আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় অভিযুক্ত সৈকত চট্টোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
দম্পতিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় অভিযুক্ত সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিনভর নানা ঘটনাক্রমে ‘দূরত্ব’ দেখা গেল তৃণমূলের। বৃহস্পতিবার জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত নিজেই সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, শিলিগুড়ির মেয়র তথা জলপাইগুড়ি জেলায় সংগঠন দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত গৌতম দেব তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। যদিও সৈকতের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব শুক্রবার বলেন, ‘‘এ সব নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। কোনও দিনই কোনও কিছু ভাল ভাবে না জেনে মন্তব্য করিনি। এখনও করব না। এ সব আমার জানার নয়,জানিও না।’’
এ দিন বিকেলে জেলা সংখ্যালঘু সেলের বৈঠকেও ডাক পাননি সৈকত। বৈঠক ডেকেছিলেন জেলা সভাপতি। তাতে ব্লক সভাপতি থেকে জেলা নেতাদের প্রায় সবাইকে ডাকা হলেও বাদ পড়েছেন সৈকত। সভাপতির অবশ্য দাবি, কোনও শাখা সংগঠনের প্রধানদেরই ডাকা হয়নি। ঘটনাচক্রে, সৈকত জেলার কোর কমিটির সদস্য। জেলা তৃণমূল সভাপতি এ দিন তৃণমূল অফিসে বসে সৈকতের উদ্দেশে দলের ‘গঠনতন্ত্র’ মেনে চলার বার্তাও দিয়েছেন। তৃণমূল জেলা সভাপতির অবস্থানকে মেনে চলতে হবে বলে জানিয়ে এই বিতর্কে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন সভাপতি তথা দলের অন্যতম জেলা নেতা চন্দন ভৌমিকও। এর পাশাপাশি, জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদ্য মনোনীত সভাপতি তথা সৈকতেরই ‘অনুগামী’ বলে পরিচিত গৌরব ঘোষের এ দিনের মন্তব্য, ‘‘এটা আইনি বিষয়। বিচারাধীন বিষয়। সত্য সামনে আসবে। তৃণমূলকে কেউ কালিমালিপ্ত করতে পারবে না।’’ গৌরবের মুখেও সরাসরি সৈকতের পাশে থাকার মন্তব্য না শোনা যাওয়ায় দলে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে।
বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ের ভাই তথা শিশুকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্য এবং তাঁর স্ত্রী তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন উপ-পুরপিতা অর্পণা ভট্টাচার্যের ‘আত্মহত্যা’ এবং ‘সুইসাইড নোট’-এ সৈকতদের বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সৈকত বিষয়টিকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বললেও জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ প্রথম দিন থেকেই বিষযটিকে ‘ব্যক্তিগত’ বলে দাবি করেন। গত বৃহস্পতিবার সৈকত দাবি করেছিলেন, জেলা সভাপতির মন্তব্যে তিনি প্রতিক্রিয়া দেবেন না এবং মুখ্যমন্ত্রী বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে কিছু বললে তাকেই দলের অবস্থান বলে ভাববেন। সে মন্তব্যকে জেলা সভাপতির প্রতি সৈকতের অনাস্থা প্রকাশ মনে করেই তৃণমূলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়। এ দিন জেলা তৃণমূল অফিসে বসে জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, ‘‘আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। সৈকতও সৈনিক, আমরাও সৈনিক। দল একটি গঠনতন্ত্র মেনে পরিচালিত হয়। সেই গঠনতন্ত্র সবাই মেনে চলি।’’ এই মন্তব্যকে সৈকতের প্রতি জেলা সভাপতির বার্তা বলেও মনে করা হচ্ছে। জেলা সভাপতির পাশে দাঁড়িয়ে জেলা তৃণমূলের অন্যতম নেতা চন্দন ভৌমিকের বক্তব্য, ‘‘জেলা সভাপতি যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মত নয়। তিনি দলের বক্তব্যই বলার চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়। যতক্ষণ না তদন্ত একটি পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দলের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গেই থাকতে হবে।’’
এ দিন জেলা কংগ্রেসের তরফে দম্পতির আত্মহত্যায় প্ররোচনায় দেওয়ার অভিযুক্তদের গ্রেফতারি দাবিতে কোতোয়ালি থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়। অন্য দিকে, জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি করেছেন।
এই সব নানা মন্তব্য এবং ঘটনা-পরম্পরা নিয়ে সৈকত এ দিনও বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ। তদন্তে সব সত্য সামনে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy