Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বাঁধন ভাঙার বার্তা

জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে, লিঙ্গবৈষম্য ভাঙার বার্তা এ ভাবেই দিল বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা সহরাবাড়ি গ্রামের একাদশ শ্রেণির রোহিলা।

অর্চনা: শিক্ষক বিনয় বিশ্বাসের সঙ্গে বাণীবন্দনা রোহিলার। নিজস্ব চিত্র

অর্চনা: শিক্ষক বিনয় বিশ্বাসের সঙ্গে বাণীবন্দনা রোহিলার। নিজস্ব চিত্র

জয়ন্ত সেন 
দাল্লা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:০১
Share: Save:

কুশিতে রাখা গঙ্গাজল, হরিতকী, ফুল, তিল ও কুশ। পাশেই সাজানো নৈবেদ্য। জ্বলছে পঞ্চপ্রদীপ। ঘরে ভরে ধুনুচির ধোঁয়া।

বাগ্‌দেবীর প্রতিমার সামনে রঙিন আসনে বসে কুশি থেকে তিন বার জল কুশ দিয়ে ছিটিয়ে মন্ত্রোচ্চারণে পেশাদার পুরোহিতের মতোই পুজো শুরু করল মালদহের দাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দিরের আদিবাসী ছাত্রী রোহিলা হেমব্রম।

জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে, লিঙ্গবৈষম্য ভাঙার বার্তা এ ভাবেই দিল বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা সহরাবাড়ি গ্রামের একাদশ শ্রেণির রোহিলা। তাকে পুজোয় সাহায্য করলেন স্কুলের এক অ-ব্রাহ্মণ শিক্ষক বিনয় বিশ্বাস। পুজো চলাকালীন পাশে বসেছিলেন প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ীও।

চক্ষুদান, প্রতিমার প্রাণপ্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে পুজোর সমস্ত নিয়ম-আচার রীতি মেনেই পালন করল রোহিলা। সামনে রাখা মাইক্রোফোনে মন্ত্রোচ্চারণও করল। করল যজ্ঞও। তারই পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রে শামিল হল কয়েকশো ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকেরাও। এমন এক বেনজির কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হতে এ দিন পুজো চলাকালীন স্কুলে প্রচুর অভিভাবকও ভিড় জমান।

মালদহের হবিবপুর ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রাম দাল্লা। মালদহ জেলা সদর থেকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দূরের ওই এলাকার দাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দির জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে ও লিঙ্গবৈষম্য ভুলে অ-ব্রাহ্মণ শিক্ষক-শিক্ষিকার হাতে সরস্বতী পুজোর ভার অনেক আগেই তুলে দিয়েছিল। স্কুল সূত্রে খবর, এ বার স্কুলে সরস্বতী পুজো জন্য ডাকা সভায় কয়েকশো ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সামনে বসে স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রোহিলা হেমব্রমের হাতে পুজোর ভার তুলে দেন প্রধান শিক্ষক। স্কুলের মাঠে ওই সভায় প্রধান শিক্ষকের কথাবার্তার একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়। শুধু তাই নয়, পুজোয় রোহিলাকে স্কুলের এক অ-ব্রাহ্মণ শিক্ষক সহযোগিতা করবেন বলেও সে দিন জানিয়েছিলেন তিনি।

এদিন দুপুরে ছিল সেই সন্ধিক্ষণ। বেলা ১টা থেকে পুজো শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেলা ১১টাতেই লালপেড়ে হলুদ শাড়ি পরে স্কুলে চলে এসেছিল রোহিলা। বাড়ি থেকে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে সে। মণ্ডপের কাছে রাখা একটি বেঞ্চে বসে পুজোপাঠ প্রক্রিয়ার বইয়ে চোখ বোলানো শুরু করে। একটু পরেই আসেন শিক্ষক বিনয়। তিনিও রোহিলার পাশে বসে পুজোপাঠের বইয়ে চোখ রাখেন। স্কুলেরই কয়েকজন ছাত্রী পুজোর সমস্ত জোগাড় করার পরে বেলা দেড়টা নাগাদ পুরোহিতের বেশে পুজো শুরু করে রোহিলা।

রীতিমতো পেশাদার পুরোহিতের মতোই সংস্কৃত শ্লোকে মন্ত্রোচ্চারণ করে সে। এক জন আদিবাসী ছাত্রীর হাতে সরস্বতী বন্দনা দেখতে স্কুলের হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীর পাশাপাশি বেশ কিছু অভিভাবকও ভিড় জমান।

রোহিলা বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক আমাকে পুজোপাঠের বই দেওয়ার পাশাপাশি সংস্কৃতে মন্ত্রোচ্চারণ শিখিয়েছেন। গত কয়েক দিন বাড়িতে লেখাপড়ার পাশাপাশি মন্ত্রোচ্চারণের চর্চা করেছি। নিয়ম মেনে সরস্বতী পুজো করতে পেরেছি। এটা আমার জীবনে পরম প্রাপ্তি।’’

প্রধান শিক্ষক জয়দেব বলেন, ‘‘আমরা চাই জাতি, ধর্ম, লিঙ্গবৈষম্য ভুলে আমাদের স্কুলের পুজো যেন মিলনমেলার রূপ নেয়। রোহিলাকে আদিবাসী সমাজের মেয়ে হিসেবে দেখিনি, সে আমাদের স্কুলের পরিবারের একজন সদস্যা। সেই হিসেবেই রোহিলা এ দিন বাগদেবীর পুজো করেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Saraswati Puja Society Caste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy