বৃষ্টির জল পড়ল। এক বার স্নান করব, ধুয়ে যাবে। কিন্তু মনে এক বার নোংরা লাগলে, সেটা লেগেই থাকবে।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “গাড়িতে ঘোরার চেয়েও, পায়ে হেঁটে ঘোরা ভাল। বড় বড় গাড়ির থেকে সাইকেলে, স্কুটারে ঘোরা ভাল।” এখানেই থেমে না থেকে তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, “তৃণমূল কংগ্রেস সেবার মঞ্চ। আমি বিত্তবান চাই না, বিবেকবান মানুষকে চাই।”

দিদির ওই বার্তার পরেই নেতাদের ‘দৌড়ঝাঁপ’ বেড়ে যায়। ব্লক নেতাদের কয়েক জনের কাছে নির্দেশ পৌঁছয়— ‘‘নিদেনপক্ষে মোটরবাইক নিয়ে গ্রামে ঘোরাঘুরি করতে হবে।’’

কেন দিদির এমন বার্তা?

দলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশের বক্তব্য, প্রথম যখন তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসে, তখন শাসক দলের নেতারা হয় সাইকেলে, না হলে হেঁটেই জনসংযোগ করতেন। কেউ-কেউ মোটরবাইক ব্যবহার করতেন। ১৩ বছর পরে তৃণমূল নেতাদের ঘরে ঘরে দামী গাড়ি। এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘এখন তো কোন নেতা, কোন গাড়িতে চড়েন করেন তা মনে রাখি। গ্রামে কী গাড়ি ঢুকেছে দেখলেই বুঝে যাই কোন নেতা এসেছেন।’’

দলের কয়েক জনের বক্তব্য, এখন কয়েক জন নেতার বাড়িও সকলের জন্য ‘অবারিত’ নয়। কয়েক তলা বাড়ির সামনের ভারী লোহার গেট বন্ধ থাকে। বাইরে থেকে হাঁকডাক করলেও চট করে ভিতরে যাওয়া যায় না। কারও কারও বাড়ির ফটকের সামনে আবার নিরাপত্তা রক্ষী দাঁড়িয়ে থাকেন। নামপ্রকাশে এক তৃণমূল কর্মী বলেন, ‘‘এ সবে যে মাটির সঙ্গে নেতাদের দূরত্ব কমছে, তা দিদি বুঝতে পেরেছেন।’’ ‘দূরত্বের’ বিষয়টি স্বীকার করে নেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। তিনি বলেন, ‘‘গাড়িতে ঘুরলে দূরত্ব তো বাড়বেই। সেটাই হয়েছে। অনেকে আবার শুধু মোবাইলে যোগাযোগ রাখেন কর্মীদের সঙ্গে। তাতেও দূরত্ব বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী এই দূরত্বই কমাতে বলেছেন।’’ প্রাক্তন মন্ত্রী তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘দিদি যথাযথ নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তা মেনে চলব। আমি তো এক সময় সাইকেল, স্কুটার নিয়েই প্রচার করেছি। এখন বয়স হয়েছে, তার পরেও সেই চেষ্টা করব।’’

বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসুর টিপ্পনী, ‘‘তৃণমূলের ছোট থেকে বড়—সব নেতারাই বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। সে সব ছেড়ে সাইকেল চালাতে কখনও পারবেন না। সব লোকদেখানো।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE